Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাধীনতা হরণের অধিকার আল্লাহ কাউকেই দেননি জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২১, ৪:০৬ পিএম

স্বাধীনতা আল্লাহ তায়ালার মহান নিয়ামত। জন্মলগ্ন থেকেই্ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে স্বাধীন করে বানিয়েছেন। মানুষের স্বাধীনতা হরণের অধিকার আল্লাহ তায়ালা কাউকেই দেননি। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। আসন্ন পবিত্র শবে বরাত সম্পর্কেও জুমার বয়ানে পেশ ইমামরা গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান আজ জুমার বয়ানে বলেন, জন্মলগ্ন থেকেই্ আল্লাহ তায়ালা মানুষকে স্বাধীন করে বানিয়েছেন। স্বাধীনতা মানুষের স্বভাবগত বিষয়। কোন ভাষা, দেশ, গোষ্ঠী বর্ণ কোন কিছুর মিছে অজুহাতে মানুষের স্বাধীনতা হরণের অধিকার আল্লাহ তায়ালা কাউকেই দেননি। তবে কেউ যদি ছলে-বলে কৌশলে কাউকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করতে চায় তাহলে ব্যক্তির দায়িত্ব হল এ শৃঙ্খল ভেদ করে স্বাধীনতার মুক্ত বাতাসে ডানা মেলে চলার দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করা। আল্লাহ তায়ালা এ পৃথিবীতে মানুষকে পাঠিয়েছেন একমাত্র তাঁর গোলামী করার জন্য, কোন মানুষের গোলাম হতে নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদিগকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদিগকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সহিত পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু জানেন, সব খবর রাখেন।’ (সূরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১৩, পারা: ২৬)। পেশ ইমাম বলেন, জুলুমের অবসানে জেগে উঠে বাংলার জনগণ, ছিনিয়ে আনল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। স্বাধীনতা আল্লাহ তায়ালার মহান নিয়ামত।

স্বাধীনতা ও বিজয়-পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কোরআন মজিদে আল্লাহ ঘোষণা ‎করেছেন: ‘আমি তাহাদিগকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা সালাত কায়েম ‎করবে, যাকাত আদায় করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজ নিষেধ ‎করবে; আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ার। (সূরা-২২ হজ, আয়াত: ‎৪১, পারা: ১৭)। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের স্বাধীনতাকে ‎কিয়ামত পর্যন্ত অক্ষুন্ন রাখুন । এবং যাদের ত্যাগ, কুরবানী ও জীবনের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা উত্তম বিনিময় দান করুন আমীন !

ঢাকা লালমাটিয়াস্থ বায়তুল হারাম মসজিদের খতিব মাওলানা কাজী আবু হুরায়রা আজ জুমার খুৎবা পূর্বে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, বিগত ১৪ শত বছর পর্যন্ত ইসলামের দুশমনদের দ্বারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাজারও ষড়যন্ত্রের উদাহরণ থাকলেও স¤প্রতি কোরআনের ২৬ টি আয়াত বাদ দেয়া অথবা এগুলির নির্দেশনা স্থগিত চেয়ে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে জনৈক মুরতাদের মামলা দায়ের এক নজির বিহীন ঘটনা। ওয়াসিম রেজভী নামের এই শিয়া নেতার পেছনে ইসলাম বিদ্ধেষী আন্তর্জাতিক চক্রের যে হাত রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। এ ঘটনায় বিশ্ব মুসলিমের কলিজায় আগুন জ্বলছে। এ ধরণের একটি উস্কানিমূলক, অনৈতিক ও অনভীপ্রেত রিট আবেদন খারিজ না করে শুনানির জন্যে ভারতীয় আদালত গ্রহণ করায় সারাবিশ্বের মুসলিম বিষ্মিত ও উৎকন্ঠিত। আমরা এর তীব্র নিন্দা এবং এ দূরভিসন্দিমূলক রিট আবেদন খারিজ করার আবেদন জানাচ্ছি।

দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম আজ জুমার খুৎবার পূর্বে বলেন, শাবান মাসে শবে বরাত অর্থাৎ মুক্তির রজনী। অনেকেই বলে থাকে ভাগ্য রজনী। মূলত শব্দটি ফার্সি শব অর্থ রাত্রি বরাত অর্থ মুক্তি, পরিত্রাণ, হাদিসে লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান উল্লেখ আছে। শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে বায়হাকী ও ইবনে মাজাহ শরীফ এ একটি হাদীসে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ পাক এই রাতে দুনিয়ার আসমানে এসে বান্দাদের লক্ষ করে বলেন তোমাদের মধ্যে কেউ পাপি আছো আমার কাছে মাফ চাইবে আমি তাকে মাফ করে দিবো। তোমাদের মধ্যে কেউ রিঁিজক চাওয়ার আছো, আমি তাকে রিজিক দান করবো। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ আছো, আমার কাছে রোগমুক্তি চাইবে আমি মুক্তি দিবো। এইভাবে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে মানুষকে ডেকে ডেকে চাইতে বলেন অর্থাৎ দোয়া করতে বলেন। খতিব বলেন, তিরমিজি শরীফের অন্য এক হাদীসে রাসুল (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা এই রাতে কালব গোত্রের বকরি যতগুলো আছে ওই বকরির পশম পরিমাণ লোকদেরকে ক্ষমা করে দেন। শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করো দিনে রোজা রাখো। এ রাতে রাসুল (সা.) জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে গিয়েছিলেন মৃত ব্যক্তি ও শহীদদের জন্য দোয়া করেছেন।

ভোলা সদর নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা এ কে এম মুশাররফ হুসাইন জুমার খুৎবার বয়ানে বলেন, বরকতময় শাবান মাস হলো রমজানের প্রস্তুতির মাস। মুসলিম উম্মাহ অপেক্ষায় থাকেন কখন রহমত, বরকত, নাজাতের পয়গাম নিয়ে নতুন চাঁদের আগমন ঘটবে। উম্মাহর জন্য রমজান মাস আগমনের প্রথম সুন্নাহ হলো চাঁদ দেখা। কেননা রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখো এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাঙ্গো। এরপর দ্বিতীয় সুন্নাহ হলো এশার ফরয এবং দুই রাকাত সুন্নাহর পরে সলাতুত তারাবীহ আদায় করা, এরপর তৃতীয় সুন্নাহ হলো সাহরী খাওয়া। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন তোমরা সাহরী খাও, কেননা সাহরীর মধ্যে বারাকাহ রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ফরয বিধান রমজানের রোজা পালন করার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাহ গুলোও সুন্দর ভাবে পালন করার তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন!

ঢাকা উত্তরা, সেক্টর-৩ মসজিদ আল মাগফিরাহ খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম আজ জুমার বয়ানে বলেন, শবে বরাত নিয়ে সমাজে আছে দুই রকম অসংগতি। এক শ্রেণির মানুষ এই রাতকে কেন্দ্র করে নানাবিধ রসম-রেওয়াজ, কুসংস্কার ও বিদ’আতী কাজ-কর্ম দ্বারা প্রচন্ড রকম বাড়াবাড়ি করে থাকে। আরেক শ্রেণির মানুষ শবে-বরাতের হাদীস জাল, জঈফ ও ভিত্তিহীন বলে অপপ্রচার করে থাকে। বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি কোনটিই শরীয়ত সম্মত নয়। বরং অনেক গুলো হাদীস দ্বারা শবে-বরাতের ফযিলত ও আমল সুপ্রমাণিত। আমরা আমাদের মধ্যপন্থি মহান পূর্বসূরীদের মতো হাদীসের প্রতি সর্বোচ্চ ও যথাযথ মর্যাদা প্রদানে বিশ্বাসী। নবী করীম (সা.) বলেছেন, যখন মধ্য শাবান (১৪ তারিখ দিবাগত রাত) হয়। তোমরা রাত্রে (নামাজে) দাঁড়াও আর দিনে রোজা রাখো, কেননা সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা প্রথম আসমানে অবতরণ করেন, আর বলেন, কেউ ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কী? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কেউ রিজিক অন্বেষণকারী আছো কী ? আমি তাকে রিজিক দিবো। কেউ বিপদগ্রস্ত আছ কী ? আমি তাকে বিপদ মুক্ত করবো। এভাবে সুবহে ছাদিক পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যাগ্রস্তকে আল্লাহ তায়ালা আহবান করতে থাকেন। (ইবনে মাযাহ)। খতিব বলে ন, শবে-বারাতে করণীয় হলো স্বাভাবিক নিয়মে স্বাধ্যানুযায়ী নফল নামায আদায় করা, কোরআন তিলাওয়াত করা, যিকির-আজকার করা, আল্লাহ তায়ালার কাছে কান্না-কাটি করে মোনাজাত করা ও ক্ষমা চাওয়া। কবর যিয়ারত করা , দিনের বেলায় রোযা রাখা। তবে এআমল গুলো সম্মেলিত নয় বরং ব্যক্তিগতভাবে আঞ্জাম দিতে হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তৌফিক দান করুন। আমীন!

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Jack Ali ২৬ মার্চ, ২০২১, ৪:৪৬ পিএম says : 0
    The traitor hijacked our liberation; May Allah wipe out them from our sacred Beloved Mother Land fore ever. Ameen.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেশ ইমাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ