গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
দক্ষিণখানের আইনুশবাগ (চাঁদনগর) এলাকায় ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদকে প্রকাশ্য গুলি করে হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় গ্রেফতারকৃত জাপানি হান্নানসহ ৮ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদের আদালত জাপানি হান্নানকে ৪ দিন, বাকি সাত আসামির বিরুদ্ধে ২ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অপরদিকে অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় জাপানি হান্নানের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন পুলিশ। শুনানি শেষে একই আদালতে বিচারক একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড পাওয়া অপর আসামিরা হলেন-মো. একরামুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম ইমরান, আল-আমিন প্রধান, জহুরুল ইসলাম রিপন, খোরশেদ আলম, মো. মোশাররফ হোসেন ও মো. নুরুন নবী। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মাহমুদুর রহমান এ তথ্য জানান।
ডিএমপি উত্তরা বিভাগের দক্ষিণখান জোনের এডিসি হাফিজুর রহমান রিয়েল বলেন, হত্যাকান্ডের ঘটনায় বুধবার দিনগত রাতে নিহত রশিদের ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে পৃথক আরও একটি মামলা দায়ের করেছে। বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে জাপানি হান্নান ও তার ৭ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হান্নানের আরও কয়েকজন সহযোগী পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। রিমান্ডে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের সব বিষয় পরিস্কার হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দক্ষিণখান এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ, জাপানি হান্নানের অত্যাচারে দক্ষিণখান এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। তিনি নিজের জোর খাটিয়ে অস্ত্রের ভয়ভীতি দেখিয়ে এতদিন মানুষের ওপর অত্যাচার করে এসছে। এবার মানুষ হত্যা করেছে। আমরা এর থেকে পরিত্রাণ চাই। রাজনৈতিকভাবে কোনো পরিচয় ও পদবী না থাকলেও সবখানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে চলতেন জাপানি হান্নান। প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদেরর ছবির সঙ্গে নিজের ছবিটি জুড়ে দিয়ে বাড়ির সামনে একটি সাইনবোর্ডে ঝুলিয়ে রেখেছেন। লাইসেন্স করা একটি শর্টগান ও একটি পিস্তল ও কয়েখজন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে দানবের মত ঘোরাঘুরি করতেন এলাকায়। পান থেকে চুন খসলেই সঙ্গে থাকা অস্ত্র বের করে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি দেখানো ছিলো জাপানি হান্নানের নিত্য দিনের কাজ। শুধু তাই নয়, এলাকায় চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদকের কারবারসহ নানা অপকর্মেই সরাসরি জড়িত রয়েছেন আমিনুল ইসলাম হান্নান ওরফে জাপানি হান্নান ওরফে সাইনবোর্ড হান্নান।
ওই সূত্র আরো জানান, অপকর্মের মাধ্যমে ধীরে ধীরে এলাকায় নিজের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তার করে জাপানি হান্নান। নিজ জেলা চাঁদপুরের সঙ্গে মিল রেখে দক্ষিণখানের আইনুসবাগ এলাকার নাম পরিবর্তন করে চাঁদনগর নামকরণ করেন তিনি। কেউ এই নাম না লিখলে বা ব্যবহার না করলে হুমকি-ধামকি দিতেন তিনি। আইনুসবাগ (চাঁদনগর) এলাকায় জমি কেনা, বাড়ি নির্মাণ, কিনবা বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানিরসহ দোকান নির্মাণ করতে চায় তবে সেখানেই চাঁদা দাবি করতেন জাপানি হান্নান। চাঁদা না দিলে তার সাঙ্গোপাঙ্গ দিয়ে বাধা দেয়াসহ মারধর ও অস্ত্র দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিতেন ওই হান্নান।
ভুক্তভোগী আব্দুর রশিদের চাচাতো ভাই মাহমুদুল হাসান সুজন বলেন, দক্ষিণখান আইনুসবাগ এলাকায় জাপানি হান্নানের বাড়ি থেকে তিন’শ গজ দূরে আমাদের জমিতে গত এক সপ্তাহ ধরে বাউন্ডারির কাজ চলছে। সেখানে বালু ফেলা হয়। এই বালু ফেলাকে কেন্দ্র করে জাপানি হান্নান ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা দিতে রাজি হইনি। এই কারণে আমাদের জায়গা থেকে বালু চুরি করে সরিয়ে নেয় জাপানি হান্নানসহ তার লোকজন। এই নিয়ে বুধবার সকালে আমার ভাই ও বোনদের মারধর করে হান্নান বাহিনী।
কেন মারধর করলো? এই বিষয়টি জানতে ও জিজ্ঞাসা করতেই আমার চাচা হাজী আব্দুস সাত্তার, চাচাতো ভাই আব্দুর রশিদ, সোহলে ও আমিসহ হান্নানের কাছে গিয়েছিলাম। বিষয়টি দক্ষিণখান থানার ওসিকে অবগত করা হয়েছিলো। সঙ্গে প্রশাসনের লোকও (পুলিশ) ছিলো। আমরা যখন হান্নানের বাড়ির সামনে যাই, তখন জাপানি হান্নান তার শর্টগান বের করে বাড়িরে গেটের ভেতর থেকে আমার চাচাতো ভাই সোহেল ও আব্দুর রশিদকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এতে সোহেল সরে গেলেও রশিদের মাথায় গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে রশিদ ভাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। আমরা ভাইকে ধরতে যাবো, এমন সময় হান্নান আরও ফায়ার (গুলি চালায়)। ঘটনাস্থলেই আমার চাচাতো ভাই আব্দুর রশিদ মারা যান। এরপর স্থানীয়রা ও আমরা হান্নানসহ তার বাহিনীকে ঘিরে ফেলি। যাতে পালাতে না পারে। পরে পুলিশ তাদের নিরস্ত্র করে গ্রেফতার করে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।