পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সনাতনী হিন্দু প্রতিষ্ঠান পাঁচলাইশের প্রবর্তক সংঘের অভ্যন্তরে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে গতকাল বুধবার ইসকনের পক্ষ থেকে লিখিত পাল্টা অভিযোগ করে বলা হয়েছে, প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক বাবু তিনকড়ি চক্রবর্তীর নেতৃত্বে ২০-২৫ জন বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে মন্দিরের প্রধান নিরাপত্তা অফিস ভাঙচুর এবং ২নং প্রবেশ পথের গেইট তুলে ফেলে। ইসকনের অভিযোগ ‘আমরা আশা করেছিলাম দেশ, জাতির বৃহত্তর স্বার্থে হামলাকারীরা অনুতপ্ত হয়ে দুঃখ প্রকাশ করবেন। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। তারা এরই মধ্যে উল্টো আদালতে মামলা করেছে। তাই ইসকন কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বাধ্য হয়।’
অন্যদিকে ইসকন কর্তৃপক্ষের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনকড়ি চক্রবর্তী বলেন, ‘কারা হামলা এবং তান্ডব চালিয়েছে সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ইসকনের লোকজন নিজেদের দোষ ঢাকতে এ ধরনের অপপ্রচার করছে। তারাই হামলা, ভাঙচুর করেছেন। এখন পাল্টা মামলা দিয়েছেন- এ যেন চুরি তো চুরি তার উপর সিনাজুরি।’
এ অবস্থায় দুই বিরোধীয় পক্ষই মামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রবর্তক সংঘের দাবি, গত ১৪ মার্চ ইসকনের কর্মীরা প্রবর্তক সংঘের কর্মীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এ হামলায় সংঘের আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তাসহ ১২ জন আহত হন। এ ঘটনায় ইসকনের বিরুদ্ধে গত ১৬ মার্চ মামলা দায়ের করে প্রবর্তক কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে ২১ মার্চ পাল্টা মামলা দায়ের করে ইসকন কর্তৃপক্ষ। ইসকনের মামলায় তিনকড়ি চক্রবর্তী ছাড়াও প্রবর্তক সংঘের কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার দে, সুমন সিংহ, সুকুমার মজুমদার, সুধীর নমসহ ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়। দৈনিক ইনকিলাবে ধারাবাহিকভাবে (২২-২৪ মার্চ) প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে গতকাল ইসকনের পক্ষ থেকে ঘটনার ব্যাপারে তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের প্রিন্সিপাল লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাধ্য হয়ে ইসকন কর্তৃপক্ষ প্রকৃত হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা (মামলা নং- সি আর ১৮১/২০২১) করেছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আধ্যাতিœক প্রতিষ্ঠান প্রবর্তক সংঘ তার গঠনতন্ত্রের মৌলিক নীতি ও উদ্দেশ্য সাধু সন্ন্যাসীদের দ্বারা সনাতন ধর্ম প্রচার ও প্রসারকে ধরে রাখার জন্য ২০০৩ সালে ইসকনের সাথে শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরটি দৈনন্দিন সেবাপূজা, উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব প্রদান করেন। পরবর্তীকালে বৃহৎ মন্দির নির্মাণ, সাধুনিবাস নির্মাণ, পাহাড় সংরক্ষণ ও ধর্মীয় প্রচারের জন্য অন্যান্য আনুষাঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণ ও ব্যবহারের জন্য মৌখিক ও লিখিত অনুমতি প্রদান করেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর যাবৎ প্রবর্তক সংঘের নেতৃবৃন্দ ইসকনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করেছেন এবং সভাপতিত্ব করেছেন। ইসকন ভক্তবৃন্দ সাধারণ সনাতনী সমাজের কাছ থেকে বহু কষ্ট করে অনুদান সংগ্রহ করে এবং প্রবর্তকের ভূমিতে তা খরচ করে সনাতন ধর্মের কল্যাণে একটি আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে।
অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় এই বৃহৎ মন্দিরটি উদ্বোধনের ঠিক ২ মাস আগে প্রবর্তক সংঘের কর্মকর্তাদের আচরণে আমরা ভিন্নতা লক্ষ্য করি। হঠাৎ করে তারা মন্দির দৈনন্দিন সেবা পূজা পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করতে শুরু করে এবং বিভিন্ন অযৌক্তিক প্রস্তাব উপস্থাপন করে। এ বিষয়গুলো নিয়ে বিগত ১২ মার্চ তাদের আলোচনার প্রস্তাব দিলে তারা আলোচনায় না বসে ১৪ মার্চ হামলা করে। হামলার সময় মন্দিরে অবস্থানকারী নিরীহ সাধু সন্ন্যাসীরা বাবু তিনকড়ি চক্রবর্তীকে ভাঙচুর না করার বিনীত অনুরোধ জানান। কিন্তু তিনি উল্টো সাধুদের বিভিন্ন অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেন এবং মন্দির ও সাধুনিবাস উচ্ছেদ করার হুমকি দেন।
তিনি বলেন, প্রবর্তক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী শ্রীযুক্ত মতিলাল রায় কর্তৃক সনাতন ধর্ম প্রচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত এ সংঘের সাথে ইসকনের মৌলিক উদ্দেশ্যের কোন পার্থক্য নেই। সংঘের নীতি-নিয়মের মধ্যে উল্লেখ রয়েছে সংঘের পরিচালনা কমিটি গঠিত হবে সাধু সন্ন্যাসী ও আজীবন সদস্যদের সমন্বয়ে। অথচ তারা সাধু সন্ন্যাসীদের সংঘ পরিচালনার বাইরে রেখেই একতরফাভাবে এ সংঘ পরিচালনা করে আসছেন। এর একটাই উদ্দেশ্য- সর্বত্যাগী সাধুদের পরিচালনার বাইরে রাখলে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন অধিকতর সহজ হবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রবর্তক সংঘ এ ভূমির অমর্যাদা করে হিন্দুদের স্বার্থ বিকিয়ে দিয়ে বহু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে এ ভূমির বিভিন্ন অংশের মালিকানা ছেড়ে দিয়েছে। আমাদের প্রশ্ন-বিগত ১৭ বছরে সনাতনীদের অর্থব্যয়ে ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে তারা সহযোগিতা করে আজকে কেন ইসকনকে উচ্ছেদ করতে চাচ্ছে? আমাদের আশঙ্কা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে কোটি কোটি টাকা মূল্যে হস্তান্তর করে দেয়া ভূমির মত এ মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন এলাকাও বরাদ্দ দিয়ে দিতে পারে। এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইসকন কর্তৃপক্ষ।
বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের নীতিকে উপেক্ষা করে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করায় ইসকনের সুনাম বিনষ্ট হয়েছে এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে উল্লেখ করে তিনি ভবিষ্যতে আরও সর্তকভাবে সংবাদ পরিবেশন করে সাংবাদিকদের উপর আস্থা ও বিশ্বাস যাতে অটুট থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
প্রবর্তকের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তী ইসকনের অভিযোগ ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বলেন, ইসকনের বিরুদ্ধে গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছি। তাদের মামলাও আইনগতভাবে মোকাবেলা করব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।