Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফায়ারিং স্কোয়াডে ১৪ জনের মৃত্যুদন্ড

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা ষড়যন্ত্র মামলার রায় রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার মাধ্যমেই এ ধরনের নৃশংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৫ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান গতকাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয় ১১ মার্চ। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ ১৪ আসামির সবার মৃত্যুদন্ড চেয়েছিল। পরে আদালত রায় ঘোষণার জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। সে অনুসারে গতকাল রায় ঘোষণা করা হলো। রায়ে ১৪ আসামির প্রত্যেকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ বা গুলি করে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার মাধ্যমেই এ ধরনের নৃশংস ও ন্যক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১৪ আসামি হলেন- মফিজুর রহমান, মাহমুদ আজহার, রাশেদুজ্জামান, তারেক, ওয়াদুদ শেখ ওরফে গাজী খান, আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ ওরফে মোছহাব মোড়ল, মোছহাব হাসান ওরফে রাশু, শেখ মো. এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম, সারোয়ার হোসেন, আমিরুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম খান।

রায় ঘোষণার আগে গতকাল কারাগারে থাকা নয় আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত ও তার আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ঘটনায় মোট তিনটি মামলা হয়েছিল। তার মধ্যে দু’টি মামলার রায় বিচারিক আদালতে আগেই হয়। গতকাল অপর মামলাটির রায় হলো।

রায়ে আদালত বলেন, মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষে ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ১২১/৩৪/১০৯ ধারার অপরাধজনক মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হলো। একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে আসামিদের প্রকাশ্যে প্রত্যেকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। তবে ফায়ারিং স্কোয়াডে দন্ড কার্যকর করা না গেলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশও দেন আদালত। আদালত বলেন, নির্দেশ মোতাবেক তাদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে কর্তৃপক্ষের কোনো অসুবিধার কারণ থাকলে প্রচলিত নিয়মানুসারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেয়া হলো। তাদের দন্ডবিধির ১২১/৩৪/১০৯ ধারায় চরম দন্ড প্রদান করায় দন্ডবিধির ১২১ক/১২২/১২৪ক ধারা মতে কোনো দন্ড প্রদান করা হয়নি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার প্রসঙ্গও উঠে আসে। পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসলে ষড়যন্ত্রকারীরা বিভিন্নভাবে তাকে ২০ বার হত্যাচেষ্টায় লিপ্ত হয়।

আসামিদের জবানবন্দি বিশ্লেষণ করে পর্যবেক্ষণে আদালত আরো বলেন, মুফতি হান্নানের আদালতে দেয়া জবানবন্দি অনুযায়ী ২০০০ সালের জুলাই মাসে হুজি-বির কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বৈধ সরকারকে উৎখাত করার জন্য শেখ হানিাকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন তারা। ওই বছরের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে হেলিপ্যাডের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। বরাবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে হুজি- প্রথম ঘটনা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০ জুলাই ২০০০, দ্বিতীয় ঘটনা খুলনায় ৩০ মে ২০০১, তৃতীয় ঘটনা সিলেটের ২৫ সেপ্টেম্বর ২০০১ এবং চতুর্থ ঘটনা ঢাকায় ২১ আগস্ট ২০০৪। এ কারণে হুজি ও জেএমবিসহ আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে উল্লেখিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব হবে বলে অত্র ট্রাইব্যুনাল মনে করেন। এমতাবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ কর্তৃক আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হলো। বিবেচ্য বিষয়সমূহ ওপরের আলোচনার আলোকে নিষ্পত্তি করা হলো। রায় ঘোষণার সময় হাজতি ৯ আসামিকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। আর পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুরও আদেশ দেন আদালত।

আদালত রায়ে বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা ইচ্ছা করলে রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন-২০০২ এর ১৪ ধারা অনুসারে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনে ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে আপিল দায়ের করতে পারবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক প্রদত্ত দন্ড অনুমোদনের জন্য অবিলম্বে রায়সহ নথি মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে প্রেরণ করা হোক। আসামিদের মধ্যে আজিজুল হক, লোকমান, ইউসুফ, এনামুল হক ও মোছহাব হাসান পলাতক।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা রায়ের পর বলেন, দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই রায় হলো। সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। আশা করছি উচ্চ আদালতেও এ দন্ড বহাল থাকবে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ কলেজের মাঠে ২০০০ সালের ২১ জুলাই শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশ থেকে ৭৬ কেজি ওজনের একটি বোমা উদ্ধার করা হয়। ওই মাঠেই পরদিন শেখ হাসিনার সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। এ ঘটনায় কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক নূর হোসেন বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলাটি দায়ের করেন। এরপর ২০০১ সালের ১৫ নভেম্বর সিআইডির সাবেক এএসপি আব্দুল কাহার আকন্দ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০০৪ সালের ২১ নভেম্বর আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত। এই ঘটনায় হওয়া হত্যাচেষ্টা মামলায় ২০১৭ সালের ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টও আসামিদের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন।

মৃত্যুদন্ডেও যেন বিচলিত নয় আসামিরা
তবে আদালতের এ রায়ে যেন বিচলিত নয় দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা! আদালতে প্রবেশ করা থেকে রায় ঘোষণার শেষ পর্যন্ত এবং আদালত থেকে বের হওয়ার পরও হাস্যোজ্জ্বল থাকতে দেখা গেছে তাদের। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামানের আদালতে দুপুর ১২টা ১৪ মিনিটে আসামিদের আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর বিচারক এজলাসে আসা পর্যন্ত পুরো সময়জুড়ে আসামিদের নিজেদের মধ্যে হাসিখুশিভাবে কথা বলতে দেখা গেছে।

বিচারক এজলাসে আসার পর রায় পড়া শুরু করেন, তখন আসামিরা শান্ত থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে রায় পড়া শোনে। রায় ঘোষণা শেষ হলে আসামিরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে থাকে। এর আগে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে কাশিমপুর ও কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসামিদের আদালতের হাজতখানায় আনা হয়।



 

Show all comments
  • Riday Shel ২৪ মার্চ, ২০২১, ২:১৭ এএম says : 3
    এই রায় অতি দ্রুত কার্যকর করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Ziaul Huq ২৪ মার্চ, ২০২১, ২:১৮ এএম says : 0
    কিছু বললেই ঝামেলা। তাই কিছু বললাম না। চুপ থাকলাম।
    Total Reply(0) Reply
  • Syed Taslim Wasif Ali ২৪ মার্চ, ২০২১, ২:২৮ এএম says : 2
    আলহামদুলিল্লাহ, এ ভাবে সমাজের অসংগতি গুলো দুর করা সম্ভব হবে। আগামীতে ইসলাম বিরোধী কর্মকান্ড এ জড়িত জঙ্গি সংগঠন গুলোর জন্য, এটা নিদর্শন হিসেবে কাজ করবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Gous Mujander ২৪ মার্চ, ২০২১, ২:৩৭ এএম says : 2
    জনসম্মুখে তাদেরকে ফাসিতে ঝুলানো হউক।
    Total Reply(0) Reply
  • Jobayer Hossain ২৪ মার্চ, ২০২১, ২:৩৭ এএম says : 4
    অতিদ্রুত রায় কার্যকর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ দুলাল মিয়া ২৪ মার্চ, ২০২১, ৩:২৯ এএম says : 0
    ইসলাম সম্পর্কে কিছু না জেনে কিছু বলা উচিত হবে না।.....................
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ২৪ মার্চ, ২০২১, ১২:২৩ পিএম says : 0
    What about after liberation till to date thousand and thousand of people killed by the ruler and also thousand of people disappeared---- Wait until death... what type of Punishment is waiting for them, then they will withness.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যুদন্ড

১৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ