Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

আমেরিকা-চীন সঙ্ঘাত মোদির জন্য সঙ্কটজনক

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনের পর চীন ও আমেরিকার কূটনীতিকদের মধ্যে টেলিভিশনে এক ঘণ্টাব্যাপী প্রথম বৈঠক বিশ্বের দুটি বৃহৎ শক্তির আত্মকেন্দ্রিকতাকে তুলে ধরেছে। একদিকে, বাইডেন চীনকে নতজানু করে হলেও বিশ্বের প্রধান শক্তি হিসাবে আমেরিকার মর্যাদাকে পুনরুদ্ধার করতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে, বেইজিং চীনের আচরণের বিষয়ে বহির্বিশ্বের উদ্বেগকে প্রত্যাখান করেছে; আমেরিকার সাথে জোটবদ্ধ রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে দেশটির উষ্মা প্রকাশ পেয়েছে।
বাইডেন ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমেরিকার ক্ষমতায় থাকবেন। চীনের শাসক প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং কমপক্ষে ২০২৩ সাল এবং সম্ভবত এক দশক পরেও ক্ষমতাসীন থাকবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিদেশ নীতি আমেরিকা-চীনের অনমনীয় প্রতিদ্ব›িদ্বতাকে ঘিরে বিকশিত হবে। গত গ্রীষ্মে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সঙ্কট শুরু হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত এবং আমেরিকার জোট ‘কোয়াড’-এর অভ্যন্তরে চীনের বিরুদ্ধে ভারতের জন্য নিরাপত্তা চেয়েছেন। তারপরেও তিনি চীনের সাথে দেপসাং মালভ‚মি নিয়ে আঞ্চলিক বিরোধ ও সঙ্ঘাত এড়াতে চেয়েছেন।
কিন্তু ক্রমবর্ধমান চীনা সমৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় একীভ‚ত চীনের সাথে আমেরিকার চুক্তি এ অঞ্চলের জন্য শান্তির কোনো নজির তৈরি করেনি। বরং যেসব পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশ তাদের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি অবলোকন করেছে, তারা কেউ এ অঞ্চলের ভঙ্গুর ভূ-রাজনৈতিক বুনন ভাঙাতে কোনো লাভ খুঁজে পায়নি। চীন-মার্কিন সঙ্ঘাত শুরু হলে তা মোদির জন্য একটি সঙ্কটজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। কারণ, ভারত মহাসাগরে আমেরিকা ক্ষমতা প্রদর্শনের দক্ষতা গুরুতরভাবে বিশ্বাসযোগ্যতার সমস্যায় ভুগছে। পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য রক্ষার জন্য আমেরিকার ইতিমধ্যে পাঁচটি চুক্তিকৃত মিত্র রয়েছে, যারা এ অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটির নেটওয়ার্ক এবং প্রায় ৮০ হাজার সেনা নিয়ন্ত্রণ করে। এ নেটওয়ার্কটিকে ভারত মহাসাগরে সম্প্রসারিত করতে ঘাঁটি, সেনাবাহিনী এবং অর্থের সুবিশাল যোগান প্রয়োজন। বাইডেন প্রশাসন এ সংক্রান্ত অর্থ দিতে রাজি হবে কিনা বা সফল হবে কিনা, কেউ জানে না।
যদিও কোয়াডের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে, সমুদ্রগুলোতে শক্তি প্রদর্শন করে চীনের আধিপত্যের মোকাবেলা করা যেতে পারে, তবে তাদের কৌশলটি বিপজ্জনক। এর মধ্যে মূল বিপদ হ’ল, চীন হিমালয়ে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা ঘিরে ভারতকে শায়েস্তা করতে পারে। ওয়াশিংটন এবং বেইজিং উভয়ের নেতাদের কাছে শিক্ষণীয় বিষয়টি অবশ্যই স্পষ্ট হওয়া উচিত: ক্ষমতার প্রদর্শনী প্রলোভনমূলক হলেও প্রায়শই তা প্রত্যাশিত ফলাফল দেয় না।
এশিয়া এবং আমেরিকা উভয় শক্তি সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছিল; ভ‚-রাজনৈতিক দ্ব›েদ্বর দ্বারা কোনো দলের স্বার্থ বর্ধিত হয় না। দেশগুলো তারপরেও সবসময় যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয় না। বেইজিং আমেরিকার উদ্দেশ্য সম্পর্কে শঙ্কিত হয়ে তার সীমানা বরাবর বৈরি দেশগুলোকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, যেটিকে দেশটি ক্ষমতার অত্যাবশ্যকীয় প্রদর্শনী বলে বিশ্বাস করে।
আমেরিকা বৈশ্বিক শক্তির শীর্ষ নেতা হিসেবে অবস্থান ধরে রাখার ধারণা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে অক্ষম এবং তার এশীয় জোট ব্যবস্থাটিকে চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তিকে ঠেকিয়ে রাখার হাতিয়ার হিসাবে প্রসারিত করছে। চীনের শঙ্কা এবং আমেরিকার ঔদ্ধত্য একটি ভ‚-রাজনৈতিক সঙ্ঘাত তৈরির জন্য এমনভাবে ঘনিভূত হয়েছে যে, কোনো পক্ষেরই জেতার সম্ভাবনা নেই। এ সঙ্ঘাত শুরু হলে বেশিরভাগ এশীয় শক্তির মতো ভারতের জন্য সর্বোত্তম হল, নিষ্ক্রিয় থাকা। সূত্র : মানি কন্ট্রোল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আমেরিকা-চীন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ