মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সিনেটে বিরোধী দলীয় নেতার পদ নিয়ে ১১-দলীয় বিরোধী জোটের দুটি প্রধান দল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন (পিডিএম)’র পাকিস্তান মুসলিম লীগ নাওয়াজ (পিএমএল-এন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)-এর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভেদে স্পষ্ট লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। পিএমএল-এন এবং পিপিপি উভয়েই সিনেটে বিরোধী দলীয় নেতার পদের হকদার বলে তাদের দাবি তুলে ধরেছে।
লাহোরের জাতির ওমরাহ বাসভবনে পিডিএম প্রধান মাওলানা ফজলুর রেহমানের সাথে বৈঠকের পর একটি সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পিএমএল-এন-এর প্রধান মরিয়ম নওয়াজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, সিনেটে বিরোধী নেতা তার দলের হবেন, কারণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল “নীতি” পিডিএম হুডল-এ।
‘পিএমএল-এন নেতা শহীদ খাকান আব্বাসির বাসায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে আমরা সিনেট চেয়ারম্যান হিসেবে পিপিপির ইউসুফ রাজা গিলানিকে, জেআইআই-এফ-এর আবদুল গাফুর হায়দারিকে ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে এবং একটি বিরোধী দলীয় নেতার জন্য পিএমএল-এন প্রার্থীকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
উচ্চ সভায় চেয়ারম্যান ও ডেপুটি চেয়ারম্যানের নির্বাচনের আগে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কথা উল্লেখ করে মরিয়ম বলেন, ‘সিনেটের চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ওপর পরিবর্তনের সিদ্ধান্তের কোনো আলোচনা করা হয়নি’। তিনি বলেন, সিদ্ধান্তটিতে পিডিএম-এর চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ‘এ সিদ্ধান্তের পাশে সকল পক্ষের দাঁড়ানো উচিত। যদি কেউ মনে করেন যে, পুনর্বিবেচনার কোনো জায়গা আছে, তারাও নিশ্চিত হতে পারে যে, পর্যালোচনার প্রয়োজন ছাড়াই একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমি আশা করি, বাকি দলগুলো পিএমএল-এন এর অবস্থানের সাথে একমত হবে’ -তিনি বলেন।
পিডিএম প্রধান ফজলুর রহমানও মরিয়মের সাথে একমত যে, বিরোধী নেতাকে মনোনীত করা পিএমএল-এন-এর অধিকার। বৃহত্তম বিরোধী দল পিএমএল-এন এ পদের জন্য আজম নাজির তারার ও সাদিয়া আব্বাসির নাম বিবেচনা করছে বলে জানা গেছে।
পিডিএম প্রধান মাওলানা ফজলুর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন যে, পিডিএম অক্ষত রয়েছে এবং পিটিআই সরকারকে পদচ্যুত করার লক্ষ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে গঠিত জোটে কোনো বিভাজন নেই।
গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, ‘কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা সমাধান করা বাকি আছে, তবে এসব বিষয়ও সমাধান করা হবে। বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে’।
সিনেট থেকে পদত্যাগে পিপিপির অনীহা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা আশাবাদী পিপিপি পিডিএমের অন্য নয়টি দলের সিদ্ধান্তকে সম্মান করবে। ‘আমরা পিপিপির সিইসির সভার জন্য অপেক্ষা করব। আমরা তাদের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করতে প্রস্তুত এবং সংলাপের মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান করব’, -যোগ করেন তিনি।
তবে, পিপিপি নেতা রাজা পারভেজ আশরাফ উচ্চ সভায় ২১ জন সিনেটর নিয়ে বলেছেন, পিপিপি সিনেটের একক বৃহত্তম বিরোধী দল এবং দলটি বিশ্বাস করে যে, গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য অনুসারে সিনেটে বিরোধী নেতার পদটি সেখানে যাওয়া উচিত।
এক বিবৃতিতে আশরাফ বলেন, জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা এবং পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান - দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় পদ পিএমএল-এনের হাতে রয়েছে।
২০১২ থেকে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী আশরাফ বলেন, ‘এটি কেবল সঠিক এবং যথাযথ হবে যে, তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় পদটি ইতোমধ্যে অন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় পদে থাকা দলের পরিবর্তে উপরের সভায় বৃহত্তম বিরোধী দলকে দেওয়া হবে’।
তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, ‘প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক নিয়মাবলী ও ঐতিহ্য’ মেনে বিষয়টি ‘ঐক্যবদ্ধভাবে’ মীমাংসিত হবে।
এর আগে দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সাথে আলাপকালে পিপিপির আরেক নেতা কামার জামান কায়রা বলেন, সিনেটের বিরোধীদলীয় নেতা সিনেটর আজম নাজির তারারকে মনোনীত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে পিপিপি নেতৃত্ব ইতোমধ্যে পিএমএল-এন নেতৃত্বের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘শহীদ বেনজির ভুট্টো [পিপিপির নিহত চেয়ারপারসন]-এর হত্যাকারীদের পরামর্শদাতা একজন ব্যক্তিকে মনোনীত করা [পিএমএল-এন এর] অন্যায়’।
তিনি বলেন যে, ইউসুফ রাজা গিলানিকে অন্যায়ভাবে কারচুপির মাধ্যমে সিনেট চেয়ারম্যানের পদ থেকে ভুলভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং তিনি বিরোধী বেঞ্চে সিনিয়র ও পাকা রাজনীতিবিদ, সিনেটে বিরোধী নেতার পদ পাওয়ার যোগ্য।
‘আমরা ইতোমধ্যে সিনেট চেয়ারম্যান নির্বাচনের বিরুদ্ধে আদালতে গিয়েছি। আমরা যদি সিনেট চেয়ারম্যানের সøট জিতি, পিএমএল-এন বিরোধী নেতার পদ পেতে পারে, তবে তা না হলে পিএমএল-এন-এর পরিস্থিতি পরিবর্তনের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত’ -তিনি বলেন।
রোববার গণমাধ্যমের আলাপ চলাকালীন মরিয়ম নওয়াজ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, পিএমএল-এন এবং জেআইআই-এফ তাদের নিজস্বভাবে পিটিআই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারে। তিনি বলেন, পিএমএল-এন এবং জেআইআই-এফ উভয়ই দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি বড় সমাবেশ ও মিছিল করেছে।
‘প্রয়োজনে আমরা এ অযোগ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালাতে পারি। তবে, সব দল ঐক্যবদ্ধ থাকলে এবং জনগণের চাহিদা মেটাতে এগিয়ে গেলে আরো ভাল হবে’ -তিনি যোগ করেন।
পিপিপিকে ছাড়াই কি পিডিএম এগিয়ে যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে ফজল বলেন, পিডিএম এমনকি ক্ষুদ্রতম দলের উদ্বেগও সমাধান করবে। ‘পিপিপি পিডিএমের একটি বড় এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ দল তাই তাদের উদ্বেগ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে’ -যোগ করেন তিনি।
ফজল বলেন, ২৬ মার্চ পিডিএম দলগুলোর কর্মীরাও মরিয়মের সাথে জাতীয় জবাবদিহিতা ব্যুরো (এনএবি) তদন্তকারীদের সামনে উপস্থিত হবে।
পিডিএম প্রধান বলেন, ‘শুনানির জন্য ন্যাব যেসব কারণ বলেছেন তা প্রকৃতপক্ষে ন্যাব-এর প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত করেছে। আমরা সবসময় বলেছি যে, ন্যাব নিজে থেকে কাজ করে না’। ২৬ মার্চ শুনানি চলাকালে কয়েক লাখ পিডিএম কর্মী মরিয়মের সাথে সেখানে উপস্থিত থাকবেন’।
তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি ও বিদ্যুতের শুল্কের কারণে জনগণ প্রয়োজনীয়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে এবং পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আদেশ অনুসরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে।
বিরোধী দলগুলোর আইনপ্রণেতাদের সিনেট থেকে পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে বিভাজনের কারণে পিডিএম গত সপ্তাহে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। কারণ এর আগে ২৬ মার্চ নির্ধারিত সরকার বিরোধী ইসলামাবাদ অভিমুখী লংমার্চ স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিল।
পদত্যাগ, সিনেট নির্বাচন এবং পার্লামেন্টের উচ্চ সভায় বিরোধীদলীয় নেতা কে কাকে মনোনীত করবেন এ প্রশ্নে নেতারা একে অপরের সাথে উত্তাপের বিনিময়ে লিপ্ত হওয়ার কারণে প্রধান ইস্যুতে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়েই পিডিএম শীর্ষ সম্মেলন শেষ হয়েছিল।
সিন্ধু প্রদেশের ক্ষমতায় থাকা পিপিপি সিনেট থেকে পদত্যাগে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, আর পিএমএল-এন লন্ডন থেকে তার শীর্ষ নেতা নওয়াজ শরীফকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অস্বীকার করেছিল। সূত্র : দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।