Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শত কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ বিএসএমএমইউতে চাকরি স্থায়ীকরণের ধুম

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২১, ১১:৫৮ এএম

এ যেন ঝড়ের আম কুড়ানো। আগামিকাল ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)র ভিসি কনকান্তি বড়ুয়ার শেষ কর্মদিবস। এর আগে তিনি পছন্দসই ব্যক্তিদের চাকরি নিয়মিতকরণ করছেন। হয়তো প্রত্যাশা ছিলো, ভিসি হিসেবে তার মেয়াদ আরও বাড়বে। কিন্তু পদোন্নতি, নিয়োগ এবং কেনাকাটায় নানা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তার সেই আশার গুড়ে বালি। মেয়াদ আর বাড়ছে না-নিশ্চিত হওয়ার পর কনক কান্তি বড়–য়া ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন মাস্টার রোলে চাকরিরত তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিদের নিয়মিতকরণে। তিন মাসেও যে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি- বিদায় বেলায় সেটি তিনি করছেন দিনে দিনে। মাস্টার রোলে চাকরিত যোগ্য ও দক্ষদের বঞ্চিত করে স্থায়ী করছেন পছন্দসই কর্মচারিদের।
বিদায়ী ভিসি’র ‘অন্যরকম’ এই ব্যতি-ব্যস্ততা নিয়ে বাইরে রটেছে নানা কথা। অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রতি ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নিয়ে স্বীয় পছন্দসই ব্যক্তিদের হাতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন চাকরির কনফারমেশন চিঠি। আড়ালে রয়েছে অন্তত: শত কোটি টাকার লেনদেন। অথচ মাস্টার রোলে ১০ থেকে ১২ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করছেন-তাদের স্থায়ী করা হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জনবল নিয়োগে গড়ে ওঠা অদৃশ্য সিন্ডিকেটকে যে টাকা দিয়ে তুষ্ট করতে পারছে-তার চাকরিই স্থায়ী হচ্ছে। অন্যদিকে এক সময় স্থায়ী হবেন-এমন আশায় যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারিরা বুক বেধেছিলেন তাদের মাঝে নেমে এসেছে চরম হতাশা। বিএসএমএমইউতে দীর্ঘদিন অ¤œান বদনে কাজ করে গেলেও-টাকা দিতে না পারায় স্থায়ী হচ্ছে না তাদের চাকরি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রমতে, শূন্য ১৮৩টি পদে অভ্যন্তরীণ এ নিয়োগ প্রক্রিয়াটি শুরু হয় ৩ মাস আগে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মরত কর্মচারিদের মধ্য থেকে এ নিয়োগ হওয়ার কথা। রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এবিএম আব্দুল হান্নান এ লক্ষ্যে গত বছর ১৫ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার সার্কুলার জারি করেন।ওই বছর ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে চাকরিরতদের মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার কথা। শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে, সহকারি কম্পিউটার অপারেটর ১৬ জন, অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর ১০ জন, নি¤œমান সহকারি ০২ জন, ল্যাব টেকনিশিয়ান ০২ জন। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব), ১৯ জন, কম্পিউটার অপারেটর ০৮ জন, ওটি টেকনিশিয়ান ০২ জন, ফিজিও থেরাপিস্ট ০১ জন, অফিস সহকারি ১৫ জন। গাড়ি চালক ৯ জন,ইসিজি টেকনিশিয়ানস ৬ জন, পাম্প অপারেটর ৭জন, রিসিপশনিস্ট ৬ জন। রেডিওগ্রাফারের পদ ৬টি। প্লাম্বার মিস্ত্রি ৫ জন, ক্যাথল্যাব সহকারি ৪ জন,ইলেকট্রিশিয়ান ২ জন, দর্জি ৬ জন, টেলিফোন অপারেটর ৪ জন, সহকারি কাম হিসাব রক্ষক ১ জন, হিসাব সহকারি ১ জন, হিসাব রক্ষক ১ জন, সহকারি কাম মুদ্রাক্ষরিক ১ জন, মেশিন অপারেটর ১ জন, পি এ ১ জন, রেন্ট কালেক্টর ১ জন, জুুিনয়র ইন্সট্রুমেন্ট কেয়ারটেকার ১ জন, রাজমিস্ত্রি ১ জন এবং ফার্মেসী সহকারি ১০জন। ফটোগ্রাফার ১ জন, অডিওমেট্টিশিয়ান ১ জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল), ৩ জন, ইকো টেকনিশিয়ান ২ জন, হিসাব রক্ষক কাম কম্পিউটার অপারেটর ২ জন, সেলস ম্যান ২ জন, অফিস সহকারি কাম হিসাব রক্ষখক ২ জন, অফটোমেট্টিক্স ২ জন, টেকনিশিয়ান (পাওয়ার) ১ জন, লেজার কীপার ১ জন, ডাটা এন্ট্রি সহকারি ১ জন, সহকারি কম্পিউটার অপারেটর কাম লাইব্রেরী এ্যাসিসট্যান্ট, ১ জন, টেলিফোন টেকনিশিয়ান ১ জন, স্টোর এ্যাটেনডেন্ট ১ জন, ইলেকট্রো মেডিক্যাল টেকনিক্যাল এ্যাসিস্ট্যান্ট ১ জন এবং ফ্ল্যাবোটমিস্ট ১১ জন। তবে এর বাইরেও আরও অনেক নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখা হয় গোপনে। সব মিলিয়ে নিয়োগযোগ্য পদের সংখ্যা অন্তত ৫শ’। পদগুলো পূরণে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ ঘোষিত হলেও অজ্ঞাতকারণে পরীক্ষা নেয়া হয়নি। এখন তাদের কাছ থেকে আগেই হাতিয়ে নেয়া অর্থের ‘বৈধতা’ দিতে তড়িঘড়ি স্থায়ীকরণ করছেন। বিদায়ী ভিসি হয়তো ধারণা করেছিলেন, নিয়োগের মেয়াদ বাড়বে। আর তখন ধীরে-সুস্থে তিনি স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবেন। সেটি না হওয়ায় বিদায় দেয়ার পুর্ব মুহূর্তে ‘পিক অ্যান্ড চ্যুজ’ পদ্ধতিতে মাস্টার রোলের কর্মচারিদের নিয়োগ স্থায়ী করে যাচ্ছেন। তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বিদায়ী ভিসি ডা. কনককান্তি বড়–য়া।
আজ সোমবার তিনি ইনকিলাবকে বলেন, এদের নিয়োগতো আগেই হয়ে আছে। এখন শুধু রেগুলার করার উদ্যোগ নিয়েছি। এর আগে জনবল নিয়োগের পদ ছিলো না। তাই নিয়মিতকরণ করা যায় নি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় পদ অনুমোদন হয়। এসব পদেই তাদের রেগুলার করা হচ্ছে। চাকরি নিয়মিকরণের বিপরীতে অবৈধ অর্থের লেনদেন সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার যাতে এক্সটেনশন না হয় সেই লক্ষ্যে স্বার্থান্বেষী মহল ধারাবাহিকভাবে কুৎসা রটাচ্ছে। আপনারা যাচাই করে দেখুন। এর আগে ৬শ’ নার্স নিয়োগ দিয়েছি। তখন কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ গেলেও তারা অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায় নি। কনককান্তি বড়–য়া কখনও কাঁচা কাজ করে না। সিন্ডিকেট যদি মনে করে এসব নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে পরবর্তীতে তা বাতিল করে দেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএসএমএমইউ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ