নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে শোচনীয় হার বাংলাদেশের। গতকাল ভোর ৪টায় নিউজিল্যান্ডের ডানেডিনে স্বাগতিক দল ১৭২ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নিয়েছে। ম্যাচে সফরকারীরা পাত্তাই পায়নি। টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৪১.৫ ওভারে মাত্র ১৩১ রানেই গুটিয়ে যায়। জবাবে নিউজিল্যান্ড ২১.২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। এ নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাঠে টানা ১৪ ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ। অসহায় আত্মসমর্পনের দিনে ওয়ানডে সুপার লিগেও প্রথম হার দিয়ে শুরু টাইগারদের।
৮ উইকেটে হারা ম্যাচ শেষে টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল কাঠগড়ায় তুললেন নিজেদের দুর্বলতাকেই, ‘কোনো সন্দেহ নেই তারা খুব ভাল বল করেছে। কিন্তু আমরা কেবল নিজেদের দায়ী করতে পারি। ব্যাটিং নিয়ে আমাদের যে গর্ব তার আশেপাশে ছিলাম না। আমরা এখানে অনেকদিন আছি। কাজেই প্রস্তুতি নিয়ে কোনো অভিযোগ করতে পারছি না। আমাদের জন্য তা নতুন কিছু না।’
এছাড়া হতশ্রী এই ম্যাচ শেষে ইতিবাচক কিছু না পেয়েও অবশ্য মেহেদি হাসানের বোলিংয়ের কথা একটু বললেন তামিম, সত্যি কথা বলতে এই ম্যাচ থেকে ইতিবাচক কোনো কিছুই নাই নেওয়ার। যদি আমার কিছু বলতেই হয়, তাহলে মেহেদি যে ৫-৬ ওভারের স্পেল করেছে, ভালো বল করেছে। এছাড়া আমি কোনো কিছু দেখি না যে এখান থেকে নেওয়ার আছে।’
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ও ডানেডিনের মাঠে সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে ২০১০ সালে এই মাঠে করা ১৮৩ ছিল এতদিন ধরে টাইগারদের সর্বনিম্ন। ২০০৭ সালে কুইন্সটাউনে করা ৯৩ রান এখনও রয়েছে সর্বনিম্ন সংগ্রহ হিসেবে।
ছোট মাঠ, উইকেটও ব্যাটসম্যানদের জন্য নয় ভয়ঙ্কর কিছু ছিল না। তারপরও কিউই বোলারদের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানরা। বাজে শট খেলতে গিয়েই দলকে ডুবিয়েছেন তারা। বাংলাদেশ দলের ৬ ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের ঘর স্পর্শ করলেও সর্বোচ্চ রান ছিল মাত্র ২৭!
ম্যাচের শুরুতে এবং শেষ দিকে জোড়ায় জোড়ায় উইকেট শিকার করে নিউজিল্যান্ডের সেরা বোলার ট্রেন্ট বোল্ট। মাত্র ২৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে তিনিই হন ম্যাচসেরা। বল করতে নেমে বোল্ট বাংলাদেশ দলকে ভড়কে দেন শুরুতেই। ম্যাচের প্রথম বলটি করেন তিনি দুর্দান্ত আউটসুইঙ্গিং ইয়র্কার। অল্পের জন্য রক্ষা পান অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে টাইগার অধিনায়ক ওভারের তৃতীয় বলে স্ল্যাশ করে পয়েন্টের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে পাল্টা জবাব দেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তামিম। বোল্টের বলেই ৪.১ ওভারে এলবিডব্লিউ হন তিনি। ফিরে যাওয়ার আগে ১৫ বলে করেন ১৩ রান। দুই বল পরই বাজে শটে আউট হন সৌম্য সরকার (০)। অভিষিক্ত ডেভন কনওয়ে নেন নিজের প্রথম ক্যাচ। লিটন দাস ৩ রানে ক্যাচ দিলেও আউট হন ৩৬ বলে ১৯ রান করে।
১৩.২ ওভারে নিশামের বলে লিটন ফিরে গেলে ৪৯ বলে ২৩ রান তুলে মুশফিকুর রহিমও ফিরেন নিশামের বলেই। তিনি গাপটিলকে ক্যাচ দেন। বলা যায় নিশাম আর সৌভাগ্য মিলিয়ে ধরা দেয় পরের উইকেট। দলীয় ৭২ রানে মোহাম্মদ মিঠুন রান আউট হলে বাংলাদেশ হারায় পঞ্চম উইকেট। ফিরে যাওয়ার আগে মিঠুন করেন ২৭ বলে ৯ রান। কিউই পেসারদের ভূমিকা শেষে এরপর দৃশ্যপটে আসেন স্পিনার স্যান্টনার। এই বাঁহাতি স্পিনারের লেগ স্টাম্পের বলে বোল্ড মেহেদী হাসান মিরাজ (১)। অভিষিক্ত মেহেদি হাসান ওয়ানডে ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেন দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে। স্যান্টনারের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে ইনসাইড আউট শটে ৯৪ মিটার লম্বা ছক্কা হাঁকান তিনি। তবে স্যান্টনারকে আরেকবার বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন মিড অনে। আউট হন ১৪ রানে। তখন বাংলাদেশের স্কোর ৩১.২ ওভারে ৭ উইকেটে মাত্র ৯৮ রান।
এরপর কিছুটা লড়াই করেন মাহমুদউল্লাহ। তবে ৫৪ বলে সর্বোচ্চ ২৭ রান করে ম্যাট হেনরির বলে মাহমুদউল্লাহ পুল করলে শর্ট মিড উইকেটে লাফিয়ে দারুণ রিফ্লেক্স ক্যাচ নেন স্যান্টনার। ৪০.১ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ যখন ৮ উইকেটে ১২৫ তখন মাহমুদউল্লাহ ফিরে যান। ফলে ইনিংসের বাকিটা শেষ করতে আর বেশি সময় নেননি বোল্ট। হাসান মাহমুদ ফেরেন মাত্র ১ রানে। আর তাসকিন ৩২ বলে ১০ রান তুলে থামেন। শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজুর রহমান ১ রানে অপরাজিত থাকলেও বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৩১ রানে।
ব্যাটিংয়ে নেমে অতি আগ্রাসী হতে গিয়েই গাপটিল ফেরেন ৪ ছক্কায় ১৯ বলে ৩৮ রান করে। চাপহীন রান তাড়ায় হেনরি নিকোলস ও ডেভন কনওয়ে এগিয়ে যান অনায়াসেই। এই জুটিতেই যখন জয়ের কাছে নিউজিল্যান্ড, আচমকাই সজোরে মারতে গিয়ে হাসানকে উইকেট উপহার দেন কনওয়ে (৫২ বলে ২৭)। কনওয়ে আউট হওয়ায় আরেক অভিষিক্ত উইল ইয়াং খানিকটা ব্যাটিংয়ের স্বাদ পান। নিজের ৫০তম ওয়ানডেতে নিকোলস অপরাজিত থাকেন ৪৯ রানে। তাসকিন ২৩ ও হাসান মাহমুদ ৪৯ রানে ১টি করে উইকেট পান।
সিরিজের পরের ওয়ানডে আগামী মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চে, দিবা-রাত্রির এই ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাতটায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ৪১.৫ ওভারে ১৩১ (তামিম ১৩, লিটন ১৯, সৌম্য ০, মুশফিক ২৩, মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মিরাজ ১, মেহেদি ১৪, তাসকিন ১০, হাসান ১, মুস্তাফিজ ১*; বোল্ট ৪/২৭, হেনরি ১/২৬, জেমিসন ০/২৫, নিশাম ২/২৭, স্যান্টনার ২/২৩)
নিউজিল্যান্ড : ২২.২ ওভারে ১৩২/২ (গাপটিল ৩৮, নিকোলস ৪৯*, কনওয়ে ২৭, ইয়াং ১১*; মুস্তাফিজ ০/২৬, হাসান ১/৪৯, তাসকিন ১/২৩, মেহেদি ০/১৭, মিরাজ ০/৯, সৌম্য ০/৫) ফল : নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী। সিরিজ : ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে। ম্যাচসেরা : ট্রেন্ট বোল্ট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।