Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই : শেখ হাসিনা

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশ নিতে পেরে আমি সম্মানিত : রাজাপাকসে বঙ্গবন্ধুকে যোদ্ধা হিসেবে স্মরণ করে রাশিয়া

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০২১, ১২:১৪ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৭৫ সালে নির্মমভাবে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যার পর কত রকমের মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, রেসকোর্সের ঐতিহাসিক বক্তব্য ও ভাষা আন্দোলনে তার নেতৃত্বের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। তার ভাষণ প্রচারে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু ইতিহাস মুছে ফেলা যায় না। আজ প্রমাণিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায় না। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, সবার সহযোগিতায় আজকে আমরা সেই সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে পারছি। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ করতে পেরেছি। আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই।

গতকাল জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ইশারা ভাষার মাধ্যমে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পড়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ভি লাভরভের একটি ভিডিও বার্তা দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। বক্তৃতা করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদও। তৃতীয় দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছেন নবনীতা চৌধুরী। আজকের অনুষ্ঠানের শিরোনাম ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা’।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। মার্চ মাস বাঙালি জাতির জন্য এক অবিস্মরণীয় মাস। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যিনি হাজার বছর ধরে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম আবাসভূমি এনে দিয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালের এই মার্চ মাসের ১১ তারিখে তিনি মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বপ্রথম কারাগারে অন্তরীণ হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ পাকিস্তানি শাসকদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা। এর সপ্তাহ আড়াই পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সমগ্র জাতিকে নির্দেশ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধের, মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার।
এ সময় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রীলঙ্কা আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে একই ধরনের মনোভাব পোষণ করে এবং আমরা পরস্পরকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে থাকি। প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু এবং তিনি সবসময়ই বাংলাদেশের পাশে অবস্থান করেন। আমিও চেষ্টা করি সেই বন্ধুত্বের প্রতিদান দিতে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে মাহিন্দা রাজাপাকসের যোগদান তার নিজের ও শ্রীলঙ্কার জনগণের আমাদের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রতিফলন। আমি আশা করি আমাদের দুই দেশের জনগণের মধ্যকার এই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে অংশ নিতে পেরে আমি সম্মানিত : রাজাপাকসে
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে ঢাকায় আসা শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শক্তিশালী করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি এ আগ্রহের কথা জানান। এক টুইটে রাজাপাকসে লেখেন, দুই দেশই যাতে লাভবান হয়, সেজন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের সঙ্গে কাজ করতে চান। আর ঢাকায় পৌঁছে আরেক টুইটে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে তিনি উষ্ণ অভ্যর্থনা ও গার্ড অব অনার পেয়েছেন। তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই আয়োজনের অংশ হতে পেরে তিনি সম্মানিত। এর আগে গতকাল সকালে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর আনুষ্ঠানিকতা সেরে তিনি সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আজ প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন রাজাপকসে। বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে রাজাপাকসেকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তাকে স্বাগত জানানো হয় ২১ বার তোপধ্বনি দিয়ে। মাহিন্দা রাজপাকসেকে নিয়ে শেখ হাসিনা অভ্যর্থনা মঞ্চে পৌঁছালে তিন বাহিনীর সুসজ্জিত একটি দল এ সময় গার্ড অব অনার দেয়।
বঙ্গবন্ধুকে যোদ্ধা হিসেবে স্মরণ করে রাশিয়া
দেশের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন যোদ্ধা এবং রাশিয়া তাকে সেভাবেই স্মরণ করে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এই কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুকে রাশিয়ার একজন সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে মার্চ ১৯৭২-এ বঙ্গবন্ধু মস্কো সফর করেন। ওই সময়ে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয়।
বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য রাশিয়া সব সময়ই রাজনীতিক সমর্থণ দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মাইনমুক্ত করার জন্য সোভিয়েত নেভির একটি দল পাঠানো হয়েছিল। বাংলাদেশ রাশিয়ার এই সমর্থণকে মনে করেছে, যা প্রশংসার যোগ্য। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ অনেক উন্নতি সাধন করেছে। এর পাশাপাশি এখনকার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দ্রারিদ্রতার বিরুদ্ধে ঢাকা যুদ্ধ করছে। ল্যাভরভ বলেন, বিভিন্ন দেশে শান্তিরক্ষী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ