নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
রেজাউর রহমান সোহাগ : ‘খেলাধুলার মূল কথা হলো প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি করা। প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরী করে শৃঙ্খলাবোধ, অধ্যবসায়, দায়িত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা ও পেশাদারিত্ব। খেলাধুলার সঙ্গে স্বাস্থ্য ও মনের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সুস্থ দেহ মানেই সুস্থ মন। খেলাধুলা জীবনকে করে সুন্দর, পরিশীলিত। তাছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের পরিচিতি ও সম্মান বাড়ানোর ক্ষেত্রে খেলাধুলার ভূমিকা অতুলনীয়’- বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি কথাগুলো বলেন। অনুষ্ঠানে দেশের খেলাধুলায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালের ৩২ জন খেলোয়াড় এবং ক্রীড়া সংগঠককে পুরস্কার দেওয়া হয়। যার মধ্যে মরণোত্তর জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জৈষ্ঠপুত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ কামালকে। তাঁর পুরষ্কারটি গ্রহণ করেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ বন্ধু বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা। শহীদ শেখ কামাল ২০১১ সালের জন্য ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক হিসেবে এই পুরস্কার পান। বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের রূপকার হিসেবে খ্যাত শেখ কামাল জীবনদশায় দেশের খেলাধুলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি দেশের অন্যতম ক্রীড়া সংগঠন ঢাকা আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা।
শেখ কামালের চিন্তাধারায় সব সময়ই ছিলো কিভাবে দেশের খেলাধুলাকে এগিয়ে নেয়া যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার সময়ে ঘাতকদের বুলেটে শহীদ হন তিনিও।
পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ এপ্রিলকে জাতীয় ক্রীড়া দিবস ঘোষণা করে বলেন,‘জাতিসংঘ প্রতিবছর ৬ এপ্রিল ‘স্পোর্টস ডে’ পালন করে। আমরাও এখন থেকে এদিনটিকেই ক্রীড়া দিবস হিসেবে পালন করবো।’
তিনি আরো বলেন,‘খেলাধুলা দেশের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজন। যতবেশি খেলাধুলার সঙ্গে আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সম্পৃক্ত রাখতে পারবো তারা ততবেশী সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। চিন্তা-চেতনায়, মন-মননে অনেক বেশি শক্তিশালী, অনেক বেশি উন্নত হবে তারা।’
উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাক্তিগতভাবে একজন প্রচন্ড ক্রীড়ানুরাগী। দেশের যেখানেই গুরুত্বপূর্ণ খেলা হয়েছে, সেখানেই তিনি ছুটে গেছেন। মুলত ক্রীড়া পরিবারের সন্তান বলেই খেলাধুলার প্রতি তার দূর্বলতা বেশী। এ প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন,‘শত ব্যস্ততার মাঝে আমি যখনই সুযোগ পাই, তখনই বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়ামে ছুটে যাই। আসলে খেলাধুলার প্রতি ভালবাসা আমার রক্তের মধ্যেই রয়েছে। আমার বাবা জাতির পিতা একজন সেরা ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। দাদাও ফুটবল খেলতেন। শেখ কামাল ও শেখ জামাল ভালো মানের খেলোয়াড় ছিলেন। সংগঠক হিসেবেও তারা অনেক দক্ষতা দেখিয়েছেন। আমাদের পরিবারের আরেক সদস্য সুলতানা কামাল খুকু ছিলেন দেশসেরা অ্যাথলেট।’
খেলাধুলার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘খেলা যেমন মানুষের মনকে সুন্দর রাখে, তেমনি জীবনের চলার পথটা করে দেয় সুন্দর। সুস্থ দেহ থাকলে, একটা সুস্থ মনও থাকবে। এই মন আর এদিক-ওদিক যাবে না। এখন সমাজে একটা সাংঘাতিক অসুস্থতা দেখা যাচ্ছে। এই যেমন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকাসক্তি-মানুষের মন-মানসিকতা একেবারেই নষ্ট করে দিচ্ছে। সমাজকে কলুষিত করে দিচ্ছে। এখান থেকে আমাদের যুব-সমাজকে ফিরিয়ে আনতে হবে।’ তিনি বলেন,‘ খেলাধুলায় সাফল্য অর্জন করতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ও কর্মপরিকল্পনা। এক্ষেত্রে ক্রীড়া সংগঠকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সাংগঠনিক ভিত না থাকলে ক্রীড়াবিদদের প্রতিভার যেমন বিকাশ হয়ন না, তেমনিভাবে নতুন নতুন খেলোয়াড়ও উঠে আসে না। আমরা প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচীর মাধ্যমে তৃর্ণমূল পর্যায় হতে খেলোয়াড় সংগ্রহ এবং নিয়মিত, নিবিড়, আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় তৈরী করছি। গ্রামীণ বিলুপ্তপ্রায় খেলাধুলাকে উজ্জ্বীবিত করার লক্ষ্যে নেয়া হয়েছে নতুন কর্মসূচী। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে খেলাধুলার জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো। এখন আমরা দেশের খেলাধুলাকে এগিয়ে নিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছি। গ্রহণ করা হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সহ নানামুখী কর্মসূচী। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে আমাদের মেয়েরা দুর্দান্ত খেলে গ্রুপ সেরা হওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছে। বলা যায়, ক্রিকেটের মতো মহিলা ফুটবলেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ২০১৫ সালটি ছিলো আমাদের ক্রিকেটের জন্য গৌরবময় বছর। এ বছর বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তানকে হোয়াইট ওয়াশ করেছে। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। আমার বিশ্বাস, একদিন আমরা ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করবো ইনশাল্লাহ।’ প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল এমপি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ।
দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭৬ সালে চালু করা হয় জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। এবার ৩২ জন ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক এই পুরষ্কারে ভূষিত হলেন।
২০১০ সালের জন্য মনোনীত দশ জনের মধ্যে সাঁতারে মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ হারুন অর রশিদ, শুটিংয়ে মোঃ আতিকুর রহমান, অ্যাথলেটিক্সে মাহমুদা খাতুন, জিমন্যাস্টিকে দেওয়ান মোঃ নজরুল হোসেন, সংগঠক মিজানুর রহমান মানু ও এএসএম আলী কবীর, সাঁতারে নায়েক মোঃ তকবির হোসেন (মরণোত্তর), অ্যাথলেটিক্সে ফরিদ খান চৌধুরী, নেলী জেসমিন ও নিপা বোস।
২০১১ সালের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাবেন- অ্যাথলেটিক্সে রওশন আরা ছবি, বক্সিংয়ে সার্জেন্ট অবসরপ্রাপ্ত মোঃ কাঞ্চন আলী, কুস্তিতে সুবেদার হাজী মোঃ আশরাফ আলী, ভলিবলে হেলেনা খান ইভা, ক্রিকেটে খালেদ মাসুদ পাইলট, শরীর গঠনে রবিউল ইসলাম (ফটিক দত্ত), হকিতে জুম্মান লুসাই (মরণত্তোর), ক্রীড়া সংগঠক কুতুব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (আকসির), সংগঠক আশিকুর রহমান মিকু এবং ক্রীড়াবিদ ও সংগঠক শহীদ শেখ কামাল (মরণোত্তর)।
২০১২ সালের জন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পাচ্ছেন- ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান, ফুটবলে মোঃ মহসীন, আলহাজ মোঃ খুরশীদ আলম বাবুল, আশীষ ভদ্র, সত্যজিৎ দাস রুপু ও আবদুল গাফফার, অ্যাথলেটিক্সে ফিরোজা খাতুন, ব্যাডমিন্টনে নাজিয়া আখতার যুথী, ক্রীড়া সংগঠক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল, হকিতে আনম মামুন উর রশিদ, অ্যালেটিক্সে ক্রীড়া সংগঠক উম্মে সালমা রফিক (মরণোত্তর) ও ক্রীড়া সংগঠক নুরুল আলম চৌধুরী।
জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারের জন্য মনোনীতরা আঠার ক্যারেট মানের পঁচিশ গ্রাম সোনার একটি পদক, পঁচিশ হাজার টাকা এবং একটি সম্মাননাপত্র পান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।