সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
জোবায়ের রাজু
আশিকের মন খারাপ। কারণ কাল তারা এই শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাবে। আশিকের বাবা চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। সে জন্য তারা গ্রামে চলে যাচ্ছে। গ্রামের দোতলা বাড়ির কাজও শেষ। শহর থেকে তারা সোজা গিয়ে সে বাড়িতে উঠবে।
বন্ধুদের খুব মিস করবে আশিক। স্কুলে তার বন্ধুর তালিকাও বেশ লম্বা। রাহী, রকি, আরাফ, রিদোয়ান, শুভ সবাইকে মিস করবে আশিক। ভাবতেই কান্না পাচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি মিস করবে অভয়কে। অভয় আশিকের সবচেয়ে কাছের বন্ধু। কিন্তু অভয় মানব জাতি নয়। সে একটা দৈত্য।
ও আচ্ছা, অভয়ের গল্প বলা যাক। অভয়ের সাথে আশিকের সম্পর্ক গত চার বছরের। আশিকের স্কুলের শাকিলকে যখন সন্ত্রাসীরা খেলার মাঠ থেকে বিকেল বেলায় কিডন্যাপ করে নিয়ে দশ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে শাকিলের কোটিপতি বাবার কাছে, তারপর থেকে আশিকের বাবা-মা তাকে বিকেল বেলা খেলার মাঠে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বাবা-মায়ের ধারণা আশিকও যদি শাকিলের মত কিডন্যাপ হয়, তাহলে তার মুক্তিপণের এত টাকা তারা কোথায় পাবেন!
প্রতিদিন বিকেল বেলায় খেলার মাঠে না যেতে পেরে আশিক মুখ বেজায় কালো করে জানালার গ্রীল ধরে দূরের খেলার মাঠ দেখে। মাঠে কত ছেলেমেয়ে রোজ বিকেলে খেলতে আসে। কেউ ব্যাটÑবল, কেউ গোল্লাছুট, কেউ কানামাছি..., জানালা দিয়ে এসব খেলা দেখে আশিকের খুব কষ্ট হয়।
একদিন বিকেলে আশিক জানালা দিয়ে মলিন চোখে দূরের মাঠের ছেলেমেয়েদের খেলা দেখছে, এমন সময় তার বাবা একটা নাটাইশুদ্ধ ঘুড়ি এনে আশিকের হাতে দিয়ে হাসি হাসি মুখে বললেনÑ ‘এটা নিয়ে ছাদে যাও আশিক। এখন থেকে রোজ বিকেলে ছাদে ঘুড়ি উড়াবে।’
ঘুড়ি নিয়ে ছাদে আসে আশিক। তাদের ছাদটা বেশ বড়। ইচ্ছে করলে এটাকে মাঠ ভেবেও খেলা যায়। কিন্তু সে খেলবে কার সাথে! এই পাঁচতলা দালানে তার বয়সী অনেক ছেলেমেয়ে আছে। কিন্তু ওরা কেউ ছাদে খেলতে আসে না। ওরা মাঠে গিয়ে নিজেদের খুশিমত খেলে।
ঘুড়ি কিভাবে উড়াতে হয়, আশিক জানে না। তার এটা ভালোও লাগে না। একটা ঘুড়ি আকাশে উড়বে আর তার সুতো টেনে ধরে রাখবে হবে, এটা কোন খেলা হল? মনের মধ্যে রাগ জন্মে আশিকের।
ছাদে যে সারি সারি ফুলের টবগুলো, সেগুলোর এক পাশে ঘুড়িটা রেখে পানির টাঙ্কিতে পিঠ হেলান দিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে আশিক। কিছুক্ষণ পর পর ছাদের রেলিং এর কাছে এসে নিচের মাঠের সমস্ত ওই ছেলেমেয়ের খেলা দেখে সে। তার খুব ইচ্ছে করে নিচে নেমে তাদের সাথে খেলতে। হঠাৎ আশিকের মনে হলো তার আশপাশে কে যেন গা ঘেঁষে অদৃশ্যে হাঁটছে। আশিক নিজের কানে সেই অদৃশ্য কারো পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। তার গা মুহূর্তেই হিম দিয়ে উঠল। আশিক এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। না কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তবুও তার মনে হচ্ছে কেউ একজন তার পাশে দিয়ে হাঁটছে।
“এই যে আশিক, এদিকে তাকাও।” ওমা কে কথা বলছে! আর কণ্ঠস্বরটি এমন কেন? আশিক কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না। তাহলে কথা বলছে কে? “এই যে, পানির টাঙ্কির দিকে তাকাও আশিক।”
আশিক পানির টাঙ্কির দিকে তাকিয়ে দেখে বিরাট এক দেহ নিয়ে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে। তার মাথায় লম্বা লম্বা দুটি শিং। আশিকের ভয় লাগছে। শিংওয়ালা সেই বিশাল দেহওয়ালা জন্তুটি বললÑ ‘ভয় পেও না আশিক, আমি দৈত্য।’ ওমা দৈত্য! আশিকের সারা শরীর চমকে উঠলো।
আশিক যে ভয় পাচ্ছে, দৈত্য এটা বুঝতে পেরে বললÑ ‘আমাকে ভয় পেও না তুমি। তোমার বন্ধু হতে চাই আমি। বাবা-মা তোমাকে মাঠে খেলতে দেয় না তো কি হয়েছে, আমিই তোমার খেলার সাথী হবো। তুমি চাইলে আমি রোজ ছাদে এসে তোমার সাথে খেলবো।’ দৈত্যের সুন্দর কথগুলো শুনে আশিকের ভয়ের ঘোর কেটে গেল। এতদিন সে টেলিভিশনের কার্টুন ছবিতে অনেক দৈত্য দেখেছে, আজ সরাসরি তার সামনে বিশাল এক দেহ নিয়ে দৈত্য দাঁড়িয়ে।
আশিক নিচু গলায় বললÑ ‘তোমার নাম কি?’ দৈত্য পানির টাঙ্কির কাছ থেকে আশিকের কাছে আসতে আসতে বললÑ ‘আমাদের কোন নাম নেই আশিক। তুমি চাইলে আমাকে যে কোন নামে ডাকতে পারো।’ দৈত্যের কথা শুনে আশিক কিছু না বলে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আশিককে নির্বাক দেখে দৈত্য বললÑ ‘আমাকে তুমি ভয় পেও না। অভয় নামে ডাকতে পারো আমাকে। আমি তোমার বন্ধু হতে চাই।’
সেই থেকে অভয় আর আশিক ভালো বন্ধু। আশিক রোজ বিকেলে এখন আর মাঠে না গিয়ে ছাদে এসে অভয়কে ডাকলেই অভয় দুই সেকেন্ডের মধ্যে তার বিশাল দেহ নিয়ে হাজির। দুজনে ছাদে নানান রকমের খেলায় মেতে উঠে। অভয় কোন কোন দিন আশিককে তাদের দেশের গল্প বলে। কত সুন্দর সুন্দর সেসব গল্প। রুপকথার মতো শুনতে।
কিন্তু কাল যখন ভোরে আশিকেরা এই শহর ছেড়ে চলে যাবে, তখন অভয়ের জন্য খুব খারাপ লাগবে আশিকের। গ্রামের বাড়ি গিয়ে যদি খেলার সাথী না পায় আশিক, তাহলে সে কার সাথে খেলবে। অভয় কি তাদের গ্রামের বাড়ি চিনবে? মনে হয় না। ইশ্, অভয়কে এই শহর ছেড়ে চলে যাবার কথা বলতে আশিক ভুলে গেছে।
২.
আশিকেরা গ্রামের বাড়িতে চলে এসেছে। বাবা সুন্দর একটি বাড়ি বানিয়েছেন গ্রামে। বাড়িটি দেখে আশিকের চোখ জুড়িয়ে গেল। এমন বাড়ি সে শহরেও দেখেনি। কি সুন্দর বিদেশি মার্বেল পাথরের কারুকাজে বাড়ির কোন কোন দেয়াল। বাবাকে মনে মনে ধন্যবাদ দেয় আশিক।
এই প্রথম আশিক তাদের নতুন বাড়ির ছাদে এলো। ছাদে আসতেই অভয়কে তার ভীষণ মনে পড়ে গেল। শহরে থাকলে এই মুহূর্তে সে ছাদে গিয়ে অভয়ের সাথে খেলতো। মুখ বেজার হয়ে গেল আশিকের।
পরদিনও আশিক ছাদে এসে অভয়ের কথা ভাবতে না ভাবতে হঠাৎ দেখতে পেল কে যেন ছাদের ফুলের টবের পাশে বিশাল শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরে! ও তো অভয়ের মতো দেখতে! ওমা, ও তো অভয়ই।
আশিক খুশি গলায় বললÑ ‘অভয় তুমি এখানে?’ অভয় বললÑ ‘হ্যাঁ আমার বন্ধু যেখানে থাকবে, আমি সেখানে আসবো না?’ আশিক অবাক হয়ে বললÑ ‘কিন্তু তুমি আমাদের গ্রামের বাড়ি কি করে চিনলে?’ মুচকি হেসে অভয় বললÑ ‘আমরা দানব জাতি, আমরা সব চিনি। চোখের পলকেই আরেক জায়গায় চলে যেতে পারি। আর তুমি তো আমার বন্ধু। তোমার বাড়ি চিনবো না?’ আশিক, অভয়ের কথা শুনে খুশি হয়ে বললÑ ‘তুমি রোজ আমার সাথে খেলতে আসবে তো?’ অভয় হো হো করে হেসে বললÑ ‘অবশ্যই।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।