নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
জাহেদ খোকন : দূর্দান্ত, অসাধারণ, চোখ জুড়ানো- বাংলাদেশের কিশোরীদের খেলা দেখে যে বিশেষণেই বিশেষিত করা হোক না কেন, তাও কম করা হবে। বৃহস্পতিবার ফিফা আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে মালদ্বীপের কাছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের লজ্জাজনক হারের পর পুরো দেশ যখন উত্তপ্ত, ঠিক তখনই এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ মহিলা চ্যাস্পিয়নশিপের বাছাই পর্বে অপ্রতিরোধ্য লাল-সবুজের কিশোরীরা। আসরের ‘সি’ গ্রæপে নিজের চতুর্থ ম্যাচে দূর্দান্ত এক জয়ে চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিল বাংলাদেশের কিশোরী দল। গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশ ৪-২ গোলে হারায় শক্তিশালী চাইনিজ তাইপেকে। বিজয়ীদের হয়ে শামসুন্নাহার দু’টি এবং অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকার ও মার্জিয়া একটি করে গোল করেন।
সত্যিই উচ্ছ¡াস মাতানো এক ম্যাচ। প্রতিপক্ষের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারেন মার্জিয়া, সানজিদা, মারিয়ারা, তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করারও উপায় নেই। লাল-সবুজের কিশোরীদের দূর্দান্ত সেই খেলা মাঠে বসেই উপভোগ করলেন সদ্য মালদ্বীপ থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরা জাতীয় পুরুষ ফুটবল দলের বেলজিয়ান কোচ টম সেইন্টফিট। সঙ্গে তার শিষ্যরাও কৃষ্ণাদের অসাধারণ এক ম্যাচ দেখলেন। গ্রæপের আরও একটি ম্যাচ বাকি আছে বাংলাদেশের। সেখানে সানজিদাদের প্রতিপক্ষ দুর্বল আরব আমিরাত। যদিও ওই ম্যাচ শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। টুর্নামেন্টে চার ম্যাচ খেলে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ১২ পয়েন্ট। সমান ম্যাচে ইরান ও চাইনিজ তাইপের অর্জন ৯ পয়েন্ট। শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে ইরান ও তাইপে। বাংলাদেশ যদি তাদের শেষ ম্যাচে হেরেও যায় নিয়মানুয়ায়ী মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে থাকায় সেরা হবে লাল-সবুজের দল।
কাল ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রণাত্মক ছিলো বাংলাদেশ। এই গ্রæপ থেকে কেবল মাত্র চ্যাম্পিয়ন দলটিই যাবে চ‚ড়ান্ত পর্বে। তাই লড়াইটা ছিল গ্রæপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ারও। সমান নয় পয়েন্ট নিয়ে খেলতে নামে বাংলাদেশ ও চাইনিজ তাইপে। দু’দলের কেউ কাউকে এতটুকু ছাড় দিতে নারাজ ছিল। এমন লড়াকু এক ম্যাচে অবশ্য এগিয়ে যায় সফরকারীরাই। ৪ মিনিটে প্রথম আক্রমণ চালায় চাইনিজ তাইপে। কিন্তু বল পা দিয়ে ফেরান স্বাগতিক গোলরক্ষক মাহমুদা। ৭ মিনিটে সুযোগ পায় বাংলাদেশ। জটলায় বল পেয়ে অনুচিং মুগনি শট নিলে তা সাইডবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। ১১ মিনিটে এগিয়ে যায় চাইনিজ তাইপে। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে অধিনায়ক সু ইউ সুয়ানের দূর পাল্লার শট ঠাঁই নেয় বাংলাদেশের জালে (১-০)। এ আসরে স্বাগতিকদের জালে এটিই ছিলো প্রথম গোল। কিন্তু গোল হজম করে এতটুকু ভেঙে পড়েননি সানজিদারা। উল্টো আক্রমণের ধার বাড়াতে থাকেন তারা। ফলে তাদের আটকাতে ফাউলের পর ফাউল করে তাইপের কিশোরীরা। ম্যাচের ২৬ মিনিটে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে কৃষ্ণা এগিয়ে গিয়ে বারে শট নিতে গেলে তাকে পেছন থেকে ফেলে দেন ডিফেন্ডার ছেন চিও। রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজান। পেনাল্টি পায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি লাল কার্ড দেখেন ছেন চিও। ফলে দশ জনের দলে পরিণত হয় তাইপে। ২৭ মিনিটে পেনাল্টি থেকে চমৎকার শটে গোল করে ম্যাচে সমতা আনেন শামসুন্নাহার (১-১)। উল্লাসে ফেটে পড়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। ৩৭ মিনিটে বক্সে আবারো কৃষ্ণাকে ফাউল করে চাইনিজ তাইপের খেলোয়াড়রা। শামসুন্নাহারের বাড়িয়ে দেয়া বল কৃষ্ণা নিয়ে বক্সে ঢুকে এগিয়ে গেলে আবারো তাকে পেছন থেকে বাধা দেন তাইপে অধিনায়ক। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দিলে ৩৮ মিনিটে শুট আউটে শামসুন্নাহার দ্বিতীয় গোল করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেন (২-১)। ৪২ মিনিটে অনুচিংয়ের দূরপাল্লার শট অল্পের জন্য জালে জড়ায়নি। এগিয়ে থেকেই বিশ্রামে যায় বাংলাদেশ। ৪৫ মিনিটে বক্সে বল পেয়ে শট নেন মিডফিল্ডার সানজিদা, কিন্তু তার শট বাইরে চলে যায়। ৫১ মিনিটে বক্সের প্রায় ২৫ গজ দূরে ফ্রি কিক পায় তাইপে। শট নেন মিডফিল্ডার নিয়েন চিং। দক্ষতার সঙ্গেই বল গ্রিপে নেন মাহমুদা। ৫৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক ক্রস দেন অনুচিং। বক্সে ঢুকে বাম পায়ের দূর্দান্ত শটে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী (৩-১)। আর ৭৯ মিনিটে মার্জিয়া নিশ্চিত করে দেন বাংলাদেশ এ ম্যাচ হারছে না। সানজিদার কর্নারে গোলমুখে জটলা থেকে তাইপের ডিফেন্ডারদের ক্লিয়ারেন্স গোল লাইনের একদম কাছ থেকে তিনি করেন বাংলাদেশের পক্ষে চতুর্থ গোল (৪-১)। ৮৭ মিনিটে ম্যাচের ধারার বিপরীতে এক গোল করে তাইপে। এ সময় বক্সে ঢুকে বাম পায়ের গড়ানো শটে মাহমুদাকে পরাস্ত করেন ইউ জও (৪-২)। ইনজুরি টাইমে দ্বিতীয় হলুদকার্ড (লালকার্ড) দেখে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার টেং। এবার ৯ জনের দলে পরিণত হয় তাইপে। তবে শেষ পর্যন্ত ৪-২ গোলের জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।