গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি হরকাতুল জিহাদের সদস্য ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর ওরফে সেলিম মঞ্চের দিকে গ্রেনেড ছুড়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
সোমবার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) সহযোগিতায় রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে দিবাগত রাত তিনটায় গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি ইকবালকে গ্রেফতার করে র্যাবের একটি টিম।
তিনি বলেন, আত্মগোপনে থাকাকালীন কখনও নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিকশা মেকানিকের ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল ইকবাল। তবে র্যাব ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার উপর্যুপরি অভিযান ও গোয়েন্দা তৎপরতার মধ্যে ২০০৮ সালে দেশত্যাগ করে সে। এরপর প্রথমে সেলিম এবং পরবর্তীতে জাহাঙ্গীর নাম ধারণ করে। ইকবাল মালয়েশিয়ায় গিয়ে প্রবাসে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর ২০২০ সালের শেষের দিকে অন্যদের মতো তাকেও দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সর্বশেষ সোমবার রাতে গ্রেফতার হয় সে।
র্যাব ডিজি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঘৃণিত, কলঙ্কজনক ও বিভীষিকাময় একটি দিন। সেদিন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘৃণ্যভাবে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। আলোচিত গ্রেনেড হামলায় মৃত্যুবরণ করেন মোহাম্মদ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভী রহমানসহ দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ অনেকেই এখনও সেই দুঃসহ এবং বিভীষিকাময় স্মৃতি ও ক্ষত বয়ে চলেছেন। এরইমধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আদালত দীর্ঘ সাত বছরে সর্বমোট ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মামলাটির রায় দিয়েছে।
জঙ্গি ইকবালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ডিজি বলেন, জঙ্গি ইকবাল এইচএসসি পাস। স্কুল ও কলেজে অধ্যায়নরত অবস্থায় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। জঙ্গি ইকবাল ১৯৯৪ সালে ঝিনাইদহের কেসি কলেজ ছাত্র সংসদে ছাত্রদলের নির্বাচিত শ্রেণি প্রতিনিধি ছিল। সে ১৯৯৫ হতে ১৯৯৮ পর্যন্ত মালয়শিয়ায় প্রবাসী কর্মজীবী হিসাবে অবস্থান করে। দেশে ফিরে এসে জঙ্গি ইকবাল আইএসডি ফোন ও অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে। এ সময় সে সর্বহারা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। ২০০১ সালে তার চিন্তাচেতনা ও মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আসে। সে ঝিনাইদহের স্থানীয় এক জঙ্গি সদস্যদের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে (হুজিবি) যোগদান করে।
র্যাব ডিজি আরও বলেন, ইকবাল ২০০৩ সালে মুফতি হান্নান ও অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের সান্নিধ্যে চলে আসে। জঙ্গি প্রশিক্ষণও নেয়। ২০০৮ সালে আগস্ট মাসে মুফতি হান্নানের নির্দেশে ঢাকায় চলে আসে ইকবাল। আশ্রয় নেয় গোপন আস্তানায়। সেখানে হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ অন্যান্য সমমানদের সাথে গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। সে মুফতি হান্নানের সাথে বিভিন্ন স্থানে দলীয় গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করতো। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা সম্পর্কে র্যাবকে ইকবাল জানায়, মুফতি হান্নানের নির্দেশে সে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সরাসরি অংশগ্রহণ করে। মুফতি হান্নান হামলা পরিচালনার জন্য তাকে গ্রেনেড সরবরাহ করেছিল। হামলা চলাকালীন সময়ে সে মঞ্চকে লক্ষ্য করে নিজে গ্রেনেড ছুড়েছিল। ঘটনার পর সে ঝিনাইদহে গমন করে এবং সেখানে আত্মগোপনে অবস্থান করতে থাকে।
র্যাব জঙ্গি ইকবাল হোসেনকে ধরতে একাধিক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। ২০০৮ সালে জঙ্গি ইকবালকে গ্রেফতার করতে ঝিনাইদহে তার নিজ বাড়িতে এবং পরবর্তীতে গাজীপুর ও সাভারসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব। এ সময় আত্মগোপনে থাকাকালীন সে নিরাপত্তাকর্মী, শ্রমিক, রিক্সা মেকানিক ইত্যাদি ছদ্মবেশ ধারণ করেছিল। ২০০৮ সালে দেশ ত্যাগ করে দুর্ধষষ এই জঙ্গি।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান বলেন, ২০০৮ সালে ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ছিল। সেসময় সে নিজ নাম পরিবর্তন করে দেশত্যাগ করে। দেশে ফেরার সময় সে অন্য অবৈধ অভিবাসীর ন্যায় ফেরত আসে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।