Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আধুনিক প্রশাসন গড়ার কারিগর এইচ টি ইমাম

পাকিস্তান আমলের নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির আমূল সংস্কারে মুখ্য ভূমিকা তার

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৬ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের বিপর্যস্ত প্রশাসনব্যবস্থা সচল করে তোলা এবং দেশ পুনর্গঠনের কাজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অন্যান্য সহকর্মী ও মন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়োজিত ছিলেন হোসেন তৌফিক ইমাম। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এইচ টি ইমাম নামে তিনি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাঝে রূপকার হিসেবে পরিচিত। প্রশাসনে পাকিস্তান আমলের পুরাতন নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির আমূল সংস্কারে মুখ্য ভূমিকা পালন করছেন।

মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশ বিপর্যস্ত। সেই স্বাধীন দেশের সাড়ে চার বছরে তিনি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, করপোরেশন ইত্যাদির রূপরেখা তৈরি ছাড়াও পাকিস্তান আমলের পুরোনো নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতির আমূল সংস্কারে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। এখনো করে চলেছেন। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রশাসনে বড় ভূমিকা পালন করছেন। তার মেধার কারণে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বড় ধরনের আন্দোলন করতে পারেননি। যেটা বিএনপি সরকারের আমল ২০০৫ ও ২০০৬ সালে হয়েছিল। বর্তমান সরকাররে আমলে প্রশাসনের কর্মকর্তারা তার প্রচেষ্টার কারণে কিছুই করতে পারেনি। বর্তমান সরকারে বিরুদ্ধে যত ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তের চেষ্টা হয়েছিল- সেগুলো বুদ্ধি-মেধা দিয়ে দমন করেছেন এই উপদেষ্টা।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মো. জাকির হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশকে সচল করে তোলা এবং দেশ পুনর্গঠনের কাজে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে অন্যান্য সহকর্মীদের মতো দায়িত্ব পালন করেছিলেন আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক ইমাম। তিনি আমাদের উত্তরবঙ্গের গর্ব। তিনি আমাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছেন।

ষাটের দশকে পূর্ব-বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা তাকে ক্ষুব্ধ করে। সরকারের উচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থাকায় তার চোখে পাকিস্তান মুসলিম লীগ ও সামরিক প্রশাসকদের শোষণ, বৈষম্য, বঞ্চনার রূপ প্রকট হয়ে ওঠে। একাত্তরের ভয়াল পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদারদের নৃশংসতার সংবাদ পাওয়ার আগেই দেশের সঙ্কটজনক পরিস্থিতির কর্মপন্থা নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সঙ্কট মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন এইচ টি ইমাম।

মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের আহ্বানে পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রশাসনের পদ থেকে মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে যোগদান করেন। এইচ টি ইমাম ১৯৭৫ সালের ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এ পদে ছিলেন। এরপর তাকে বরখাস্ত করে বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্র কারাগারে পাঠায়। ১৯৭৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি কারারুদ্ধ ছিলেন।

হোসেন তৌফিক ইমাম ১৯৩৭ সালের ১৫ জানুয়ারি তারিখে টাঙ্গাইল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম তাফসির উদ্দীন আহমেদ বিএ.বিএল এবং মাতা মরহুমা তাহসিন খাতুন। শিক্ষা জীবনের শুরু রাজশাহীতে এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া ও কলকাতায়। ছাত্রজীবনে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ডাকসুর কমনরুম সেক্রেটারি ছিলেন। অর্থনীতির এ ছাত্র কর্মজীবনের শুরুতে রাজশাহী কলেজে প্রভাষক হিসেবে প্রায় দুই বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান দখল করে সিএসপি হন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়াও তিনি রাজশাহী জেলার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, নওগাঁর এসডিও, ঢাকার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন। পাকিস্তানের তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মন্ত্রী খাজা শাহাবুদ্দীনের একান্ত সচিব, পূর্ব-পাকিস্তান সরকারের অর্থ বিভাগের উপসচিব, সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব, প্ল্যানিং ডিভিশনের সচিব, প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য, পিএটিসির প্রকল্প পরিচালক, যমুনা বহুমুখী সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ সরকারের শাসনামলে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ পরিস্থিতির ভেতর দিয়েই যেতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত তীব্রতর হয়েছে ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠানের পর। এর সূচনা হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তির মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে নানাবিধ অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকারের পথচলা কণ্টকাকীর্ণ করার চেষ্টা হয়েছে। শেখ হাসিনার এ জটিল দিনগুলোতে নানা সময় পরামর্শ দিয়েছেন হোসেন তৌফিক ইমাম। কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন।

আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইচ টি ইমামকে জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও এইচ টি ইমামকে তার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। এছাড়া ২০০৮, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচন উপলক্ষে গঠিত আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৬ সালে প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে। পরের বছর অর্থাৎ ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি এ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। ওই একতরফা নির্বাচন আয়োজনের প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগের থিংকট্যাংক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এইচ টি ইমাম। শেষ পর্যন্ত ফখরুদ্দীন আহমদকে নতুন প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল ঘোষণা করেন।



 

Show all comments
  • আরমান ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৪ এএম says : 0
    দেশ ও তার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো
    Total Reply(0) Reply
  • হাসান সোহাগ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৫ এএম says : 0
    আশা করি এভাবেই আমৃত্যু দেশের জন্য কাজ করে যাবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • নওরিন ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৫ এএম says : 0
    লেখাটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম
    Total Reply(0) Reply
  • গোলাম মোস্তফা ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৭ এএম says : 0
    শেখ হাসিনার জটিল দিনগুলোতে নানা সময় পরামর্শ দিয়েছেন হোসেন তৌফিক ইমাম। কার্যক্রম পরিচালনায় সহযোগিতা করেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • পলাশ ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:০৮ এএম says : 0
    এরকম মানুষের কথাগুলো তুলে ধরায় ইনকিলাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এইচ টি ইমাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ