বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বুঝার বয়স থেকে অবহেলা আর করুণা তার নিত্যসঙ্গী। ফেলে আসা জীবনে জুটেছে তাচ্ছিল্য আর তাকে দেখে করুণায় আদ্র হয়েছেন কেউ কেউ, হয়তো অন্য কোনো কারণে। গরীবের ঘরে জন্ম তাই পড়ালেখা করাও সম্ভব হয়নি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে মানুষের লোলপদৃষ্টি। এ যেন যন্ত্রণার এক করুণ কাহিনী। তাই বড় বোনের হাত ধরে চলে এসেছে গ্রাম ছেড়ে রাজধানী ঢাকায়।
সিনেমা কিংবা নাটকে এমন দৃশ্য হর হামেশায় দেখা মেলে। কিন্তু বাস্তবতা আর পর্দার দৃশ্য একেবারেই যে আলাদা। বাস্তবে না দেখলে তা বুঝা যায় না। পেটের দায়ে আর অভিনয়ের মধ্যে অনেক ফারাক তা বুঝিয়ে দিলো নুরী।
তখন ঘড়ির কাটায় রাত দুইটা। ২১’র প্রথম প্রহর শেষ হতে চললো। মানুষের কোলাহল তেমন নেই। হাজার খানেক মানুষের জটলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসটি জুড়ে। এলইডি লাইটের আলো ঢেউ তুলছে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। সেই আলোতেই নুরীর ছোটাছুটি। বড় বোনের সাথেই এসেছেন চা বিক্রি করতে। দেখেই মনে হয় তন্বী-তরুণী। গায়ের গঠনটাও বেশ ভালো। মায়াবী চেহারা। মিষ্টি হাসি লেগেই আছে মুখে। কিন্তু সে সব এড়িয়ে তার চোখ সারাক্ষণ খুঁজছে চায়ের ক্রেতাকে। শীতের রাত, হিম হিম ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। তাই তার চায়েরও বেশ কদর। আগ্রহ দেখাচ্ছেন তরুণরাও।
পাশ দিয়ে হেঁটে যেতেই গুণগুণিয়ে নুরী শব্দ করে, মামা চা খাবেন। রং চা, দুধ চা দুইটায় আছে। ঠাণ্ডার মধ্যে ভালো লাগবে। তার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম, হাসিল আড়ালে লুকিয়ে আছে এমন এক যন্ত্রণা যা সে কাউকে বলতে পারে না। তাই আগ্রহ দেখালাম কথা বলার আর চা খাওয়া। অতএব তার ডাকে সাড়া দিলাম।
চা খাওয়ার ফাঁকে কথা হয় তার সাথে। জানতে চাইলাম, চা কত করে? নুরী মুচকি হেসে জানিয়ে দিল, রং না দুধ চা। বাসা থেকে বানিয়ে এনেছি। চা ভালো। চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়েই নুরী ছুটলেন অন্য ক্রেতার দিকে। বললাম, টাকা নিয়ে যাও। হাতের ইশারায় জানালো, আসছি।
লাজুক মেয়ে নুরী ফিরে আসলো কয়েক মিনিট পরেই। বসার যে তার সময় নেই। বড্ড ব্যস্ত। রাতেই মধ্যে বিক্রি করতে হবে ফ্ল্যাক্সভর্তি চা। তবুও কয়েকটা কথা হলো তার সাথে। আর তাতে বুঝলাম তার জীবন কেমন।
সে জানালো, অন্য সময় দিনেই বেলায় পার্ক ও ক্যাম্পাসে চা বিক্রি করে। কিন্তু আজ ২১’র রাত। তাই মধ্যরাতে ফ্ল্যাক্স হাতে নেমে পড়েছেন চা বিক্রিতে। বিক্রিও বেশ ভালো। ৫ টাকার চা ১০ টাকা। আর ১০ টাকারটা ২০ টাকায় বিক্রি করছে।
কথায় কথায় বললো, ৩০০ টাকার চায়ে আজ লাভ হয়েছে ৪০০ টাকা। এত লাভ বলতেই সে বলে, মামা অনেক ঝামেলা। দেখেন না কয়েকজনকে এক সাথে থাকতে হয়। একটু নির্জন বা অন্ধকারে গেলে নানা ধরণের কথা শুনতে হয়। পোলাপাইন গুলো কেমন করে তাকাই আর প্রস্তাব দেয়। পেটের দায়ে পথে পথে ঘুরি। কিন্তু মাঝে মধ্যে...
আমার সামনেই একজন তার থেকে চা নিয়ে হুট করে বলে, খাবো না। প্রশ্ন করলাম, খাবেন না কেন? উত্তরটা নুরীই দিয়ে দিলো। মামা, কিছু কয়েন না। আমার লগে মজা লয়। আমি তো দেখতে অত খারাপ না। তাই অনেকে তাকিয়ে দেখে।
কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইলাম, ঘর-সংসার আছে। প্রশ্ন শুনেই চিরায়িত বাঙালী নারীর মত লজ্জায় রাঙা হয়ে যায় তার মুখোচ্ছবি। কিন্তু হঠাৎই মিলিয়ে যায় নুরীর মুখের সব চাঞ্চল্যতা। অতি কষ্টে বলে ফেলে, গরীবের কপালে সংসার সয় না। সবাই শুধু মজা নিতে চাই। কেউ ধরে রাখতে চাই না। বাবা-মা নাই, বড় বোন দয়া করে তার কাছে রাখছে। তই ইচ্ছে তো আছে। কিন্তু আগের জামাইটাও ঝামেলা করে। তালাকও দেয় না ঘরেও তুলে না। বিপদে আছি। হেরে আমার লগে মানাই না মামা বুড়া বেটা। মা-বাপে জোর করে বিয়া দিয়ে তার লগে।
ডাক পড়ে বড় বোনের। আয়, আয় পুলিশ ব্যারিগেট তুলে নিয়েছে। শহিদ মিনারের দিকে যায়। বাড়তি ক্রেতার আশায় শত মানুষের ভীড়ে চায়ের ফ্ল্যাক্স হাতে মিলিয়ে যায় নুরী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।