Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষত-বিক্ষত রামগতি শুষ্ক মৌসুমেও মেঘনার ভাঙন অব্যাহত

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:১৩ পিএম

শুষ্ক মৌসুমেও মেঘনার তীব্র ভাঙনে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার কয়েকটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে করালগ্রাসী মেঘনা গিলে খাচ্ছে ওইসব গ্রামের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা। ভাঙনকবলিত গ্রামগুলো হচ্ছে-উপজেলার আসলী পাড়া,রামগতি বাজার,রামদয়াল ও কমলনগর উপজেলার চরকালকিনি ইউনিয়নের নাছিরগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ, সাহেবেরহাট ইউনিয়নের কাদির পণ্ডিতেরহাট, চরফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া ফলকন এবং পাটারীরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ চরফলকন।বর্তমানে শুষ্ক মৌসুমেও ভাংগনের তীব্রতা ভয়ংকর হয়ে উঠেছে।এতে করে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে ওইসব গ্রামের বাসিন্দাদের। যে কারণে এ শুষ্ক মৌসুমেই তারা ভাঙন রোধে প্রস্তাবিত প্রকল্পের অনুমোদনসহ অর্থ ছাড়ের দাবি জানান।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,শুষ্ক মৌসুমেও মেঘনা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে তীব্র ভাঙন চলছে। ভাঙনের মুখে পড়ে নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বাড়িঘর, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট ও পোল-কালভার্টসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭০ সালের দিকে চরকালকিনি ও চরফলকন ইউনিয়ন দু’টিতে মেঘনার ভাঙন শুরু হয়।

দীর্ঘ পাঁচ দশকে মেঘনার এ অব্যাহত ভাঙনে মতিরহাট,চরকাঁকড়া,কাদির পন্ডিতেরহাট,
চরসামছুদ্দিন ও তালতলি,সাহেবেরহাট,হাজিগন্জ, চরজগবন্ধু, মাতব্বরনগর এবং চরফলকন ইউনিয়নের চরকটোরিয়া, চরকৃষ্ণপুর, মাতব্বরচর ও পাতারচর এবং পাটারীরহাট ইউনিয়নের উরিরচর, পশ্চিম চরফলকন ও ডিএস ফলকনসহ প্রায় ১৪ টি গ্রাম সম্পূর্ণ মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে করে ওইসব গ্রামগুলোসহ বর্তমানে ভাঙনকবলিত পাঁচটি গ্রামের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এদের বেশির ভাগই পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালীর সদর, সুবর্ণচর, লক্ষ্মীপুর সদর ও রামগতি উপজেলার চরবাদাম, চরপোড়াগাছা ও কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর নির্মাণ করে কোনোরকমে বসবাস করছেন। বাকিরা আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের উপর। যাদের অধিকাংশেরই এখন দিন কাটে অর্ধাহার ও অনাহারে।

জানা গেছে, গত ৫০ বছরের ভাঙনে মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়েছে এসব এলাকার প্রায় ১৫ হাজার একর ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি ১৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, আশ্রয়ণ কেন্দ্রের পাঁচটি কলোনি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এবং কয়েক কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়কসহ অসংখ্য মসজিদ, বিভিন্ন স্থাপনা ও হাটবাজার।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেঘনার এ ভাঙনরোধে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার উদ্যোগ নেয়া হলেও তা যেমন সফল হয়নি; তেমনি সরকারিভাবে নেয়া উদ্যোগও দেখছে না সফলতার মুখ। ২০০৯ সালে প্রথমবার মহাজোট সরকার গঠনের পর আওয়ামীলীগ নেতা এডভোকেট মাহবুবুর রহমানের প্রচেষ্টায় ‘মেঘনার ভাঙন থেকে রামগতি ও কমলনগরকে রক্ষায় নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির আওতায় ২০১৪ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রথম পর্যায়ের ওই অর্থ দিয়ে কমলনগর উপজেলার মাতব্বরহাট এলাকায় এক কিলোমিটার ও রামগতি উপজেলায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় ব্লকবাঁধ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কমলনগর উপজেলার অপর ১২ কিলোমিটার এলাকা অরক্ষিত থেকে যায়। ভাঙনের তাণ্ডবলীলা চলতে থাকায় গেল বর্ষা মৌসুমে লুধুয়া ফলকন এলাকায় আপদকালীন কাজের অংশ হিসেবে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়। কিন্তু ভাঙনের তীব্রতায় তাও নদীতে বিলীন হওয়ার পথে। এখন তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের অর্থ ছাড় না হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন প্রতিরোধে যথাযথ উদ্যোগ নিতে পারছে না। যে কারণে এলাকাবাসী একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পটি অনুমোদন ও অর্থ ছাড়সহ দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।

স্থানীয়দের অভিমত,বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে মেঘনার ভাঙন রোধে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু না হলে এবং ভাঙন এভাবে অব্যাহত থাকলে আগামী দু’বছরের মধ্যে রামগতি-কমলনগর উপজেলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফারুক আহমেদ জানান, মেঘনার ভাঙনরোধে কমলনগর ও রামগতি উপজেলার তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের নতুন ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়েছে। বর্তমানে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে থাকা নতুন প্রস্তাবনাটি অনুমোদন হলে ভাঙনরোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে মেঘনার ভাঙনে রামগতি-কমলনগর উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যক্তিগত অর্থে বাঁধ নির্মাণসহ তিনি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করেছেন।২য় পর্যায়ে একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে এটি অনুমোদন হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভাঙন

২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ