Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রত্যেক রাসুলকেই স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছেন

জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৪ এএম

প্রত্যেক জাতির ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে তাদের স্বীয় মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। সব ভাষাই মহান আল্লাহর দান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন। গতকাল রাজধানীসহ বিভিন্ন মসজিদে জুমার বয়ানে পেশ ইমামরা এসব কথা বলেন। বিভিন্ন মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম এহসানুল হক জিলানী জুমার বয়ানে বলেন, পবিত্র কোরআনের বাণী থেকে মাতৃভাষা চর্চার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। মহান আল্লাহ যুগে যুগে যেসব অঞ্চলে নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন তাঁদেরকে সেই অঞ্চলের মানুষের ভাষাভাষী করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আমি প্রত্যেক রাসুলকেই তার স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে পরিষ্কাভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য, অতঃপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা ইবরাহীম আয়াত-৪)। পেশ ইমাম বলেন, প্রত্যেক জাতির স্বীয় মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম। তিনি বলেন, আমাদের মাতৃভাষা বাংলার চর্চা ও অনুশীলন ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, প্রধান চারটি আসমানি কিতাবের মধ্যে হযরত মূসা (আ.)-এর প্রতি ‘তাওরাত’ হিব্রু ভাষায়, হযরত ঈসা (আ.) প্রতি ‘ইঞ্জিল’ সুরিয়ান ভাষায়, হযরত দাউদ (আ.)-এর প্রতি ‘যাবুর’ ইউনানি ভাষায় এবং বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি ‘আল-কোরআন’ আরবি ভাষায় নাযিল হয়। রাসুল (সা.)-এর মাতৃভাষা ছিল আরবি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাতৃভাষার কদর করার তৌফিক দান করুন। আমীন!

নগরীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্স-এর পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মাহবুবুর রহমান গতকাল খুৎবার বয়ানে বলেন, রজব মাসের আজ প্রথম জুমা। রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসকে রমজানের প্রস্তুতি মাস হিসেবে ঘোষণা করেছেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হে আল্লাহ রজব এবং শাবান মাসকে আমাদের জন্য বরকতময় করুন এবং আমাকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন’। রাসুল (সা.) রজব ও শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা এবং এবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকতেন। এ মাসে আল্লাহপাক ফেরেস্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঈমানদার বান্দা-বান্দিদের নেক লিখতে থাকে, যাতে তারা আগামী রমজানে গুনাহমুক্ত জীবন হাসিল এবং পরিপূর্ণ মুত্তাকি হতে পারে। এ মাসে বেশি বেশি নফল রোজা এবং নফল এবাদতে মশগুল থাকতে হবে। পেশ ইমাম বলেন, আল্লাহ মানুষকে যত নেয়ামত দিয়েছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কথা বলার ক্ষমতা বা মাতৃভাষা। ২১ ফেব্রুয়ারি যারা আমাদের মাতৃভাষার জন্য শহীদ হয়েছেন তাদের রূহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া করতে হবে।

আল্লাহ ইরশাদ করেন, তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আকাশমন্ডলী, পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। এতে জ্ঞানীদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে। সূরা রূম (আয়াত নং ২২)। পেশ ইমাম বলেন, বাংলা ভাষার চর্চার পাশাপাশি জান্নাতের ভাষা আরবিকে গুরুত্ব দিয়ে শিখতে হবে।

ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম জুমার বয়ানে বলেন, রজব মাস নিষিদ্ধ মাসসমূহের মধ্যে একটি মাস। মহান আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেছেন: যেদিন থেকে আসমান যমীন সৃষ্টি করা হয়েছে সেদিন থেকে আল্লাহ তায়ালার কিতাবে মাসের সংখ্যা ১২টি। এর মধ্যে চারটি মাস হলো নিষিদ্ধ মাস। তোমরা এই মাসসমূহের মধ্যে নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না। যেহেতু রজব মাস সেই হারাম মাস সময়ের মধ্যে অন্যতম। তাই এই মাসে গুনাহ থেকে পুতপবিত্র থাকা একান্ত প্রয়োজন।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেছেন, জুলুম-অত্যাচার করা সবসময়ই গর্হিত কাজ। তবে এই হারাম মাসসমূহে আরো বেশি গর্হিত। এই মাসসমূহ নেক আমলের সওয়াব অনেক বেশি আবার গুনাহের শাস্তিও বেশি। তাই রজব মাস এবাদত-বন্দেগি ও নেক আমল করার মাস। আরব দেশে জাহেলি যুগ থেকেই এই মাসকে কাফির-মুশরিকরা ও অনেক সম্মান দিয়ে আসত। এ মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ ও কোনো ধরনের পাপকাজকে তারা খুবই খারাপ ভাবতো। জাহেলি যুগের মানুষেরা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে জুলুম নির্যাতন থেকে এ মাসে বিরত থাকত। পেশ ইমাম বলেন, তাছাড়া এ মাসের আরেকটি বড় মর্যাদা রয়েছে। তা হলো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজ এ মাসে সংঘটিত হয়েছিল। বিধায় এই মাসে বেশি বেশি নফল ইবাদত বন্দেগি করা, কোরআন তেলাওয়াত, রোজা রাখা ইত্যাদি এবাদত-বন্দেগি বেশি করা একজন মুমিন মুসলমানের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

রাজশাহী শহরস্থ সাহেব বাজার বড় মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মুফতি মাওলানা আব্দুল গণি জুমার বয়ানে বলেন, গতকাল ৬ রজব হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী (রহ.) ওফাত দিবস ছিল। খাজা মঈনুদ্দিন চিশতী বাল্যকালেই তার পিতাকে হারান। পরে তিনি খাজা ওসমান হারুনী (রহ.)-এর কাছে বায়াত গ্রহণ করে আধ্যাত্মিক শক্তি লাভ করেন। তার মহানুভবতায় ভারত উপমহাদেশে লাখ লাখ মানুষ ইসলামের ছায়াতলে সমবেত হয়েছিলেন। পেশ ইমাম বলেন, আল্লাহর ওলীদের শানে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ’ তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোন নিশ্চয় আল্লাহর ওলীদের জন্য কোনো ভয় নেই এবং চিন্তাও নেই। তাদের জন্য সুসংবাদ দুনিয়ায় এবং আখেরাতে। আল্লাহর ওলী কিভাবে হওয়া যাবে এসর্ম্পকে আল্লাহ বলেন, প্রথমত তারা মুমিন হবে এবং যারা আল্লাহকে ভয় করে চলবে। আল্লাহর ভয় অন্তরে পোষণ করে পাপাচার, অন্যায়, অনাচার থেকে দূরে থাকবে।

ভোলা জেলার নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা এ কে এম মোশাররফ হোসাইন গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই। তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় এবং সমস্ত রকমের কুপ্রবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকার প্রার্থনা করি। এবাদতের মালিক এক মাত্র আল্লাহ এবং তিনিই একমাত্র সাহায্যকারী। তিনি বলেন, আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন কেউ তাকে গোমরাহ করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন কেউ তাকে হেদায়েত দিতে পারে না। খতিব বলেন, রজব মাস বরকতময় মাস। এ মাস মাহে রমজানের প্রস্তুতির মাস। রাসুল (সা.) রজব মাস এলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন ‘হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে রজব ও শাবান এর বরকত এবং রমজান পর্যন্ত নেক হায়াত দান করুন।

ঢাকার উত্তরা সেক্টর-৩ মসজিদ আল মাগফিরাহ এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালার বিশেষ নিয়ামত হলো মানুষের ভাষা-জ্ঞান ও ভাব-প্রকাশের ক্ষমতা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, পরম করুনাময় আল্লাহ। তিনিই শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন। তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ। তিনিই তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন ভাষা-জ্ঞান। (সূরা আর রহমান, আয়াত ১-৪)।

পেশ ইমাম বলেন, ইসলামের এই মূলনীতির ভিত্তিতে সকল মুসলিম জনগোষ্ঠি মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে। এমনকি মাতৃভাষাকে ইসলামী সাহিত্য কর্মে সমৃদ্ধ করে। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রæয়ারি মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানী শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে অনেকে শহীদ হন এবং আরো অনেকে আহত হন। পেশ ইমাম বলেন, হদীসের ভাষ্যানুযায়ী অধিকার আদায় ও ভাষা আন্দোলনের নিহতগণ শহীদ। এ সকল শহীদদের প্রতি আমাদের নৈতিক ও ঈমানী দায়িত্ব হচ্ছে, তাদের প্রতি মুখে ও কলমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, তাঁদের জন্য আখেরাতে মর্যাদা বৃদ্ধির দোয়া করা এবং তাঁদের স্মৃতিস্বরূপ ছদকায়ে জারিয়া হিসেবে মসজিদ মাদরাসা, এতিম খানা ও জনহিতকর প্রতিষ্ঠান তৈরি করা। বিজাতীয় অপসংস্কৃতির স্পর্শ হতে তাঁদেরকে নিরাপদে রাখা। মাতৃভাষার সুমহান মর্যাদা অক্ষুণœ রাখার দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়া। ব্যক্তি জীবনে শুদ্ধ বাংলা ব্যবহার করা ও রাষ্ট্রীয় কর্মে বাংলা ভাষা প্রাধান্য দেয়া। আল্লাহ আমাদেরকে ছহী বুঝ দান করুন। আমীন!



 

Show all comments
  • Anwar+Hossain ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ পিএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে ছহী বুঝ দান করুন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জুমা

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ