Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বার্সার স্বপ্নে এমবাপের হানা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪১ এএম

চোটের কারণে ছিলেন না নেইমার, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। দলের সেরা দুই তারকার অনুপস্থিতির সুযোগটি ভালোভাবেই নিলেন কিলিয়ান এমবাপে। ফরাসি তারকা করলেন দুর্দান্ত এক হাটট্রিক। তাতে বার্সেলোনাকে তাদেরই মাছে উড়িয়ে দিয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল পিএসজি।
গতপরশু রাতে ক্যাম্প ন্যুতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলর প্রথম লেগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতেছে ফরাসি চ্যাম্পিয়নরা। এমবাপের হ্যাটট্রিকের সঙ্গে অপর গোলটি মেইজে কিনের। বার্সার হয়ে পেনাল্টি থেকে একমাত্র গোলটি করেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। আসরে ফুটবল জাদুকরের এটি চতুর্থ গোল। চারটিই পেনাল্টি থেকে। মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের গোল হলো ২০টি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে এমবাপের পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা ছিল ঢের-সব হতাশা যেন এক ম্যাচেই ঝেড়ে ফেললেন তিনি। গতিতে প্রতিপক্ষের রক্ষণ কাঁপিয়ে উপহার দিলেন স্মরণীয় এক পারফরম্যান্স। প্রায় দুই বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে গোল পেলেন এমবাপে। বার্সেলোনা ম্যাচের আগে পিএসজির জার্সিতে নকআউট পর্বের আগের ৯ ম্যাচে তার গোল ছিল মাত্র একটি। সংখ্যাটা বেড়ে ১০ ম্যাচে এখন চারটি।
চার বছর আগে এই আঙিনায় হয়েছিল ভরাডুবি। এবারও প্রথমে গোল হজম করে বসে তারা। সেখান থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল মাউরিসিও পচেত্তিনোর দল। একদিন আগেও সব মিলিয়ে বার্সেলোনার মাঠে মাত্র একটি জয় ছিল পচেত্তিনোর। কাতালানদের বিপক্ষে তাকে আরেকটি জয় উপহার দেওয়ার আশ্বাস ম্যাচের আগেই দিয়েছিলেন এমবাপে। দুর্দান্ত জয়ের পর সেই গল্প শোনালেন বছরের শুরুতে পিএসজির দায়িত্ব নেওয়া পচেত্তিনো, ‘গতকাল আমাদের অনুশীলন সেশনে সে (এমবাপে) আমার কাছে জানতে চাইল, কাম্প নউয়ে আমি কতবার জিতেছি। বলেছিলাম, একবার, এস্পনিওলের হয়ে। তখন সে আমাকে বলল, আজ রাতে আমি দ্বিতীয়বারের মতো জিতব।’
ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার মাঠে এর আগে সবশেষ হ্যাটট্রিক করেছিলেন আন্দ্রে শেভচেঙ্কো, ১৯৯৭ সালে ডায়নামো কিয়েভের হয়ে। এমবাপের তিনটি গোলই ছিল দুর্দান্ত। তবে দলকে সমতায় ফেরানো গোলটার গুরুত্ব আলাদাভাবে তুলে ধরেন টটেনহ্যাম হটস্পারের সাবেক কোচ, ‘নিশ্চিতভাবেই কিলিয়ান একজন গ্রেট ফুটবলার। তিন গোল দিয়ে সে তা প্রমাণ করেছে। রক্ষণেও অবদান রেখে বুঝিয়েছে দায়িত্বের প্রতি সে কতটা সচেতন। তিন গোলেই সে ছিল দুর্দান্ত। বার্সেলোনা যখন আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছিল তখন তার ভূমিকা ছিল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।’
২০১৬-১৭ আসরে শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ঘরের মাঠে ৪-০ গোলে জিতেছিল পিএসজি। কিন্তু ফিরতি পর্বে ক্যাম্প ন্যুয়ে এসে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৬-১ ব্যবধানে। এবারের লড়াইও দুই লেগের হওয়ায় প্রতিশোধের পুরোটা অবশ্য এখনও বাকি; তবে দুর্দান্ত এই জয়ে পুরনো ক্ষতে নিশ্চয় কিছুটা প্রলেপ পড়ল পিএসজির।
এত বড় ব্যবধানে হারের পর ফিরতি পর্বে প্রতিপক্ষের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানো ভীষণ কঠিন। অসম্ভব প্রায়। তবে দুরূহ কাজকে কীভাবে সম্ভব করা যায়, তা বার্সেলোনা ভালো করেই জানে। সেই চ্যালেঞ্জে আগামী ১০ মার্চ পিএসজি মাঠে নামবে রোনাল্ড কোমানের দল। কিন্তু এবার আর এমন কোনো সুযোগ দেখছেন না দলের প্রধান কোচ। প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে দারুণ কিছু করা কঠিনই দলটির জন্য। তাই বাস্তবতা মেনে দলের কোমান বললেন, ‘আমাদের অবশ্যই খেলে যেতে হবে। আমি মিথ্যে বলতে পারি, কিন্তু ৪-১ অনেক কঠিন। আমাদের তেমন কোনো সুযোগ দেখছি না।’
এদিকে রোমাঞ্চ ছড়ালো রাতের অপর ম্যাচটিও। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দুটি ভুল করে বসল লাইপজিগ। সুযোগ পেয়ে দারুণভাবে কাজে লাগাল লিভারপুল। জার্মান দলটিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। ‘নিরপেক্ষ ভেন্যু’ বুদাপেস্টের পুসকাস অ্যারেনায় শেষ ষোলোর প্রথম লেগে ২-০ ব্যবধানে জিতেছে ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা। একটি করে গোল করেন আক্রমণভাগের দুই তারকা মোহামেদ সালাহ ও সাদিও মানে। এটি নিয়ে চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৪ গোল করা হয়ে গেল সালাহর। এক রবের্ত লেভান্দোভস্কি ছাড়া আর কেউ এই মিসরীয় উইঙ্গারের চেয়ে বেশি গোল করেননি।
ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল মূলত লাইপজিগের মাঠ রেড বুল অ্যারেনায়। কিন্তু নতুন করে করোনাভাইরাস জোরালো আঘাত হানায় গতকাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিকদের প্রবেশে জার্মানি নিষেধাজ্ঞা জারি করায় দু’দলের সম্মতিতেই ম্যাচটি সরিয়ে নেওয়া হয় হাঙ্গেরিতে। প্রিমিয়ার লিগে শিরোপা ধরে রাখার অভিযানে শেষ তিন ম্যাচে হেরে পয়েন্ট টেবিলে ছয় নম্বরে নেমে গেছে লিভারপুল। শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে ১৩ পয়েন্টে। এমন কঠিন সময়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এই জয় নিশ্চিতভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে অল রেড শিবিরে। দ্বিতীয় লেগটাও এমন নিরপেক্ষ কোনো মাঠেই হবে। কিন্তু কোন মাঠে, উয়েফা এখনো নিশ্চিত করেনি। যেখানেই হোক, লিভারপুল একটু কম চিন্তা নিয়েই সেখানে খেলতে থাকবে। সঙ্গে থাকবে দুই গোলে এগিয়ে থাকার স্বস্তি।
কিছুদিন আগেই মা এলিসাবেথ ক্লপ মারা গিয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ের গ্যাঁড়াকলে পড়ে মাকে শেষবারের জন্য দেখতে জার্মানিতে যেতে পারেননি ক্লপ। তার ওপর দলের ভগ্নদশা তার মানসিক অবস্থা খারাপই করে দিয়েছিল। এই জয়ে ‘গুরু’কে অন্তত একটু হলেও স্বস্তি দিতে পারলেন সালাহ আর মানে!



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এমবাপের-হানা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ