Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ আসামির মৃত্যুদন্ড একজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলার রায় মত প্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখতে অভিজিৎ হত্যা : রায়ের পর্যবেক্ষণ

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে এক আসামিকে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। বিচারক অভিজিৎ হত্যা মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে মত প্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশে অভিযুক্ত আসামিদের অভিন্ন অভিপ্রায় ছিল বিজ্ঞান মনস্ক ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ৫আসামি হলেন- আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান ও বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, জঙ্গিনেতা আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন ও আরাফাত রহমান ওরফে সিয়াম। তাদের মধ্যে পলাতক জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন। যাবজ্জীবন কারাদন্ড পেয়েছেন শফিউর রহমান ফারাবী। তিনি কারাগারে আছেন। পাশাপাশি তার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছর কারাদন্ড ভোগ করতে হবে বলে আদেশ দিয়েছে আদালত। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালত এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সকাল ১০টার দিকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় আসামিদের। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাদের হাজতখানা থেকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হয়।

পুলিশের অপরাধ ও তথ্য প্রসিকিউশন বিভাগের ডিসি জাফর আহমেদ বলেন, রায়কে ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিৎকে। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

রায় ঘোষণার পর আসামি পক্ষের আইনজীবী খাইরুল ইসলাম লিটন ও নজরুল ইসলাম বলেন, রায়ে আমরা অসন্তুষ্ট হয়েছি, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো, আপিল করবো। আনসারুল্লাহ টিমের সঙ্গে আসামিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এটা রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আনসারুল্লাহ টিমের সাথে আসামিদের কোন প্রকার সংশ্লিষ্ট ছিলোনা। আদালতে কোন আসামির বিরুদ্ধে এ কথা বলেনি। সাক্ষীরা কেউ বলেনি তারা হত্যা করেছে। প্রত্যক্ষ কোনো সাক্ষী নেই। মামলাটিতে ম্যাজিস্ট্রেট, চিকিৎসকদের সাক্ষী করা হয়নি। শুধু মাত্র তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদনে উপর ভিত্তি করে সাজা দেওয়া হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আরও বলেন, আসামি শফিউর রহমানের ফারাবীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। শুধু মাত্র তিনি ফেসবুকে এ বিষয়ে লেখালেখি করেছেন বলে। এর বাইরে তিনি কিছু করেননি।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু ও গোলাম ছারোয়ার খান জাকির বলেন, রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট হয়েছে। আসামিদের অপরাধ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।

বিচারক পর্যবেক্ষণে বলেন, বাংলা একাডেমির বইমেলায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের আড্ডায় অংশ গ্রহণ করে ফেরার পথে আক্রমণের শিকার হন অভিজিৎ। স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশের জন্য অভিজিৎ রায়কে নিজের জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়। অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্য হল জননিরাপত্তা বিঘিœনত করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ এবং নিরুৎসাহিত করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশ না করতে পারে।

বিচারক আরও বলেন, অভিজিৎ রায় হত্যায় অংশ গ্রহণকারী অভিযুক্ত আসামিরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাহিরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে এবং বিজ্ঞান মনস্ক ও মুক্তমনা লেখকরা স্বাধীনভাবে লিখতে এবং মতামত প্রকাশ করতে সাহস পাবে না। কাজেই এ আসামিরা কোনো সহানুভূতি পেতে পারে না। আসামিদের সাজা দিলে অন্যরা ভবিষ্যতে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে ভয় পাবে এবং নিরুসাহিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যুদন্ড

১৮ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ