নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
কেতাবি নাম মুমিনুল হক। প্রিয়জনরা ডাকেন সৌরভ নামে। সেই তালিকায় আছে পরিবার, বন্ধু, সতীর্থ থেকে শুরু করে সাংবাদিক সমাজের মানুষও। কারণটিও আর অজানা নয়। সৌরভ ছড়ানো ব্যাটিংয়ে এরই মধ্যে যে পেয়ে গেছেন দেশের লিটল মাস্টার খেতাব। হয়েছেন অনেক রেকর্ডের সাক্ষী, দলও পেয়েছে বেশ কিছু জয়ের মহেন্দ্রক্ষণ। গতকাল রেকর্ডের মালা পড়িয়ে আরেকটি মাইলফলক ছুঁলেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক।
জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে সব মিলিয়ে খেলেছেন ১০ টেস্ট। তার ৮টিতেই পেয়েছেন ফিফটির স্বাদ। আগের ৭ বারের ৬টিকেই রূপ দিয়েছিলেন সেঞ্চুরিতে। এবার সেটিকে সপ্তমে নিয়ে গেলেন মুমিনুল। সাগরিকায় অধিনায়কের সৌরভ ছড়ানো ইনিংসের পর বল হাতে রঙ ছড়িয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্টে তাতে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ।
তবে দিনটি একান্তই নিজের করে নিয়েছে চট্টগ্রামেরই (কক্সবাজার) ছেলে সৌরভ। চতুর্থ দিন লাঞ্চ বিরতি থেকে ফিরেই টেস্টে নিজের দশম শতকের দেখা পান মুমিনুল। মুগ্ধতা ছড়ানো ব্যাটিংয়ে স্পর্ষ করেন জাদুকরী তিন অঙ্ক। বাংলাদেশের হয়ে এই প্রথম সেঞ্চুরি সংখ্যায় দুই অঙ্ক ছুঁতে পারলেন কোনো ব্যাটসম্যান। ৯ সেঞ্চুরি নিয়ে এতদিন যৌথভাবে শীর্ষে থাকা তামিম ইকবালের অবস্থান তালিকায় এখন দুইয়ে।
এই মাঠে প্রথম ৬ বার ফিফটি ছুঁয়ে প্রতিটিকেই সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছিলেন মুমিনুল। পারেননি শুধু এখানকার সবশেষ টেস্টে। সেই ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশের হার যেমন ছিল হতাশার, তেমনি বিস্ময় ছিল মুমিনুলের ৫২ রানে ফেরা। সেটি যে কেবলই বিচ্ছিন্ন কিছু, মুমিনুল প্রমাণ করে দিলেন এবার।
৩১ রান নিয়ে গতকাল দিন শুরু করেছিলেন মুমিনুল। দিনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই দুর্দান্ত এক অন ড্রাইভে বাউন্ডারি মারেন শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে। পরে কেমার রোচকে বাউন্ডারি মারেন র্যাম্প শটে। গ্যাব্রিয়েল তার জন্য শরীর তাক করে শর্ট বলের কৌশল নেন। তাতে লাভ হয়নি কোনো। পরে দুই প্রান্তে স্পিনার দিয়েও বেঁধে রাখা যায়নি তাকে। ৮৪ বলে তিনি স্পর্শ করেন ফিফটি। দিনের শুরুতে মুশফিকুর রহিম বিদায় নিলেও লিটন দাসের সঙ্গে মিলে মুমিনুল এগিয়ে নেন দলকে। সেঞ্চুরি করতে লাগে ১৭৩ বল, তার ক্যারিয়ারের যা মন্থরতম সেঞ্চুরি। শতরানে বাউন্ডারি ছিল ৯টি। গ্যাব্রিয়েলের বলে একটি বাউন্ডারি তিন হাজার রান পূর্ণ হয় তার। বাংলাদেশের হয়ে দ্রæততম ৩ হাজার রানের রেকর্ডে স্পর্শ করেন তামিমকে (৭৬ ইনিংস)। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে তিন হাজার বা এর চেয়ে বেশি রান ছিল চার ক্রিকেটারের। তারা হলেন হাবিবুল বাশার, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে তাদের সঙ্গী হলেন বাঁহাতি তারকা মুমিনুল। প্রিয় মাঠে সপ্তম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়ে মুমিনুল সাজঘরে ফেরেন ১১৫ রানে। লিড দ্রুত বাড়ানোর চেষ্টায় উইন্ডিজ পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি আউট হন। ডিপ স্কয়ার লেগে তার ক্যাচ নেন কেমার রোচ। ১৮২ বলের ইনিংসে তিনি বাউন্ডারি মারেন ১০টি।
এক মাঠে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরিতে টেস্ট ইতিহাসে এখন তিনি যৌথভাবে চারে। গলে ৭টি সেঞ্চুরি আছে কুমার সাঙ্গাকারার ও মাহেলা জয়াবর্ধনের, অ্যাডিলেইড ওভালে মাইকেল ক্লার্কের। কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে ৮টি সেঞ্চুরি আছে সাঙ্গাকারার। কেপ টাউনের নিউল্যান্ডসে জ্যাক ক্যালিস ও মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সেঞ্চুরি ৯টি করে। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে ১১ টি সেঞ্চুরি করে এক মাঠে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড জয়াবর্ধনের।
শুধু কি তাই, টেস্ট ইতিহাসে একটি জায়গায় মুমিনুলের পাশে কেউ নেই। ঘরের বাইরে সেঞ্চুরির আগে দেশের মাটিতে মুমিনুলের মতো এত সেঞ্চুরি টেস্ট ইতিহাসে আর কারও নেই। এই ‘রেকর্ডে’ মুমিনুল পেরিয়ে গেছেন সাবেক ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যালান ল্যাম্বকে। ক্যারিয়ারে ১৪ সেঞ্চুরির মধ্যে প্রথম ৯টিই ল্যাম্ব করেছিলেন দেশের মাটিতে, দশম সেঞ্চুরিটি আসে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ভারতের রোহিত শর্মার এখন পর্যন্ত দেশের মাটিতে ৬টি সেঞ্চুরি, বিদেশে একটিও নেই। ভারতের সাবেক ব্যাটসম্যান চান্দু বোর্দে বিদেশে সেঞ্চুরিহীন থেকে দেশের মাটিতে করেছেন ৫টি সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের বাবা ক্রিস ব্রড আবার এদিক থেকে ১৮০ ডিগ্রি ব্যতিক্রম। ক্যারিয়ারে ৬টি সেঞ্চুরি করেছিলেন সিনিয়র ব্রড, সব কটিই বিদেশের মাটিতে!
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্টে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন। এরপর তো করোনাভাইরাসের হানায় আর টেস্টই খেলা হয়নি বাংলাদেশের। করোনাকে পাশ কাটিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশ লাল বলের ক্রিকেটে ফিরেছে, মুমিনলও ফিরলেন সেঞ্চুরি দিয়ে!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।