পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সফলতা পেতে হলে কোরআনে বর্ণিত উত্তম আখলাকের অধিকারী হতে হবে। দুনিয়ার জীবন মানবজাতির জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে এক পরীক্ষাগার। ঈমানদার মানুষদের দুনিয়া ও আখেরাতের পরীক্ষায় অবশ্যই উত্তীর্ণ হতে হবে। কোরআনি প্রেসক্রিপশন পৃথিবীর স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম ও খতিবরা এসব কথা বলেন। জুমার নামাজে নগরীর মসজিদগুলোতে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মুফতি মিজানুর রহমান গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সফলতা পেতে হলে কোরআনে বর্ণিত উত্তম আখলাকের অধিকারী হতে হবে। দুনিয়ার জীবন মানবজাতির জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ হতে এক পরীক্ষাগার। তাইতো মহান আল্লাহ তায়ালা মানুষকে পরীক্ষা করার লক্ষ্যে এমন কিছু বিষয় তার কাছে আকর্ষণীয় ও মোহনীয় করেছেন, যেগুলোর পেছনে ছুটলে মানুষ আল্লাহকে ভুলে বসবে, হারিয়ে ফেলবে তার আসল গন্তব্য।
পেশ ইমাম বলেন, আল্লাহ তায়ালা সূরা ইমরানের ১৪ নং আয়াতে প্রবৃত্তির ভালোবাসা নারী সন্তানাদি রাশি রাশি সোনা-রূপা, চিহ্নিত ঘোড়া, গবাদি পশু প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ করে বলেন, বলো, আমি কি তোমাদেরকে এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্ট কোনো কিছুর সংবাদ দেব? যারা সাবধান (পরহেযগার) হয়ে চলে তাদের জন্য রয়েছে উদ্যানসমূহ যার নিম্নদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি রয়েছে। বস্তুত আল্লাহ তার দাসদের সম্বন্ধে সম্যক অবহিত।
রাজধানীর অদূরে টংগীস্থ মসজিদুল আকসার (সরকার বাড়ী) খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম।
সকল ভাষার স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালা। তিনিই ভাষা শিক্ষাদাতা তাইত প্রত্যেক জাতি তার আপন ভাষাকে ভালোবাসে। ‘ভাষা’ মানুষের আবেগ-অনুভূতি, চিন্তা-ভাবনা ও চেতনা প্রকাশের মাধ্যম। পবিত্র কোরআনের সূরা আর রহমানে আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা জ্ঞানকে ‘বয়ান’ বলেছেন। বয়ান, অর্থ হলো মনের ভাব প্রকাশ করা। মাতৃভাষাকে সুসংহত সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে ভাষায় বুৎপত্তি ও উৎকর্ষ সাধন অপরিহার্য। মাতৃভাষায় উৎকর্ষ সাধন করতে না পারলে আমি মহান রবের চিরন্তন বাণী এবং রাসুল্লাহ (সা.) এর দিকনির্দেশনা মাতৃভাষায় হৃদয়গ্রাহী করে অন্যের কাছে তুলে ধরতে পারব না। তাই ইসলাম এ সত্যকে মর্যাদার সাথে গ্রহণ করেছে।
কোরআনুল কারীমের সূরা ইব্রাহিমে আল্লাহ তায়াল ইরশাদ করেন, ‘আমি প্রত্যেক নবী ও রাসুলকে স্বজাতীয় ভাষার অধিকারী করে পাঠিয়েছি। যাতে তারা নিজ উম্মতদেরকে সুস্পষ্টভাবে আমার আদেশ-নিষেধ বুঝাতে পারে। (সূরা ত্বহার ২৫-২৮ আয়াত)। সূরা কাসাস এর ৩৪-৩৫ আয়াত এ মাতৃভাষার গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) হাদীসে বর্ণনা করেন, ‘আমি আরবদের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সুস্পষ্ট ভাষার অধিকারী।’
তাই আসুন আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হোক মাতৃভাষা বাংলাকে অশ্লীলতা ও মিথ্যাচারমুক্ত করে সমাজে ব্যাপক ব্যবহার করি। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করি। আল্লাহ আমাদের সাহায় হোন। আমিন!
ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতিব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী জুমার খুৎবা-পূর্ব বক্তব্যে বলেছেন, রোগ নিরাময়ের জন্য দুনিয়ার ওষুধ কোম্পানিসমূহ যে সকল ওষুধ প্রস্তুত করে সেগুলোর কার্যকরিতা থাকে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত। এ কারণে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহ ও বিক্রি করা দুনিয়ার আইনেও দ-নীয় অপরাধ। বিপরীতে ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি এবং সকল প্রকার বিপর্যয় থেকে সুরক্ষা পেতে পবিত্র কোরআন বিশ্ববাসীকে যে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছে তার কার্যকরিতা ক্বিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী এবং তা এতটাই কার্যকর যে, বলা চলে কোরআনি এই প্রেসক্রিপশন পৃথিবীর স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার রক্ষাকবচ। এমনি এক ব্যবস্থাপত্র ও মূলনীতি উপস্থাপিত হয়েছে পবিত্র কোরআনের সূরা মায়েদার ২য় আয়াতের একাংশে। এতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন ‘সৎকর্ম ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে তোমরা একে অপরকে সাহায্য করো আর পাপাচার ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সাহায্য করো না।’
মিরপুর ই-ব্লক এর বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, মনে হয় যেন অশান্তির দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলছে। কোথাও শান্তির সুবাতাস মিলছে না। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দরকার আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.)-এর পথে প্রত্যেকের নিজের জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, মুমিন নর ও মুমিন নারী একে অপরের বন্ধু। এরা সৎ কার্যের নির্দেশ দেয় এবং অসৎ কার্যের নিষেধ করে, নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, এদের আল্লাহ অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৭১)। রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না, শত্রুতা পোষণ করো না, অযথা কারো দোষত্রুটি তালাশ করো না, একে অন্যের প্রতি (অন্যায়ভাবে) মোকাবিলা করতে যেও না, ভাই ভাই হিসেবে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৬৪, মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৩)। রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, এক মুমিন আরেক মুমিনের জন্য আয়না সরূপ এবং পরস্পর ভাই ভাই। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯১৮)। আল্লাহ সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার ডেমরার দারুননাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মো. মনিরুল ইসলাম জুমার বয়ানে বলেন, ইসলাম সাম্য ও মৈত্রীর ধর্ম। প্রত্যেককে তার যথাযথ অধিকার প্রদান করেছে একমাত্র ইসলাম। স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার, স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার। একটি সুখি-সমৃদ্ধ পরিবার গঠনে যার ভূমিকা অনেক বেশি। স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকে যদি নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে তাহলে সংসারে কোনো অশান্তি থাকবে না। আল্লাহ তা’য়ালা স্ত্রীকে যে সকল অধিকার দিয়েছেন তার মধ্যে প্রথম হক হলো স্বামী পরিবারে শান্তি ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দেয়া। পারিবারিক শান্তি ও হৃদ্যতার মাধ্যমেই সামাজিক শান্তি ও সহমর্মিতার বিস্তার ঘটবে। হযরত আবু হুরায়রা (রাদি.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলাম হলো; তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে; তার সাথে কাউকে শরিক করবে না, নামাজ কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রমযানে রোজা রাখবে, হজ করবে, সৎ কাজের আদেশ করা, অসৎ কাজে নিষেধ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমি মুমিনের বিষয়টি নিয়ে আশ্চার্যান্বিত হই; যদি তার কোনো কল্যাণ সাধিত হয় তখন সে আল্লাহর প্রশংসা করে। তাতে সে পুরস্কৃত হয়। আবার যদি তার বিপদ ঘটে তাতেও সে আল্লাহর প্রশংসা করে। তাতেও পুরস্কৃত হয়। মুমিনের প্রত্যেক কাজে পুরস্কার দেয়া হয়। এমনকি সে তার স্ত্রীর মুখে যে খাবার উঠিয়ে দেয় তাতেও। আল্লাহ সবাইকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।