নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
উইন্ডিজদের আক্রমণাত্নক বোলিংয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ভুগেছে স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। জোমেল ওয়ারিক্যান, রাহকিম কর্নওয়াল ও এনক্রুমা বোনারের ঘূর্ণি জাদু আর কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের পেস তোপে সেই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে দ্বিতীয় দিনের মধ্যাহ্ন বিরতি অবধি। টপ অর্ডার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার; তামিম ইকবাল থেকে লিটন দাস; স্বীকৃতরা কিন্তু কেউই জাদুকরি তিন সংখ্যা স্পর্শ করতে পারেননি। এমনকি ৭০ রানের কোঠায় যাওয়া সাদমান (৫৯) আর সাকিব (৬৮) নন। তাতে সাগরিকার রান প্রসবা ভেন্যুও যেন নিদারুণ নিস্তরঙ্গ ঠেকছিল। কী আশ্চর্য্য! সেখানেই কীনা দাপুটে সেঞ্চুরিতে ঢেউ তুললেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাতে প্রথম ইনিংসে ধুকতে থাকা টাইগাররা পেরিয়ে গেল চারশ (৪৩০) রানের কোঠা। প্রাণের ঝংকারে আন্দোলিত হল ৫৬ হাজার বর্গমাইল।
এমন দিন বারবার আসুক বাংলাদেশ তা-ই চায়। চায় তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহদের মাঝে মাঝেই ছাপিয়ে যাক তরুণ প্রজন্ম। গতকাল চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে তাই হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে মেহেদির রং লাগিয়ে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৪৩০ রানে।
তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফী, এই পঞ্চপান্ডব বিদায় নিলে কী হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের? গত কয়েক বছর ধরেই ঘুরছে এই প্রশ্ন। ইতিমধ্যে মাশরাফী ‘প্রায়’ বিদায় নিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। এখনো ফিরে ফিরে আসে সেই প্রশ্ন। কিছুটা ধারাবাহিক হয়ে ভরসার অপর নাম হওয়ার পথে লিটন দাস। আশা জাগিয়েও অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের যোগ্য উত্তরস‚রি হতে বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলেন যিনি, সেই মিরাজই গতকাল ঝলকে উঠে জানালেন তিনি আছেন উজ্জ্বল আগামীর আশা হয়ে।
৫ উইকেটে ২৪২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করে খুব তাড়াতাড়িই যা চায়নি তা পেয়েছিল মুমিনুলের দল। আগের দিনের ৩৮-এর সঙ্গে কোনো রান যোগ না করেই লিটন বোল্ড। ওয়ারিকানের চতুর্থ শিকার হয়ে তার ফেরাই কিছু করে দেখানোর সুযোগ দিয়েছিল মিরাজকে। দেখিয়েছেন ঠিকই। ৬৮ রান করে সাকিবের ফিরে যাওয়াও হতোদ্যম করেনি তাকে। বরং ৩১৫ রানে সপ্তম উইকেট হারানো বাংলাদেশকে তাইজুল (১৮), নাঈম হাসান (২৪) এবং মুস্তাফিজের (৩) সহায়তায় নিয়ে গেছেন ৪৩০ রানে। শুধু তাই নয়, নিজের ২৩তম টেস্টে প্রথম সেঞ্চুরির দেখাও পেয়ে গেছেন। ১০৩ রান করার পর শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে কর্নওয়ালের বলে আউট হয়েছেন ঠিকই, তবে ততক্ষণে বাংলাদেশের ক্রিকেটের আকাশে মেহেদীর রং লেগে গেছে! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন দারুণ এক সেঞ্চুরিতে রাঙিয়েছেন মিরাজ। আট নম্বরে নেমে তার ১০৩ রানের অসাধারণ ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ৪৩০ রানের পুঁজি।
২০১৩ সালের এপ্রিলে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে যুব টেস্টে শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন ১৫ বছর বয়সী মিরাজ। সেই ঝলকের তিন বছর পর ২০১৬ যুব বিশ্বকাপের কয়েক মাস বাদেই টেস্ট অভিষেক হয়ে গেল মিরাজের। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার অভিষেক হলো ক্রিকেট বিশ্ব কাঁপিয়ে। সহায়ক উইকেটে স্পিনের মায়াজালে শিকার করলেন একের পর এক উইকেট। ২ টেস্টে ১৯ উইকেট আর রেকর্ডের মালা গেঁথে হলেন ম্যান অব দা সিরিজ। তারপরও প্রায় ৮ বছর আগে যুব টেস্টের সেই সেঞ্চুরি ছিল অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে দেশের হয়ে মিরাজের প্রথম ইনিংস। সেই সেঞ্চুরির পর আরও ৩টি যুব টেস্ট ও ৫৬টি যুব ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। এই টেস্ট সিরিজের আগে টেস্ট খেলেছেন ২২টি, ওয়ানডে ৪৪টি, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ১৩টি। প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার ৪০ ম্যাচের, লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ ৯৩ আর টি-টোয়েন্টি ৭৫ ম্যাচের। স্বীকৃত ক্রিকেটের এই সবগুলো পর্যায় মিলিয়ে ২৪৭ ইনিংস পর আবার তিনি পেলেন আরেকটি সেঞ্চুরির দেখা।
গতকাল সাগরিকায় নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন মিরাজ। পেসার হোক কিংবা স্পিনার, ক্যারিবিয়ান বোলারদের বিপক্ষে তিনি ঘুরিয়েছেন ছড়ি। ব্যাটিং সত্তাকে জাগ্রত করে খেলেছেন নান্দনিক সব শট। গ্লাইড, ফ্লিক কিংবা ইনসাইড আউট কী করেননি তিনি! ৯৯ বলে ফিফটিতে পৌঁছানো মিরাজ তিন অঙ্কে পৌঁছান ১৬০ বলে। অর্থাৎ পরের পঞ্চাশ তিনি তুলেছেন বেশ দ্রুতগতিতে।
বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মিরাজের ব্যাটিং প্রতিভা নিয়েই সেসময় আলোচনা হতো বেশি। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ে পা রাখার পর সামর্থ্যরে প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি। ক্যারিয়ারের অভিষেক টেস্টে বল হাতে অবিস্মরণীয় পারফরম্যান্স করার পর তার ম‚ল পরিচয় হয়ে যায় ‘বোলার’। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চার বছরের বেশি সময়ের পথচলায় ওয়ানডে ও টেস্টে বেশ কিছু কার্যকর ইনিংস খেলেছেন মিরাজ। কিন্তু কখনোই ধারাবাহিক হতে পারেননি। ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে এই সেঞ্চুরি তাই তার জন্য হতে পারে ব্যাট হাতে নতুন শুরুর ভিত।
মিরাজের কল্যাণে বাংলাদেশ পেয়েছে বড় সংগ্রহ। চা বিরতির আগে স্বাগতিকদের ইনিংস থেমেছে ৪৩০ রানে। রাহকিম কর্নওয়ালকে ছক্কায় ওড়াতে গিয়ে দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ১০৩ রান। তার ১৬৮ বলের অসাধারণ ইনিংসে চার মোট ১৩টি। ক্রিকেটের সবচেয়ে কুলীন সংস্করণে এর আগে মিরাজ ২২ ম্যাচে খেলেছিলেন ৪২ ইনিংস। সেখানে হাফসেঞ্চুরি ছিল মোটে দুটি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা অপরাজিত ৬৮ রানের ইনিংসটিই এতদিন ছিল তার সর্বোচ্চ।
ব্যক্তিগত ২৪ ও ৮৫ রানে দুবার জীবন পাওয়া মিরাজ শেষ চারটি জুটিতে রাখেন অগ্রণী ভ‚মিকা। সপ্তম উইকেটে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে ৬৭ রান যোগ করেন তিনি। বাঁহাতি তারকা অলরাউন্ডার সাকিবের বিদায়ে বাংলাদেশের বড় স্কোরের স্বপ্নে লেগেছিল আঘাত। তবে মিরাজ সামনে এগিয়ে আসায় চারশো ছাড়িয়ে যায় সংগ্রহ। অষ্টম উইকেটে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে ৪৪ ও নবম উইকেটে নাঈম হাসানের সঙ্গে ৫৭ রানের আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি উপহার দেন তিনি।
মিরাজের সেঞ্চুরিতে গড়ে দেওয়া ভিতে দাঁড়িয়ে নতুন বলে আগুন ঝরা বোলিং উপহার দিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে জোর ধাক্কা লাগল শুরুতেই। তবে অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত দিনটা খানিকটা স্বস্তিতে শেষ করতে পারল ক্যারিবিয়ানরা। চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪৩০ রানের পর দ্বিতীয় দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২ উইকেটে ৭৫। ২৪ রানে ২ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় উইকেটে ব্র্যাথওয়েট ও অভিষিক্ত এনক্রুমা বনার গড়েন ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে ব্যাট করে ৪৯ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেন ব্র্যাথওয়েট। তবে এখনও তার দল পিছিয়ে ৩৫৫ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : (আগের দিন ২৪২/৫) ১৫০.২ ওভারে ৪৩০ (সাকিব ৬৮, লিটন ৩৮, মিরাজ ১০৩, তাইজুল ১৮, নাঈম ২৪; রোচ ১/৬০, গ্যাব্রিয়েল ১/৬৯, কর্নওয়াল ২/১১৪, ওয়ারিক্যান ৪/১৩৩, বোনার ১/১৬)।
উইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ২৯ ওভারে ৭৫/২ (ব্র্যাথওয়েট ৪৯*, ক্যাম্পবেল ৩, মোজলি ২, বোনার ১৭*; মুস্তাফিজ ২/১৮, সাকিব ০/১৬, মিরাজ ০/২৪, তাইজুল ০/৯, নাঈম ০/৭)। দ্বিতীয় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।