Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খুলনায় অভিযুক্ত পুলিশের কি শাস্তি হয় না?

প্রকাশের সময় : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : সারাদেশের ন্যায় খুলনাতেও কতিপয় পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। অর্থের বিনিময়ে মাদক বিক্রেতা ও সন্ত্রাসীদের সহায়তা দেয়া, উৎকোচ, নিরাপরাধীদের আটকে পেন্ডিং মামলায় জড়ানো, মিথ্যা দোষারোপে স্বনামধন্য ব্যক্তিদের ফাঁসানোর চেষ্টা, সম্পত্তি জবর দখলসহ খুলনায় পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। সব অভিযোগ গণমাধ্যমের সামনে আসে না। পুলিশী হয়রানির ভয়ে নিরবে সহ্য করেন ভুক্তভোগীরা। তবে আলোচিত অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, সাময়িক বরখাস্ত বা ক্লোজড কিংবা মামলা হলেও সেসব অভিযোগের নিষ্পত্তি হয় না। নিষ্পত্তি হলেও খুলনা কোন কর্মকর্তা অভিযুক্ত শাস্তি পেয়েছেন এমন তথ্য জানা যায়নি। উল্টো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে- এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে খুলনায়। নির্যাতনের ঘটনায় খুলনায় অভিযুক্ত পুলিশের শাস্তি হয় কি না; জনমনে এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, মহানগরীর দৌলতপুরে কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেনকে (১৭) নির্যাতনের ঘটনায় কার্তিককুল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ আব্দুল হামিদকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। গত ৫ জানুয়ারি রাতে খুলনার খানজাহান আলী আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান হোসেনকে কার্তিককুল পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে ৭ পুলিশ সদস্য নির্যাতন করে। দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে বলে জানান কেএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মোঃ আব্দুলাহ আরেফ।
গত বছর ২৯ জানুয়ারি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার শেখ জয়নুদ্দীনের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় মামলা (যার নং-৩৪) দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উপ-পরিচালক আবদুছ ছাত্তার সরকার। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, শেখ জয়নুদ্দীন, পিতা মৃত শেখ এমান আলী, খরিয়াটি, আশাশুনি, জেলা সাতক্ষীরা-একজন সরকারি পদস্থ কর্মকর্তা। কিন্তু তিনি ব্যবসায়ী পরিচয়ে এসএম নূরুলাহ, পিতা- মোঃ জালালউদ্দিন শেখ নাম ধারণ করে এসিই ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস লিমিটেড নামের ব্রোকারেজ হাউজে বিও একাউন্ট খোলেন। যা প্রতারণা সামিল এবং দÐবিধির ৪১৯ ও ৪২০ ধারায় দÐনীয় অপরাধ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের আড়ংঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমীর তৈমুর ইলি, এএসআই মোঃ ইব্রাহিম ও মোঃ ফিরোজের বিরুদ্ধে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগে মহানগর হাকিমের আদালতে মামলা (নম্বর-১৭/২০১৫) দায়ের করেন ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম। খুলনা মহানগর হাকিম আবির পারভেজ জেলা প্রশাসনের অধীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে গেল বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আড়ংঘাটা থানা এলাকার ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম আরজি’তে বলেন, পুলিশ সদস্যরা ডেকে থানায় নিয়ে যান। এরপর ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। নিরূপায় হয়ে গত বছরের ২৭ আগস্ট তিনি ৫০ হাজার টাকা দেন।
গত বছরের ৫ জুলাই মহানগরীর শিরোমনি এলাকায় জনতার উপর হামলার ঘটনায় ৯ জুলাই খুলনার ৩য় আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) অধিনায়ক হারুন অর রশীদ, পরিদর্শক সাবদার হোসেন ও আজিজ, সুবেদার মুজিবুর রহমান ও সিরাজ, এস আই মতিয়ার রহমান, হাবিলদার (ক্লার্ক) মিন্টু ও মোস্তাফিজ, হাবিলদার নুর আহম্মদ, আরপি হাবিলদার জাহাঙ্গীর, নায়েক রিপন, কনস্টেবল মিজানুর রহমান মিজান, সিপাহী মেহেদী, হজরত ও মাসুদ রানাসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০-৬০ জনের বিরুদ্ধে জবর দখল, ক্ষমতার অপব্যবহার ও হামলার অভিযোগে মহানগর হাকিম আদালত ‘ঘ’ অঞ্চলে মামলা করেন স্থানীয় জাব্দীপুর এলাকার জনৈক মোঃ শাকিল আহম্মেদ। মোড়ল আজিজুর রহমান নামে জনৈক ব্যক্তি মহানগরীর শিরোমণি এলাকায় খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) একটি বাণিজ্যিক পট ক্রয় ও দখলকে কেন্দ্র করে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল।
আবার, ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল খুলনা সদর থানায় ছাত্রদলের দুই কর্মীকে ঝুঁলিয়ে বেধড়ক পেটানোর অভিযোগে তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান, সেপাই আবু সুফিয়ান ও মামুন আখতার এবং গাড়িচালক সুধাংশুকে ২৩ এপ্রিল প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করে কেএমপি। সে সময়ে পুলিশের বিশেষ শাখার উপ-কমিশনার মোঃ হায়দার আলীকে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে ৭দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবার নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালিন কেএমপি কমিশনার। তদন্তে কি শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল তা জানা যায়নি; তবে পদোন্নতি পেয়ে এসএম কামরুজ্জামান এখন কেএমপি’র (খালিশপুর জোন) সহকারী পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, ২০১২ সালে মহানগরীর মুজগুন্নি আবাসিক এলাকার কাজের মেয়ে জীবিত সীমার হত্যা নাটক সাজিয়ে খালিশপুর থানার এস আই শিল্পপতি মাসুদ হাসান ও তার স্ত্রী ফাতিমা ইয়াসমিনকে গ্রেফতার করেছিল। মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করে একাধিকবার রিমান্ডের নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। একপর্যায়ে জীবিত সীমা হাজির হয় আদালতে। পরে এস আই শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন শিল্পপতি মাসুদ হাসান। বর্তমানে বরখাস্ত এসআই শাহ আলমের বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক মামলা তদন্ত চলছে।
তবে উপরোক্ত সব ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) মুখপাত্র শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ প্রবণতা কমবে। সেক্ষেত্রে আইনের রক্ষকরা আইনভঙ্গ করলে তাদের শাস্তি দিলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়বে। পুলিশ প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী; ফলে জনগণের সেবা দেয়াই তাদের দায়িত্ব। সেখানে ব্যর্তয় ঘটলে রাষ্ট্রের ও সমগ্র পুলিশ বাহিনীর সম্মান রক্ষার্থে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।



 

Show all comments
  • Engg.Md.Abu Raihan ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১০:১২ পিএম says : 0
    good news
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুলনায় অভিযুক্ত পুলিশের কি শাস্তি হয় না?
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ