পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবারও সেনা শাসনে গেল মিয়ানমার। ‘নির্বাচনে জালিয়াতি’র দায়ে ক্ষমতাসীন সরকারকে ফেলে দিয়ে আগামী এক বছরের জন্য দেশের দখল নিয়েছে সেনাবাহিনী। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি-র নেত্রী সান সু চি, প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্টসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বন্দি করা হয়েছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত টিভি চ্যানেল মিয়াওয়াদ্দি-তে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। নেতাদের গ্রেফতার করে এক বছরের জন্য দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছেন মিয়ন্ত সোয়ে। আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ এবং বিচার বিভাগের ক্ষমতা নিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান। জরুরি অবস্থা শেষ হলে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছে সেনাবাহিনী। দেশের রাজধানী নে পি দ্যসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ইন্টারনেট, টেলিফোন পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশটির প্রধান প্রধান শহরের রাস্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে মিয়ানমারের কোনো খবরই প্রকাশ্যে আসছে না।
কিছু সাংবাদিক এই আশঙ্কায় আত্মগোপন করেছেন যে, খবর সরবরাহ তাদের জন্য হানিকর হতে পারে মিয়ানমারে বিমান চলাচল স্থগিত করা হয়েছে এবং দেশটির বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
দেশটির সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিগত কয়েক মাস ধরেই টানাপড়েন চলছিল। গত নভেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয় সুকির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি। কিন্তু ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়েই বিরোধ বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু গতকাল পরিস্থিতি বদলে যায়। দেশের দখল নেয় সেনাবাহিনী।
এদিকে, সেনা অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়েছে আমেরিকা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা। এক বিবৃতিতে আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি জে ব্লিংকেন বলেছেন যে, বাইডেন প্রশাসন সামরিক বাহিনীর বৃদ্ধি নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ ও হুঁশিয়ারি প্রকাশ করেছে এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে সরকার ও সুশীল সমাজের নেতাদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমেরিকা বার্মার জনগণের পাশে তাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, শান্তি এবং উন্নয়নের আকাক্সক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে।’ ব্লিংকেন বলেন, ‘সামরিক বাহিনীকে অবিলম্বে এই পদক্ষেপগুলি প্রত্যাহার করতে হবে।’
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সু চিকে গ্রেফতারের ঘটনার সমালোচনা করে এক টুইটে বলেন, ‘মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান এবং অং সান সু চিসহ বেসামরিক নাগরিকদের অবরোধের নিন্দা জানাচ্ছি। জনগণের ভোটকে স্বীকৃতি দিয়ে বেসামরিক নেতাদের মুক্তি দেয়া উচিত।’ অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী মারিজ পেইনি বলেছেন, ‘আমরা আইনের শাসন মেনে চলতে, আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান দ্ব›েদ্বর নিষ্পত্তিতে এবং বেসামরিক সব নেতা ও অন্য যাদের বেআইনিভাবে আটক করা হয়ে সবাইকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে সামরিক বাহিনীকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
অং সান সু চি ও প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতারের পর মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনায় বেশ জোরালো ভাবেই নিন্দা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান চার্লস মিশেলও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আটক নেতাদের মুক্তির দাবি করেছেন। ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট তার টুইটে বলেন, ‘নির্বাচনের ফলকে স্বীকৃতি দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনর্বহাল করা উচিত।’
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জন সিফটন বলেন, ‘প্রথম বিষয়টি হচ্ছে যে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা যারা কয়েক দশক ধরে দেশটিকে শাসন করেছে তারা কখনোই আসলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ায়নি। তারা কখনোই বেসামরিক কর্তৃপক্ষের শাসন মেনে নেয়নি, আর তাই আজকের ঘটনা আসলে এতদিন ধরে চলা অবস্থারই প্রকাশ মাত্র।’ মিয়ানমারের ঘটনাবলীর দিকে নজর রাখছে চীন দেশটির মুখপাত্র বলেছেন, ‘চীন মিয়ানমারের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী এবং আমরা আমা করি দেশের সাংবিধানিক এবং আইনি কাঠামোর মধ্যে মিয়ানমারের বিভিন্ন পক্ষ তাদের মতভেদ দূর করবে এবং রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে’। সেনা অভ্যুত্থান হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হবে না বলে আশা করছে বাংলাদেশ।
গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাতে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী সু চি এবং দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়। ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসির (এনএলডি) মুখপাত্র মিও নয়েন্ট বলেছেন, যাদের আটকদের মধ্যে সু চি ছাড়াও প্রেসিডেন্ট উয়িন মিন্ট এবং অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারা রয়েছেন। মিয়ানমারের এনএলডি নেতাদের গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার পর সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত টেলিভিশনে এক বছরের জন্য দেশে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেয়া হয়। টেলিভিশনে ওই ঘোষণায় বলা হয়, গত নির্বাচনে ‘জালিয়াতির’ ঘটনায় সরকারের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আটক করা হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল মিং অং হ্লাইংয়ের হাতে। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ঘিরে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্ব›দ্ব ও উত্তেজনার পর দেশটিতে এসব ঘটনা ঘটল।
গত বছর ৮ নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি বড় জয় পায়। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য যেখানে ৩২২টি আসনই যথেষ্ট, সেখানে এনএলডি পেয়েছে ৩৪৬টি আসন। গতকাল ছিল নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার জন্য নির্ধারিত দিন। গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ঘিরে মিয়ানমারের বেসামরিক সরকার ও প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীর মধ্যে কয়েকদিন ধরে দ্ব›দ্ব ও উত্তেজনার পর সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিল। দাবি মানা না হলে সেনাবাহিনী ফের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিল তারা।
সর্বশেষ নির্বাচনে মিয়ানমারের বিভিন্ন জেলার ভোটের তালিকায় নকল নাম থাকাসহ বেশকিছু অভিযোগ আনে দেশটির সেনাবাহিনী। এ নিয়ে অভিযোগ জানালেও নির্বাচন কমিশন তাতে যথাযথভাবে সাড়া দেয়নি। তবে, নির্বাচনে যে পরিমাণ অনিয়ম হয়েছে, তা ভোটের ফল পরিবর্তন করতে যথেষ্ট কি না, এ বিষয়ে সেনাবাহিনী কিছু বলেনি।
মিয়ানমারের সংবিধান অনুযায়ী, ‘ইউনিয়নের বিভেদ ঘটায়, জাতীয় সংহতির বিভেদ ঘটায় ও সার্বভৌম ক্ষমতা কমিয়ে আনে, এমন গুরুতর পরিস্থিতিতে দেশটির সেনাপ্রধান ক্ষমতা নিতে পারবেন। তবে, শুধুমাত্র জরুরি অবস্থা চলাকালে তিনি ক্ষমতা নিতে পারবেন এবং সেই জরুরি অবস্থা শুধুমাত্র বেসামরিক প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করতে পারবেন।’
গত সপ্তাহে সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সেনা কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, সংবিধান হলো ‘মাদার ল’ ফর অল ল’স’। কিন্তু, সেটা যদি মেনে চলা না হয়, তাহলে তা বাতিল করা প্রয়োজন। মিয়ানমারে পূর্বে ঘটা এ ধরনের ঘটনার উদাহরণও তিনি তুলে ধরেন।
২০১১ সালে মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থার উত্তরণ ঘটে। এর আগে প্রায় অর্ধশতক দেশটিতে ক্ষমতায় ছিল সেনাবাহিনী। ২০১২ সালের নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি বিরোধী দল হলেও ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করে তারা সরকারে আসে। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের জয়লাভ করে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করেন সু চি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির ভাবমর্যাদায় অনেক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ২০১৭ সালে দেশটির আরাকান প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্লিনজিং অপারেশন পরিচালনা করে। যার ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম দেশটি থেকে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। কথিত গণপন্থী নেত্রী রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে প্রকারান্তরে সমর্থন জানান। আন্তর্জাতিক আদালতে গণহত্যা পরিচালনাকারীদের পক্ষে সাফাই দেন তিনি।
এদিকে সেনাবাহিনী শাসনক্ষমতা দখলের পর অং সান সুকির দল এনএলডি ফেসবুকে তাদের একটি পাতায় এক বিবৃতিতে সামরিক অভ্যুত্থান প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছে। সেনাবাহিনীর হাতে তাদের বন্দি নেত্রীর পক্ষে এ বিবৃতি দেয়া হয়েছে বলে রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে। নভেম্বরের নির্বাচনের আগে প্রচারণার জন্য ফেসবুকে যে অ্যাকাউন্ট এনএলডি ব্যবহার করতো, সেই পাতাতেই এই বিবৃতি পোস্ট করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘সেনাবাহিনীর এ ভূমিকা দেশকে একনায়কতন্ত্রে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। জনগণকে আমি অনুরোধ জানাচ্ছি তারা যেন এটা মেনে না নেয়। তারা যেন সেনাবাহিনীর এই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে’।
বিবৃতির নীচে সু চির নাম থাকলেও তার কোনো সই নেই। তবে বিবৃতির নীচে এনএলডির চেয়ারম্যান উইন টিনের হাতে লেখা একটি নোট রয়েছে যেখানে তিনি বলেছেন, ‘এ বিবৃতি সু চির ‘ইচ্ছার প্রতিফলন’ এবং এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই’। তিনি লেখেন, ‘আমি কসম করে বলছি অং সান সুচি নিজে জনগণের প্রতি এ আহ্বান জানাচ্ছেন’। সূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, বিবিসি, আল-জাজিরা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।