গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
নাছিম উল আলম : কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর উদাসীনতা ও দায়িত্বে অবহেলাসহ প্রয়োজনীয় তহবিলের অভাবে বরিশাল মহানগরীর নাগরিক পরিষেবা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। এর সাথে সাম্প্রতিক নজিরবিহীন প্রবল বর্ষণে এ নগরীর রাস্তা-ঘাটের কংকাল দেহ বেরিয়ে আসায় নগরবাসীর দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করাসহ কতিপয় বিবেকহীন নগরবাসীর সমাজ বিরোধী কর্মকাÐে এ নগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ক্রমশ অচল হওয়ার মুখে। ফলে মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণে পানিবদ্ধতায় বরিশাল মহানগরীর জনজীবন স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে বার বার। রাস্তাঘাটসহ গোটা নগরীর পানিবদ্ধতা হচ্ছে দীর্ঘায়িত। রাস্তা-ঘাটের ক্ষতিও প্রলম্বিত হচ্ছে। কিন্তু টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। এসব দুরবস্থার সাথে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অভাবে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক অচলাবস্থাও ত্বরান্বিত হচ্ছে ক্রমশ। অথচ এ নগর ভবন জনবলের চাপে ন্যূব্জমান। এনগরীর রাস্তা-ঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ ড্রেনসমূহ সচল রাখার লক্ষ্যে প্রায় দেড় হাজার দৈনিক মজুরীভিত্তিক শ্রমিক রয়েছে। যাদের পেছনে নগর ভবনের ব্যয় বছরে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। অথচ নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ৮ কোটি টাকার মত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের দেড় হাজার দৈনিক মজুরীভিত্তিক শ্রমিকের অর্ধেকই কোন কাজ না করেই বেতন নিচ্ছে। এরা নিয়মিত হাজিরা পর্যন্ত দেয় না। সংশ্লিষ্ট শাখা প্রধানসহ দায়িত্বশীল মহল এসব বিষয় স্বীকার করলেও কোন ব্যবস্থা নেই। অবশিষ্ট দৈনিক শ্রমিক ডিউটিতে আসলেও তাদের বেশীরভাগই এক ঘণ্টাও কাজ করছে না প্রতিদিন। ফলে নগরীর রাস্তা-ঘাটসহ পাবলিক প্লেসগুলো ক্রমশ সৌন্দর্য হারাচ্ছে। ডাস্টবিনগুলোও নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে না। ড্রেনগুলোর অবস্থা আরো করুণ। রাস্তার ধারে দিনরাত ময়লা-আবর্জনা ও উৎকট গন্ধে নগরবাসীর প্রাণ ওষ্ঠাগত।
নগরীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার পাশে মাসের পর মাস ধরে বালুসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী জড়ো করে রাখায় ড্রেনগুলো ক্রমশ ভরাট হয়ে গেছে। অনেক বাড়িওলাসহ নগরবাসী ড্রেনকে ডাস্টবিন হিসেবে ব্যবহার করছেন। আচ্ছাদনযুক্ত ড্রেনগুলোর স্যালো সাইড পকেট দিয়ে প্রতিনিয়ত বালুসহ নানা ময়লা-আবর্জনা প্রবেশ করে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বরিশাল মহানগরীর রাস্তায় পানি ঢেউ খেলে। কিন্তু এসব অব্যবস্থা-অনিয়মকে প্রতিহত করার কোন উদ্যোগ বা গরজ নেই নগর ভবনের।
গত ২১ আগস্ট স্মরণকালের ভয়াবহ বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর প্রায় সাড়ে ৬শ’ কিলোমিটার রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক সংবাদ সম্মেলনে সিটি মেয়র আহসান হাবীব কামাল জানিয়েছেন, ২১ আগস্টের নজিরবিহীন বর্ষণে বরিশাল মহানগরীর ৪৬৬ কিলোমিটার বিটুমিনাস রাস্তার আড়াইশ’ কিলোমিটারেরও বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও নদী তীরবর্তী প্রায় ৪১ কিলোমিটার বাঁধ ও মাটির রাস্তারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি এসব সড়ক অবকাঠামো মেরামত ও পুনর্বাসনে ৬শ’ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে দাবী করে মন্ত্রণালয়ের কাছে ৪১৩ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ দাবী করেছেন।
কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোন তহবিলের সংস্থান হয়নি। ফলে নগরীর ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট এ নগরবাসীর দুর্ভোগকে যথেষ্ট বৃদ্ধি করে চলেছে। রিক্সাসহ ইজিবাইকের যাত্রীদের কোমড় ব্যথা হচ্ছে প্রতিদিন। অনেক গর্ভবতী নগরীর রাস্তায় প্রতিদিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তহবিল সংকটের মধ্যেও ২১ আগস্টের বর্ষণের পরে সিটি করপোরেশন থেকে নগরীর বেশ কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তায় বালু ও খোয়া দিয়ে সাময়িক জোড়াতালি দেয়া শুরু হলেও সপ্তাহ ঘুরতেই তা পূর্বাবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। যদিও সিটি মেয়র নগরীর সদর রোডসহ প্রধান সড়কগুলো মেরামত ও পুনর্বাসনে নিজস্ব তহবিল থেকে ঠিকাদার নিয়োগের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু বর্ষা পরোপুরি বিদায় না নেয়ায় সে সব কাজ সম্পন্ন করতেও আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে। ফলে দুর্ভোগ আপাতত নগরবাসীকে ছাড়ছে না।
উপরন্তু তহবিল সংকটে বরিশাল সিটি করপোরেশন যেখানে প্রশাসনিক ব্যয় মেটাতে পারছে না, সেখানে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণসহ উন্নয়ন কাজ করার স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ কোথায়? এমন প্রশ্ন ওয়াকিবহাল মহলের।
গত ১৭ আগস্ট চলতি অর্থ বছরের জন্য বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৪৪৪ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণাকালে সিটি মেয়র ১১৮ কোটি টাকার নিজস্ব তহবিল থেকে আয়ের একটি পরিসংখ্যানও প্রদান করেছেন। অথচ এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্সসহ পানির বিল ও একান্ত আয় ধরা হয়েছে মাত্র ৩৩ কোটি ২৯ লাখ টাকার কিছু বেশী। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-বোনাসসহ প্রশাসনিক ব্যয় ৪২ কোটি ২৩ লাখ টাকারও বেশী। ফলে শুধুমাত্র প্রশাসনিক খাতেই নগর ভবনকে ৮ কোটি টাকারও বেশী ঋণ নিয়ে চলতে হচ্ছে। নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী বেতন-বোনাস দেয়া শুরু হলে প্রশাসনিক ব্যয় আরো কয়েক কোটি টাকা বাড়বে। ফলে এ নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া বর্তমানের ৪ মাস থেকে ৮ মাসে উন্নীত হলেও আশ্চর্যের কিছু নাও থাকতে পারে। আগামীতে নগর প্রশাসনের বেতন-বোনাস পরিশোধই দুরূহ হয়ে পড়বে।
একদিকে প্রায় দ্বিগুণ দৈনিক মজুরীভিত্তিক কর্মী, অপরদিকে রাজনৈতিক কারণে বরিশাল সিটি করপোরেশনের জন্য সরকারী থোক বরাদ্দসহ উন্নয়ন বরাদ্দ ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটির অর্থনৈতিক দুরবস্থা ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
এক সময়ে পরিচ্ছন্ন বরিশাল মহানগরী ক্রমশ ময়লা-আবর্জনার নগরীতে পরিণত হচ্ছে। এর সাথে ভাঙা রাস্তা-ঘাট মেরামতসহ উন্নয়ন কাজ তহবিল সংকটে ব্যাহত হবার বিষয়টি নগরবাসীকে যথেষ্ট কষ্ট দিচ্ছে।
এসব ব্যাপারে সিটি মেয়রসহ একাধিক কাউন্সিলরের বক্তব্য, ‘তারা চেষ্টা করছেন সীমিত সাধ্যের মধ্যেও সর্বোচ্চ নাগরিক পরিষেবা নিশ্চিত করতে। এজন্য তারা নগরবাসীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।