Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংঘর্ষ-ভাঙচুর ও নানা অনিয়ম

তৃতীয় দফায় ৬২ পৌরসভার নির্বাচন সম্পন্ন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা বিজয়ের পথে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, ভাঙচুর, নির্বাচন বর্জন, প্রিজাইডিং অফিসারসহ নির্বাচনি কর্মকর্তাদের ব্যালটে সিল মারার অভিযোগের মধ্য দিয়ে শেষ হলো তৃতীয় দফার ৬২ পৌরসভার নির্বাচন। গতকাল সকাল ৮টায় শুরু হয়ে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। মারামারি-ভাঙচুরের ফলে আতঙ্কে অনেক পৌরসভায় শুরু থেকে ভোটারের উপস্থিতি ছিল অনেক কম। আবার বেশ কয়েকটি পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য ভোটারের উপস্থিতি ছিল। এই তৃতীয় ধাপের নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা একচেটিয়া বিজয় লাভের পথে রয়েছে।

কটিয়াদীতে সংঘর্ষ, রামগঞ্জে গোলাগুলি, ধুনটে ও ফেনীতে প্রার্থীকে মারধর এবং গৌরীপুরে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সিংড়া, দর্শনা, কটিয়াদী, কলারোয়া, সরিষাবাড়ীসহ বেশ কয়েকটি পৌরসভায় বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে দেশের ২৪টি পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এগুলোতে বিএনপি মাত্র ২টিতে জয়ী হয়েছে। এ ছাড়া ৩টিতে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ) এবং বাকিগুলোতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জয়ী হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌরসভা নির্বাচন গত ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৫৮টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়। যার মধ্যে ৪৪টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ৪টিতে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।

গতকাল ৬৩ পৌরসভায় ভোট হওয়ার কথা থাকলেও কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরের সব পদে একক প্রার্থী থাকায় সেখানে ভোট গ্রহণের দরকার পড়ছে না। তাই গতকাল ৬২টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয়। এই ধাপের সবগুলো পৌরসভায় ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হয়। অনিয়ম ঠেকাতে ভোটের দিন সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পাঠায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তারপরও টাঙ্গাইলের ভ‚ঞাপুর পৌরসভার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মতো কয়েকটি কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারের বিরুদ্ধে নিজেরাই সিল মেরে ভোটের বাক্স ভরে দেয়ার অভিযোগ উঠে। এ পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলায় নারীসহ ১০ জন আহত হয়েছে। লক্ষীপুরের রামগঞ্জ পৌরসভায় দু’পক্ষে সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এছাড়াও বিভিন্ন কেন্দ্রে সরকারি দলের মেয়র প্রার্থীর সঙ্গে দলীয় প্রতিপক্ষ বা অন্য দলের মেয়র প্রার্থীর, কোথাও কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংর্ঘষ ঘটেছে। মুন্সীগঞ্জে পৌরসভা নির্বাচনে জোর করে ব্যালট ছিনিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারা ঠেকাতে না পারায় এক সহকারী প্রিজাইডিং ও এক পোলিং অফিসারকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তারা হচ্ছেন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এমরান আলী ও পোলিং অফিসার মজিবর রহমান।

টাঙ্গাইলের মধুপুর ও বরিশালের গৌরনদীসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্র দখল, ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে বিএনপি প্রার্থী মো: তোফাজ্জল হোসেন খাঁন দিলীপ নির্বাচন বর্জন করেছেন। গতকাল সকাল ১১টায় তার নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে বাধা দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনে কলারোয়ায় বিএনপি মোননীত মেয়রপ্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চৌমুহনী ও হাতিয়া পৌরসভার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু কেন্দ্রের বাহিরে বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি ককটেল ও ফটকার বিষ্ফোরণ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে এখন চলছে ভোট গণনা। এরআগে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, তৃতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে বগুড়ার ৫ পৌরসভা যথাক্রমে গাবতলী, শিবগঞ্জ, কাহালু, নন্দীগ্রাম ও ধুনট পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে শিবগঞ্জ পৌরসভার বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মতিয়ার রহমান মতিন ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তিনি নির্বাচন অফিসের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী তৌহিদুর রহমান মানিকনি প্রভাব বিস্তার করে প্রতিটি কেন্দ্রই দখলে নিয়ে কারচুপি ও অনিয়ম করে একতরফাভাবে ভোট কেটে নেন। তাই তিনি বাধ্য হয়ে ভোট বর্জন করলেন।
তবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক ভোটে অনিয়ম এবং কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সকাল থেকেই ভোটাররা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দিচ্ছেন। কোনো অনিয়ম বা কারচুপির ঘটনা ঘটেনি। বিএনপি প্রার্থী তার পরাজয় নিশ্চিত জেনেই নিজের সম্মান রক্ষার্থে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসার জানান, ভোট বর্জনের বিষয়টি তিনি জানেন না। তাই এব্যাপারে তার কিছুই করনীয় নেই ।
ফেনী জেলা সংবাদদাতা জানান, ফেনীতে পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেখা যায় ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদেরকে যেতে বাধা দেয়া হচ্ছে। পথে পথে সরকার দলীয় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভোটারদেরকে ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দিচ্ছে এবং তাদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও দেখা যায়, পৌরসভার কেন্দ্রের পাশের এলাকার ইউনিয়ন ওয়ার্ড থেকে চেয়ারম্যান, মেম্বার, আ.লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অসংখ্য নেতাকর্মীরা বিভিন্ন কেন্দ্রে আশপাশে অবস্থান নেয়। কয়েকটি কেন্দ্রে তাদেরকে প্রকাশ্যে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করতে দেখা যায়।
সরকার দলীয় কিছু নেতাকর্মীদের গলায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার সাক্ষরিত সাংবাদিকদের প্রেসকার্ড দেখা যায়। তারা পর্যবেক্ষণে থাকা সাংবাদিকদের দেখে কার্ড লুকিয়ে ফেলে। এদিকে সকাল ৮টার দিকে মধ্যম চাড়িপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেলা যুবলীগ নেতা আজাদকে প্রকাশ্যে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করতে দেখা যায়, সাড়ে ৯টার দিকে রামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রকাশ্যে সিল মারতে দেখা যায় সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আবদুল মোতালেব চৌধুরী রবিন ও তার সেক্রেটারি এমরানকে। জিএ একডেমি কেন্দ্রে ভোট শুরুর পূর্বে স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী ফজলুল হক তালুকদারের (গাজর)তার মোবাইল ফোন ছিনতাই সহ টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায় সরকার দলীয় ক্যাডাররা। তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। এই কেন্দ্রেও কাজীরবাগ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বুলবুলের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা হয়।
সকাল ১০ টার দিকে ফেনী ল্যাবরেটরি হাই স্কুল কেন্দ্রে ভোটের আগে বিজয়ী কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল কালামের নেতৃত্বে ব্যালট পেপারে সীল মারার ধুম চলে। বিএনপির প্রার্থী কোন এজেন্টকে ডুকতে দেয়া হয়নি। সেখানে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা প্রিজাইডিং অফিসার সাহেদুল ইসলাম, জাল ভোট দেয়ার সময় হাতে নাতে ধরে ৩ জনকে পুলিশে দেয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রামপুর মেহেদী সাইদী পৌরবিদ্যা নিকেতন স্কুল কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদেরকে বাহির করে দেয় সরকার দলীয় ক্যাডাররা। কেন্দ্রের আশপাশে ককটেল পাটিয়ে ভোটারদেরকে আতঙ্কগ্রস্থ করা হয়। সেখানে থাকা বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থী এম নরুল ইসলামকে ব্যাপক মারধর করে তার হাত ভেঙে দেয়া হয়। অপর স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী তাজুল ইসলাম পাভেলকে পিটিয়ে তার পা ভেঙে দেয় আ.লীগের সন্ত্রাসীরা। আহত কাউন্সিলররা জানান, ভোটের আগের রাত থেকে তাদের বাড়িতে গিয়ে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে না যেতে বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেন, বাড়ি ঘরের দরজা জানালা ভাঙচুর করেন। এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলেন। সকালে তাদের এজেন্ট ডুকতে দেয়া হয়নি। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলেও ভোটররা ভয়ে কেন্দ্রে যায়নি।
এদিকে ১৪ নং ওয়ার্ড কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার শহীদুর রহমান জানান, সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি বেশ ভালো ছিল। কিন্তু কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা কেন্দ্রের বাহিরে ঘটেছে ভিতরে ঘটেনি। কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল আতোয়ার রহমান বলেন, কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন। তবে হামলায় কেউ আহত হয়েছে এ ব্যাপারে কেউ আমাদেরকে অভিযোগ করেনি। এদিকে দুপুর ১ টার দিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আলাল উদ্দিন আলাল তার নিজের দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি বলেন ফেনীতে কোন নির্বাচনই হয়নি। চর দখলের মতো সব কেন্দ্র দখল করে নিয়েছেন। এটা কিসের নির্বাচন। যেখানে ভোটাদেরকে ভোটকেন্দ্রে ডুকতে দেয়া হয়নি।
ঝালকাঠি জেলা সংবাদদাতা জানান, ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভা নির্বাচনে বহিরাগতদের কেন্দ্র দখল, অনিয়ম, ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী (সতন্ত্র) কে এম মাছুদ খান ও বিএনপি মনোনিত মেয়র প্রার্থী মো. মজিবুর রহমান নির্বাচন বর্জন করেছেন। গতকাল সকাল ১০টায় এক ভিডিও বার্তায় মাছুদ খান ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। নির্বাচন একপেশে হচ্ছে জানিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. মজিবুর রহমান বেলা ১২টার দিকে ভোট বর্জন করেন। তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে দাবি করে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ খান বলেন, ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হয়েছে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বিঘেœ ভোট দিয়েছেন। পরাজয় বুঝতে পেরে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীরা ভোট বর্জন করেছেন। এদিকে শংকরপাশা কেন্দ্রে থেকে বেলা ১২টার দিকে আবদুর রহমান (১৮) নামে এক যুবককে কেন্দ্রের মধ্যে চাকু নিয়ে প্রবেশ করায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে জানান, কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বসহ অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগ এনে কিশোরগঞ্জ ও কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপিসহ এক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রার্থীরা হলেন কিশোরগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইসরাইল মিয়া, কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ ও একই পৌরসভা নির্বাচনে মোবাইল ফোন প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সালমা আনিকা।
দুপুর দুইটায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইসরাইল মিয়া বলেন, আমার এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করে নেয়া ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের কারণে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ সময় সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা, রুহুল হোসাইন ও শরীফুল ইসলাম, সিনিয়র সহ সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম, পৌর বিএনপির আহবায়ক আমিনুল ইসলাম আশফাক।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টায় কটিয়াদী পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ ও একই পৌরসভা নির্বাচনে মোবাইল ফোন প্রতিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও উপজেলা স্বেচ্ছঅসেবক লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালমা আনিকা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। নিজ নিজ বাসভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তারা কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া ও প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বসহ নির্বচনে অনিয়মের অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন। বিএনপি প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন খান দিলীপ এর সংবাদ সম্মেলনে জেলঅ বিএনপির সহ সভাপতি রুহুল আমিন আকিল, উপজেলা বিএনপিসাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম কাঞ্চন উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট কারচুপি, এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারা ও নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট সরবরাহের অভিযোগে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শরিফুজ্জামান তুহিন ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নার্গিস সুলতানা ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আসাদ খান, কাউন্সিলর প্রার্থী রফিকুল ইসলাম ও মোজাহিদুল ইসলাম ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদের মধ্যে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শরিফুজ্জামান তুহিন ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নার্গিস সুলতানা তাদের নিজ কার্যালয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী নার্গিস সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট কেড়ে নিয়ে নৌকা প্রতীকে সিল মারা হচ্ছে এবং কোথাও কোথাও নৌকা প্রতীকে সিল মারা ব্যালট সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি নজিরবিহীন ভোট কারচুপির অভিযোগে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।
অপরদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থী শরিফুজ্জামান তুহিনও একই ধরনের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়ে বলেন, তিনি প্রতিকার চাইতে উপস্থিত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সহযোগিতা চাইলেও তাকে সহযোগিতা করা হয়নি। বরং মারধর করে বের করে দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, শেরপুর জেলার নকলা ও নালিতাবাড়ী পৌরসভার নির্বচন সকাল ৮টার সময় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সকালে ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে জানান প্রার্থীরা।
নকলায় পাইলট স্কুল কেন্দ্রে ভোটের শুরুতেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর একজন এজেন্টকে মারধর করে। এছাড়াও কয়েকটি কেন্দ্র থেকে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রার্থীরা। এসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজুর রহমান লিটন নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে এবং তিনি নিশ্চিত বিজয় হবেন বলে আশা করেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান জানান, তার এজেন্টকে মারধোর করা হচ্ছে। এর পরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তিনি বিজয়ী হবেন।
বিএনপির প্রার্থী এনামুল হক রিপন জানান, আমার এজেন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্র থেকেও বের করে দেয়া হয়েছে। ভোটে যাতে আগেভগে কোন কারচুপি করতে না পারে সে জন্য ভোরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছানো হয়।
টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, ৩য় ধাপে টাঙ্গাইলের পাঁচটি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। পৌরসভা গুলো হচ্ছে টাঙ্গাইল সদর, মির্জাপুর, মধুপুর, ভ‚ঞাপুর ও সখীপুর। এর মধ্যে ভ‚ঞাপুর পৌর নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এক পক্ষের সোমেলা বেগম নামের এক নারীসহ ১০জন আহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে পৌরসভার কুতুবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, ভ‚ঞাপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী পানির বোতল প্রতীকের আনোয়ার হোসেনের সমর্থিতরা জাল ভোট দেওয়া শুরু করে। পরে বিষয়টি নিয়ে কাউন্সিলর প্রার্থী উটপাখি প্রতীকের জাহিদুল ইসলামের সমর্থকরা প্রতিবাদ করে।
এক পর্যায়ে জাহিদুলের এজেন্টসহ সমর্থকদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। এসময় আনোয়ার গ্রæপের লোকজন জাহিদুল ইসলামের সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ধারালে অস্ত্র দিয়ে কুপি জাহিদুলের পক্ষের এক নারীসহ ১০ জনকে আহত করে। এসময় সোমেলা বেগমসহ দুইজনের হাতের কবজ্বি ও দুইজনের আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এদিকে ওই কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। বিষয়টি নিয়ে ঐ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
১নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার শাহীনুল ইসলাম বলেন, দুই কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় ৩০-৩৫ মিনিট ভোটগ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। এখন ভোটগ্রহণ চলছে।'
এদিকে মধুপুরে অনিময় ও এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলে বিএনপির মেয়র প্রার্থী আব্দুল লতিফ পান্না নির্বাচন বর্জন করেছে।
সিংড়া (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নাটোরের সিংড়া পৌর নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ভোট বর্জন করলেও পৌলিং এজেন্টরা ছিলো শেষ পর্যন্ত। ভোট কেন্দ্রের কোন কোন পৌলিং এজেন্ট ভোট অবাধ-নিরপেক্ষ সুষ্ঠ হওয়ার কথা জানিয়েছেন। আবার কোন কোন ভোট কেন্দ্রের পৌলিং এজেন্টরা বিএনপির ভোট বর্জনের বিষয়টি জানেন না।
বেলা ১টায় পৌর বিএনপির কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাইজুল ইসলাম ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তবে পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে বিএনপির পৌলিং এজেন্টরা শেষ পর্যন্ত ভোট কেন্দ্রে ছিলেন। কারো কারো অভিযোগ ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে সিল মারা হয়েছে।
সিংড়া পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডে বিএনপির পৌলিং এজেন্ট মো. রিয়ার মোস্তফা ভোট কেন্দ্রে থাকাবস্তায় ওই কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাফুল ইসলাম সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে তিনি বলেন, আমি সাক্ষাতে কথা বলব। বেলা ১টায় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক এড.মুজিবুর রহমান মুন্টু, সদস্য সচিব দাউদার মাহমুদসহ উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা উপস্থিত হয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তাদের অভিযোগ ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই পৌর এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে সরকার দলীয় কর্মীরা ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কায় সিল মারে।
মোরেলগঞ্জ(বাগেরহাট) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। কেন্দ্র ও ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ, আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিটি কেন্দ্রের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে রয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পৌরসভার নির্বাচন

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ