Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কুষ্টিয়ার খোকসায় বালুর বদলে কাটছে নদীরপাড় ফসলিজমিসহ হুমকীর মুখে শতাধিক পরিবারের বসতভিটা

কুষ্টিয়া থেকে স্টাফ রির্পোটার | প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০২১, ৫:৩৬ পিএম

প্রায় ৩০ বছর আগে থেকে গড়াই নদী পাড়ের জমে থাকা কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ওসমাপুর ইউনিয়নের ১ নং খাস খতিয়ানের জমি ডিসিআর ও স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে প্রায় শতাধিক ভূমিহীন পরিবার বসবাস ও চাষাবাদ করে জীবিকার্জন করে আসছে।তিন ফসলী জমি হিসেবে ভূমিহীন পরিবার গুলো ওই জমিতে চাষাবাদ করে।বর্তমানে জমিতে শষ্য, রায়, কলাবাগান,খেসারী,মটরশুঁটি, গমসহ নানাবিধ ফসল রয়েছে।কিন্তু ৩০ বছর পরে হঠাৎ করে স্থানীয় বালুমহাল উক্ত জমির ইজারাদার দাবি করে ফসলসহ মাটি কেটে ভাটায় বিক্রি করছে।ফলে নিজেদের দাবি করে ফসল ও আবাদী জমি রক্ষায় মানববন্ধন করেছে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হিজলাবট চরের ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা। শুক্রবার দুপুরে হিজলাবট আবাসন এলাকায় ফসলী জমিতে মানববন্ধন করেন তারা।

জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারী জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে প্রায়২৫ লক্ষাধিক টাকায় হিজলাবট বালুমহাল ইজারা পাই কুমারখালীর সদকী ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পাথরবাড়িয়া গ্রামের মৃত আমদ আলীর ছেলে মাসুদ রানা।তার ব্যবসায়ী পার্টনার খোকসা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বাবুল আক্তার ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মাছুম মুর্শেদ শান্ত। বালুমমহালের শর্ত অনুয়ায়ী নদীর গভীর থেকে বালু কাটার নিয়ম থাকলেও ইজারাদার প্রভাব দেখিয়ে ৩০ বছর ধরে জমে থাকা নদীর পাড়ের মাটি ও ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে বসতবাড়ি ও ফসলী জমি হুমকির মুখে পড়ায় মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগীরা।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী মজিবর মন্ডল বলেন, ৩০ বছর ধরে জমি চাষ করছি।এত বালু কাটল,কিন্তু কোনদিন কেউ এখানকার মাটি কাটেনি।এবারই ফসলসহ মাটি কাটে নেচ্ছে ওরা।কিছু বললেই বলে হ্যান্ডক্যাপ পরা নিয়ে যাব।তিনি আরো বলেন, ৩০ হাজার টাকা খরচ করে সার ফাষ দিয়ে চাষ করছি।জমির ফসল দিয়েই সংসার চলে।হিজলাবট চরের আদর্শ গ্রামের রহমতের স্ত্রী খুশি বলেন, আমরা আবাসনে বাস করি।নদীর মাঝখানে সরকার আমাদের জমি দেছে।ওরা জোড় করে কাটে নিচ্ছে।বাঁধা দিতে গেলে ইউএনও প্রশাসনকে নিয়ে এসে ভয় দেখাচ্ছে। দুচোখের জল ছেরে দিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা লোন তুলে কিস্তি নিয়ে চাষাবাদ করে মাক ছোয়ালপাল নিয়ে খায়।এই মাটি কাটে নিলে আমরা কি খাব।তিনি বলেন, ইউএনও যদি প্রশাসন নিয়ে এ্যাম্বো করে তাহলে সরকার আমাদের বিষ কিনে দিক, খ্যায়া মরে যায়।তাছাড়া কি করব, আমরা গরিব মিছকিন। খানপুর মৌজার জেলে সামছুলের স্ত্রী কেঁদেকেটে বলেন, আমার ফ্যাসারী মটর কাটে নেচ্ছে।বাবুল আক্তার, শান্তুর কাছে গিছি, মাসুদের পাও ধরিছি কিচ্ছু হচ্ছেনা। আমার স্বামী প্রতিবাদ করায় পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।জেল খাটতেছে।আমার চার ছোয়াল পাল নিয়ে না খেয়ে আছি। তিনি আরো বলেন, টিএনও’র কাছে গিছি, সে বলেছে চরে কোনে মাটি থাকবে না, যেসরকার বসায়ছে, সেসরকার তুলে দিবে।৭০ বছর বয়সের ওমর আলী বলেন, ৯৯ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে ৩১ শতক জমি পেয়েছি, সেখানে ঘর, দোকান ও চাষাবাদ করে খায়। মাটি কাটে নিলে না খেয়ে মারা যাব।
হিজলাবট বালুমহালের ইজারাদার মাসুদ রানা মুঠোফোনে বলেন, দুই লাখ টাকার ঘাট ২৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছে।প্রশাসন যেখানে দেখা দেছে, সেখানে কাটছি।অবৈধ না বৈধ তা আমার জানা নেই।
খোকসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেজবাহ উদ্দিন বলেন, বালুমহালের এড়িয়ার মধ্যে বালু থাকলে বালু কাটবে, মাটি থাকলে মাটি কাটবে ইজাদার। সেখানে আমার কিছু করার নেই।তিনি আরো বলেন, দীর্ঘদিন চর দখল করে বসে আছে অনেকে।তবে তাদের বন্দোবস্ত বা ডিসিআরের কাগজ আছে কিনা তা জানা নেই।আমাকে কেউ কিছু জানাইনি, জানালে দেখা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বালু

৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৪ ডিসেম্বর, ২০২১
২১ নভেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ