সড়ক দুর্ঘটনায় জিডিপির ক্ষতি ১ দশমিক ৬ শতাংশ
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : সড়ক দুর্ঘটনার আর্থিক ক্ষতি বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির ১ দশমিক ৬ শতাংশ বলে জানিয়েছে ইউনাইটেড নেশনস ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল
আ বু তা হে র
(পূর্বে প্রকাশের পর)
যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না, সেখানে নাইট গার্ডদের উৎসাহ সবার চোখে পড়ল। তারপর শুরু হলো অভিযান। নাইট গার্ডদের অনেকেই নজরে রাখতে শুরু করল। কেউ কেউ রাতের বেলায় দূর থেকে তাদের উপর নজরদারি শুরু করল। বেশ কয়েকদিন এভাবেই গেল। তারপর ফলাফল বের হলো। ওদিকটায় কলোনির সংখ্যা কম হওয়াতে গাছপালার সংখ্যাই বেশি ছিল। তারপর মানুষের আনাগোনা কম হওয়াতে বাগানগুলো রীতিমতো বনে পরিণত হলো। বেশিরভাগই ফলের গাছ। নারকেল গাছ আছে অনেকগুলো। এছাড়াও আম, কাঁঠাল, লেবুসহ অনেক গাছ। কোনো না কোনো গাছে সারা বছরই ফল থাকে। আর এই ফলের লোভ সামলাতে পারছিল না গার্ডগুলো। রাতের বেলা চলে ফল চুরির ধুম। জঙ্গলবাড়ির ভয়ানক এই বিষয়গুলো যেন তাদের স্পর্শই করত না।
একদিন বিকালে হাবিব তার বন্ধুদের সাথে খেলার মাঠের কাছেই বসেছিল। হাবিব তুই শুনেছিস ইদানীং নাকি জঙ্গলবাড়ির উপরের তলাতেও আনাগোনা বেড়েছে। কোনো বাতাস নেই তারপরও হঠাৎ করে দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
ঘুটঘুটে অন্ধকারে অনেক জোড়া চোখ দেখা যায়।
হু, শুনেছি কিন্তু কিছুই মাথায় ঠুকছে না। কলোনির মূল দরজা বন্ধ ইট দিয়ে। কলোনিতে ঢোকার রাস্তা ঐ একটাই। যদিও নিচতলার কয়েকটা জানালা খোলা আছে। কিন্তু জানালার গ্রিল এতই ঘন যে ওর ভেতর দিয়ে কেউ ঢুকতে পারবে না।
আমি নিশ্চিত ওগুলো ভুতের কাজ। অনেকটা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল রাশেদ।
রাশেদের কথায় কেউ প্রতিবাদ করে না। তাদের অনেকেরই বিশ্বাস এগুলো জীন পরীর কাজ। কিন্তু হাবিব এগুলো মানতে চায় না। জীনদের শুধু চোখ দেখা যাবে কেন?
ওর এই কথা খুব একটা বেশি পাত্তা দেয়নি ওর বন্ধুরা। ওরা বলেছে, ভুতেরা কি তোকে পুরো শরীর দেখিয়ে বেড়াবে নাকি? পুরো শরীর দেখালে তুই ভয় পাবি? ভুতের কাজই হলো মানুষকে ভয় দেখানো।
হাবিব চিন্তায় ডুবে যায়। ওর যে খুব বেশি সাহস তা নয়। তারপরেও...
চলনা একবার ঘুরে আসি ঐ বাড়ির সামনে থেকে।
তোর তো ভালো সাহস।
এখন দিনের বেলা। চারদিকে সূর্যের আলো ছড়িয়ে আছে। তার উপর ওখানে গেলে দু’একজন গার্ডও পাওয়া যাবে। ভয় কিসের? আমরাও তো কয়েকজন আছি। চল যাই।
কেন যাবি? গম্ভীর গলায় বলল রাশেদ।
এমনি দেখতে যাব। চল যাই। বলেই দাঁড়িয়ে পরে হাবিব। তার সাথে আরো কয়েকজন দাঁড়িয়ে যায়। হাঁটা শুরু করে তারা। রাশেদ চুপ মেরে বসে থাকে। সে শুনেছে জীনেরা পরে এর প্রতিশোধ নেয়। অযথা ওদেরকে ঘাঁটাঘাঁটি করতে চাচ্ছেনা ও।
রাস্তার শেষ মাথায় এসে দাঁড়ায় ওরা। দু’জন গার্ডকে অদূরে গল্প করতে দেখা গেল। রাস্তাটা ডানে বামে দুদিকে চলে গেছে। আর এই রাস্তাটা থেকে ছোট একটা রাস্তা কলোনির দিকে গেছে। জঙ্গলে ভরা রাস্তাটা। কিছু জায়গার জঙ্গল পরিষ্কার করে কে যেন বেগুন গাছ লাগিয়েছে। তাহলে মানুষের আনাগোনা আছে। কিছুটা সাহস ফিরে পায় হাবিব।
দেখ কে যেন বেগুনের ক্ষেত করেছে।
সবাই একনজর বেগুন গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে আবার কলোনির দিকে তাকায়।
কি করবি এখন? হাবিবের কাছে জানতে চায় পলাশ।
তেমন কিছু না। দূর দিয়ে কলোনিটা একটু ঘুরে দেখব।
হাবিব বামের রাস্তা ধরে হাঁটা দেয়। গার্ডগুলো ওখানেই বসে আছে। ওদের দেখে এক গার্ড মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করে,
কি ব্যাপার তোমরা এদিকে?
এমনি।
এদিকে আসা ঠিক না। সাপ, বিচ্ছু আছে। তার উপর বাড়িটাও বিশেষ ভালো না।
গার্ডের কথা হাবিবের বিশ্বাস হয় না। ওরা চায়ই এদিকে মানুষ না আসুক। তাহলে ওরা ফলগুলো সব ভক্ষণ করতে পারবে।
যাও যাও। সন্ধ্যাও হয়ে আসছে।
হাবিব গার্ডের কথা শুনেও না শোনার ভান করে। সে তাকিয়ে আছে কলোনিটার দিকে। কলোনির দরজাটা তারা ওপাশে ফেলে এসেছে। আনমনে হাঁটতে থাকে ওরা। কলোনিটার পেছন দিয়ে আরো একটি পাকা রাস্তা চলে গেছে। রাস্তার পাশেই উঁচু দেয়াল। দেয়ালের উপর কাঁটাতারের বেড়া। এ রাস্তা ধরে অনেকদূর পর্যন্ত মানুষের আনাগোনা নেই।
চল হাবিব ফিরে যাই। কিছু ভয়ে ভয়ে বলল পলাশ।
হ্যাঁ চল যাই, তবে এই রাস্তা দিয়ে।
তোর মাথা ঠিক আছে। অনেকদূর হাঁটতে হবে তাহলে আমাদের।
তো কি হয়েছে। সামনের ঐ বাঁকে গেলেও গার্ডদের পাবি।
হাবিব কলোনির পেছন দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে হাঁটছে। হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় তিন তলার জানালার দিকে। নিজের অজান্তেই গায়ের লোমগুলো তার খাড়া হয়ে যায়। পরক্ষণেই একটা ফোঁস করে একটা দম ছাড়ে ও। ওকে দেখে ওর বন্ধুদেরও পিলে চমকে যায়। তারাও কলোনির দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছুই দেখতে পাচ্ছে না ওরা। হাবিব দ্রুত আরো একটু সামনে এগিয়ে যায়। একটু দূরেই ঘাসের জঙ্গলে কি যেন লড়ে উঠল। হাবিব দৌড় দেয়। ওকে দেখে ওর বন্ধুরা আরো জোড়ে দৌড়। হাবিব একটু এগিয়ে থেমে যায়। কিন্তু ওর বন্ধুরা ভোঁ দৌড়। তারা দেখেছে জঙ্গলে কি যেন লড়ে উঠেছে। তারপর খসখস করে ঘাসের ভেতর দিয়ে কি যেন চলে গেল। নির্ঘাত ভুত।
হাবিব দাঁড়িয়ে আছে। ঘেমে গেছে ও। কিন্তু ভয় লাগছে না তার। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। হাসতে লাগল হাবিব। অনেকখানি দূরে গিয়ে ওর বন্ধুরা দাঁড়িয়ে পড়েছে। তাকিয়ে আছে হাবিবের দিকে। হাবিব জোরে ডাক দেয় ওদের। কিন্তু হাবিবের হাসি দেখে ওদের ভয় আরো বেড়ে গেছে।
পলাশ দেখে যা, তাড়াতাড়ি আয়।
পলাশ পা বাড়ায়। ওর দেখাদেখি বন্ধুরা পা চালায়। হাবিবের গা ঘেঁষে দাঁড়ায় ওরা। হাবিব কলোনির পেছনের দিকে নিচতলার ডান পাশের ফ্লাটটা দেখায়। ওটা একটা রান্নাঘর। পাশ দিয়েই ময়লার ড্রেন। রান্নাঘরের নিচে একটা ছোট পাইপলাইন আছে, যেটা দিয়ে পানি বের হয়। অনেকদিন অব্যবহৃত থাকায় পাপই ভেঙে গেছে। প্লাস্টার খসে গেছে। দুটো ইট ভেঙে পড়ে গেছে। ছোটখাট একটা ফাঁক তৈরি হয়ে গেছে রান্নাঘরে ঢোকার।
কি দেখালি? জানতে চায় পলাশ।
রান্নাঘরের নিচে একটা ফোঁকড়।
তো!
হাবিব দ্বিতীয় তলার একটা জানালার দিকে ইশারা করে। সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। একটা শিয়াল। জানালা দিয়ে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে।
এবার বুঝলি। শিয়ালগুলো ঐ ফোঁকড় দিয়ে কলোনিতে প্রবেশ করে। তারপর রাতভর ঘুরে বেড়ায় এ তলায়, ও তলায়। আর মাঝে মাঝে ঘুটঘুটে অন্ধকারে জলজল করা চোখে তাকিয়ে থাকে মানুষের দিকে। আমার মনে হয় বাকি গল্পগুলো বাড়িয়ে বলেছে গার্ডগুলো। ফল চুরি করার জন্য। যাতে করে কেউ যেন এদিকে না আসে।
হাবিব হাঁটা শুরু করে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কিন্তু সবার বুকটা এখন হালকা লাগছে। কারো কোনো ভয় লাগছে এই সন্ধ্যায়। তারা বুক ফুলিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর তাদের পেছনে জলজল করা চোখে তাকিয়ে আছে কয়েকটা শিয়াল। (সমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।