পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নেক সন্তান আল্লাহপাকের অনেক বড় নেয়ামত। সন্তান যাতে করে সু-সন্তান হয় সে বিষয়ে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। সন্তানদেরকে সু-সন্তান হিসেবে গড়ে তুলে তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো পিতা মাতারদায়িত্ব। আজ রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জুমার বয়ানে ইমাম খতীবরা এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে নগরীর মসজিদগুলোতে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পেশ ইমাম মুফতি মুহিউদ্দীন কাসেম আজ জুমার বয়ানে বলেছেন, নেক সন্তান আল্লাহপাকের অনেক বড় নেয়ামত। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন, “সম্পদ ও সন্তান দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য।”
তবে এই সন্তান যাতে করে সু-সন্তান হয় সে বিষয়ে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। (সূরা তাহরীম (৬৬) : ৬)
সুতরাং সন্তানদেরকে সু-সন্তান হিসেবে গড়ে তুলে তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো পিতা মাতারদায়িত্ব। কারণ সন্তান যদি কু-সন্তান হয় তাহলে এর বোঝা দুনিয়া এবং আখেরাতে পিতা মাতাকেই বহন রতে হবে। হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রত্যেকে দায়িত্বশীল। প্রত্যেকে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ইমাম (রাষ্ট্রপ্রধান) জনগণের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পুরুষ পরিবারের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। মহিলা তার স্বামীর ঘর ও সন্তানের দায়িত্বশীল। তাকে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল। তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। সুতরাং তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকে তার অধীনদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। সহীহ বুখারী, হাদীস ২৫৫৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮২৮।
মনে রাখতে হবে প্রতিটা সন্তানই ইসলামের উপর জন্মগ্রহণ করে। তাইতো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি শিশু ফিতরত (সত্য স্বভাব)-এর উপর জন্মগ্রহণ করে। পরে তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি বানায় কিংবা খ্রিস্টান বানায় কিংবা অগ্নিপূজক বানায়। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫৮)।
এ কারণেই সন্তান যদি পথ হারা হয়ে জাহান্নামী হয়ে যায় তাহলে এই আদরের সন্তানই কেয়ামতের মাঠে যাদের কারণে তারা বিপদগামী হয়েছে তাদেরকে এভাবে খুঁজতে থাকবে। তারা বলতে থাকবে
হে আমাদের রাব্ব! যে সব জিন ও মানুষ আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল তাদের উভয়কে দেখিয়ে দিন, আমরা উভয়কে পদদলিত করব, যাতে তারা লাঞ্ছিত হয়। (সুরা হামীম সেজদা ২৮)
পক্ষান্তরে এই সন্তান যদি আদর্শ সন্তান হয় সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে এসেছে ,
মানুষের মৃত্যুর পর তিনটি আমল ছাড়া আর সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। সদকায়ে জারিয়া। এমন ইলম, যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় এবং নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৩১০)।
সন্তানদের সর্ব প্রথম তাওহীদের শিক্ষা কুরআন ও সুন্নাহের শিক্ষা দিতে হবে ৷ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
তোমরা তোমাদের শিশুদের সাত বছর বয়সে সালাতের তালীম দাও। আর যখন দশ বছর হয়, তখন তোমরা তাদের সালাত আদায় না করার কারণে প্রহার কর। আর তোমরা তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।”(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৫)।
আল্লাহ পাক আমাদের সন্তানদের বিষয়ে যত্নবান হওয়ার তৌফিক দান করুন। আমীন!
ঢাকার ইসলামবাগ বড় মসজিদের খতীব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী আজ জুমার খুৎবাপূর্ব বক্তব্যে পবিত্র কুরআনের সূরা শুরার ৩০নং আয়াতের মর্মার্থ তুলে ধরে বলেছেন যে, এই আয়তের মধ্যে স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করা হয়েছে; যত প্রকার বিপদ তোমাদেরকে স্পর্শ করে তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে। আর অনেক গুনাহ তো আল্লাহ ক্ষমাই করে দিয়ে থাকেন। এতে প্রতীয়মাণ হয় যে, দয়াময় রাব্বুল আলামীন সকল পাপের শাস্তি দুনিয়াতে মানুষকে দেন না। সূরা নাহলের ৬১ ও সূরা ফাতিরের ৪৫ নং আয়াতদ্বয়ের মধ্যে চিন্তা করলে তো এ কথাই সামনে আসে যে, আল্লাহ তায়ালা যদি সকল মানুষকে তাদের কৃতকর্ম বা অপরাধের জন্য পাকড়াও করতেন তাহলে মানুষ তো দূরের কথা কোন প্রাণীও পৃথিবীতে বাঁচতে পারতোনা। মাওলানা আফেন্দী বলেন, যে সকল পাপাচার আল্লাহ ক্ষমা করেন না সেগুলোর ক্ষেত্রেও পুরা শাস্তি না দিয়ে তিনি আংশিক শাস্তি দেন। এই আংশিক শাস্তি দুর্ভিক্ষ, মহামারি,অগ্নিকাÐ, পানিতে নিমজ্জিত হওয়া, বস্তুসমূহের বরকত কমে যাওয়া এবং ক্ষতির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়াসহ অন্য যে কোন রূপে হতে পারে। দুনিয়াবী জীবনের এ সব শাস্তির উদ্দেশ্যও পবিত্র কুরআনে তুলে ধরা হয়েছে আর তা হল মানুষ যেন আল্লাহর হুকুম পালনের পথে ফিরে আসে। কালামে পাকের সূরা সেজদার ২২নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন "ঐ ব্যক্তির চেয়ে বড় জালেম আর কে হতে পারে যাকে তার রবের আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দেয়া হয় আর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব" তাই আসুন! সামজিক অবক্ষয়, বিপর্যয় ও খোদায়ী আযাব-গজব থেকে মুক্তি পেতে আমরা সবাই সৎ পথে পরিচালিত হই।
মিরপুর ই-ব্লক বাইতুল মা’মুর জামে মসজিদ-এর খতীব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, ইসলামী অনুশাসন না মানার কারনে মানুষ দুর্নীতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, সুদ, ঘুষ, জুয়া, ক্ষমতা ও আইনের অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রতারণা দিন দিন বেড়েই চলছে। নীতি নৈতিকতা ধংসের দারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছে। এখনি এর টুটি চেপে ধরা না গেলে ধ্বংস অনিবার্য। তিনি আরও বলেন, এর থেকে উত্তোরণে ইসলামী অনুশাসন ও ধর্মীয় রীতি নীতি পালনের কোন বিকল্প নেই। আর সে লক্ষ্যে এখনি ইসলামী অনুশাসন মেনেই জন সচেতনতা, সামাজিক আন্দোলন ও সরকারীভাবে কার্য্কর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো অন্যায় (পাপাচার, দুর্নীতি) হতে দেখে, সে যেন সম্ভব হলে তা হাত দ্বারা রুখে দেয়। তা সম্ভব না হলে প্রতিবাদী ভাষা দ্বারা তা প্রতিহত করে। আর তা-ও না পারলে সে যেন ওই অপকর্মকে হৃদয় দ্বারা বন্ধ করার পরিকল্পনা করে, এটি দুর্বল ঈমানের পরিচায়ক।’ (মুসলিম, মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৩৬) । আল্লাহ আমাদের সকলকে পাপাচার, দুর্নীতিসহ সকল অন্যায় অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন।
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী জুমার খুতবা পূর্ব বয়ানে বলেন, যারা আলেম-ওলামাদের সমালোচনা ও নিন্দা করে তাদের শাস্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধু পরকালে নয়, দুনিয়াতেও দিয়ে থাকেন। ওলামায়ে কেরাম তথা দ্বীনের কান্ডারী ব্যক্তিবর্গের গীবত ও নিন্দা করা সাধারণ লোকদের গীবত ও নিন্দা করার চেয়ে অতি জঘন্য ও নিকৃষ্ট। এর কারণ হলো, ওলামায়ে কেরাম আল্লাহ তা’য়ালার নিকট অতি মর্যাদাবান। তাই তাদেরকে অসম্মান করাকেও আল্লাহ তা’য়ালা খুব অপছন্দ করেন।
তিনি আরো বলেন,হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহপাক বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করি। (বুখারী শরীফ)।
ওলামায়ে কেরামের সমালোচনা ও নিন্দা করলে কি হবে? তার ফলাফল কি? তিনি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করে বলেন, ওলামায়ে কেরামের সমালোচনা ও গীবত করলে মানুষ চরম শাস্তির সম্মুখীন হয়। যারা এ ব্যাপারে উদাসীনতার পরিচয় দেয় তারা কুদরতীভাবে অপদস্ত হয় এবং চরম অভাবগ্রস্থ হয়। কাজেই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এবং নিজেকে আল্লাহ তায়ালার আজাব ও গজব থেকে বাঁচানো এবং আল্লাহর ওলী ও বিশেষ বান্দা ওলামায়ে কেরামের গীবত করে নিজের ধ্বংস না করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে এই জঘন্য গুনাহ থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমীন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।