মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাবলে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আকুতি জানিয়েছেন তার হামলাকারী সমর্থকরা। এদিকে, ক্ষমতা ছাড়ার পরেই ট্রাম্প বিভিন্ন আইনী ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গত ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্ট ষোষণা বাধাগ্রস্থ করতে ক্যাপিটল হিলে হামলা করেন ট্রাম্পের হাজার হাজার সমর্থক। হামলার সময় সহিংসতার ঘটনায় অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আমেরিকা জুড়ে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা অপরাধ সংঘটনকারী সন্দেহভাজনদের শনাক্ত ও গ্রেফতারের জন্য কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত ফেডারেল আদালত এবং জেলা কলম্বিয়া সুপিরিয়র কোর্টে প্রায় ১০০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দাঙ্গায় যোগ দিতে একটি ব্যক্তিগত বিমান নিয়ে ওয়াশিংটনে গিয়েছিলেন ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ও রিয়েল এস্টেট ব্রোকার জেনা রায়ান। রোববার তিনি গ্রেফতার হয়েছেন জানিয়ে ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে বলেন, ‘আমাদের সকলেরই সাধারণ ক্ষমা পাওয়া উচিত।’ এর পরে তিনি সিবিএস ১১ চ্যানেলে দেয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমি কারাগারের সাজা ভোগ করছি। আমি মনে করি এটি আমার প্রাপ্য নয়।’ তিনি সরাসরি ক্যামেরায় তাকিয়ে বলেন, ‘আমাকে ক্ষমা করার জন্য আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি ‘দেশপ্রেম প্রদর্শন করেছেন’ দাবি করে বলেন, ‘আমি আমার প্রেসিডেন্টের কথা শুনেছি, যিনি আমাকে ক্যাপিটলে যেতে বলেছিলেন।’ ক্যাপিটলে হামলায় রায়ানের জড়িত থাকার অনেক প্রমাণ তার সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া গেছে, যা কর্তৃপক্ষ আদালতে জমা দিয়েছে। ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই যাব এবং ক্যাপিটলকে ঝড় তুলব।’ এরপরে আরেক পোস্টে তিনি বলেন, ‘তারা এখন এখানে (খ্যাপিটল হিলে) রয়েছে এবং সে কারণেই আমরা এখানে এসেছি। আমদের যা করার, আমরা করতে যাচ্ছি। আমাদের সৌভাগ্য কামনা করুন।’ সংঘর্ষ চলাকালে ঘটনাস্থল থেকে ফেসবুক লাইভে তিনি গালি দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ভেতরে যাব। বেঁচে থাকি বা মরে যাই, কোন কিছু যায় আসে যায় না, আমরা যাচ্ছি।’ তিনি ক্যাপিটলের সিঁড়িতে উঠে ক্যামেরায় তার রিয়েল এস্টেট ব্যবসার প্রচার করে বলেন, ‘আপনি জানেন যে, আপনারা বাড়ি বানানোর জন্য কাকে ভাড়া নেবেন। আপনাদের পক্ষে জেনা রায়ান।’ পরে রায়ান টুইটারে পোস্ট করে বলেন, ‘আমরা কেবল ক্যাপিটলে ঝড় তুলেছি। এটি আমার জীবনের অন্যতম সেরা দিন ছিল।’
রায়ান ছাড়াও ট্রাম্পের কাছে ক্ষমার আবেদন জানিয়েছেন তার কট্টর সমর্থক ডানপন্থী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব টিম জিওনেট ও মিসৌরির এমিলি হার্নান্দেজ। ক্যাপিটলে দাঙ্গায় জড়িত থাকার জন্য এফবিআই জিওনেটকে গ্রেফতার করেছে। তিনি এমন একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে দেখা যায়, ট্রাম্প সমর্থকরা ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ স্লোগান লিখে এবং ‘গড বেøস ট্রাম্প’ টুপি পরে বিক্ষোভ করছেন। তিনি ক্যাপিটলের নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে সেলফিও তুলছেন, যারা শান্তভাবে তাদেরকে ওই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে বলছিলেন। এমিলি হার্নান্দেজ মার্কিন হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির একটি নেম প্লেট খুলে নেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এদিকে, আগামী ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস ত্যাগ করবেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে এ দিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের পদে বসবেন জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসাবে এতদিন সব ধরণের আইনী ঝামেলা থেকে মুক্ত ছিলেন ট্রাম্প। দায়িত্ব ছাড়ার পরে তার সেই সুরক্ষাও উঠে যাবে। ফলে বিভিন্ন অভিযোগে একাধিক মামলায় ফাঁসতে যাচ্ছেন তিনি।
ইউএস ক্যাপিটলে তান্ডবে অংশগ্রহণকারীদের উস্কানির দায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে অভিশংসন প্রস্তাব এনেছিলেন কংগ্রেসম্যান জেমি রাসকিন। নিম্নকক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনে সফলতার পর এবার তিনি সিনেটে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলাকারীদের উসকানি দেয়ার মধ্য দিয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বিপজ্জনক অপরাধ’ করেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে চলতি সপ্তাহে সিনেটে বিচার শুরু হতে পারে। ক্ষমতা ছাড়ার পরে ট্রাম্প সবচেয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়তে পারেন তার নিজের শহর ম্যানহাটনেই। সেখানকার অ্যাটর্নি সাইরাস ভ্যানস তার বিরুদ্ধে একাধিক অবৈধ আর্থিক লেনদেনের তদন্ত করছেন। এর মধ্যে রয়েছে ২০১৬ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এক পর্ণ তারকা ও এক প্লেবয় মডেলকে টাকা দেয়ার বিষয়গুলো। অন্যান্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে নিউ ইয়র্কে সম্পদের তথ্য গোপনের বিষয়টি। নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি-জেনারেল লেটিয়া জেমস এ বিষয়ে তদন্ত করছেন। তিনি জানান, ট্রাম্প ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লোনের জন্য আবেদনের সময় তাদের সম্পদের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং পরে ট্যাক্স ফাঁকি দিতে তা আবার কমিয়ে দেখিয়েছিলেন। এছাড়াও, নিউইয়র্কে তার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দেওয়ানি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ধর্ষনের অভিযোগে সাবেক কলামিস্ট জিন ক্যারল ও নামে একজন ও যৌন হয়রানির অভিযোগে ট্রাম্পের জনপ্রিয় টেলিভিশন শো, ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ এর প্রতিযোগী সামার জেরভসের মামলা। ২০১৯ সালে ক্যারল দাবি করেছিলেন, ট্রাম্প তাকে ম্যানহাটনের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ড্রেসিংরুমে ধর্ষণ করেছিলেন। জেরভোস বলেছিলেন, ট্রাম্প তাকে টিভি সেটিই যৌন হয়রানি করেছিলেন। ট্রাম্প তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলায় উভয়েই তার বিরুদ্ধে পরে মানহানির মামলাও করেন। ১৩ জানুয়ারী ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিশংসনের পরে ক্যারল টুইট করে বলেন, ‘ট্রাম্প আমাদের গণতন্ত্রকে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। আমি তাকে আদালতে ছিঁড়ে ফেলতে যাচ্ছি।’
নির্বাচনে হারার পরে গত ২ জানুয়ারী ট্রাম্প জর্জিয়ার সেক্রেটারি অফ স্টেটকে ভোট খুঁজে দেয়ার জন্য হুমকি দিয়েছিলেন। এ ঘটনাতেও তার বিরুদ্ধে মামলা গতে পারে। ২০২০ সালের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের প্রয়াসেও তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। তিনি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে তার প্রতিদ্ব›দ্বী বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে বলেছিলেন। বিনিময়ে সুরক্ষা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিলেন। এটিই ট্রাম্পের প্রথম অভিশংসনের ভিত্তি ছিল। নিউইয়র্ক আইন অনুযায়ী, এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ গঠন করা হতে পারে। সূত্র : এপি, ইভনিং স্টান্ডার্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।