Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ট্রাম্প সমর্থকদের তান্ডব

ক্যাপিটল হলে নিহত ৪ : ওয়াশিংটনে ১৫ দিনের জরুরি অবস্থা : গ্রেফতার ৫২

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে গতকাল নির্বাচনের জয়ের স্বীকৃতি পেয়েছেন নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু তার আগেই উত্তাল হয়ে উঠে ওয়াশিংটন ডিসি। বুধবার আমেরিকার কংগ্রেসের ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা চালিয়েছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থকরা। এ সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে ৪ জন নিহত হন। সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে সমালোচিত হন ট্রাম্প। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।

বুধবার বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরপরই তার অনুগামীরা মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে চড়াও হন। অনভিপ্রেত এই ঘটনার জন্য তৈরি ছিল না ওয়াশিংটন পুলিশ। বাঁধ ভাঙা বন্যার মতো ক্যাপিটলে ঢুকে পড়তে থাকেন বিক্ষোভকারীরা। নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ভবনের গা বেয়ে উঠতে দেখা যায় উগ্র ট্রাম্প সমর্থকদের। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৫২ জনকে। পুলিশ সূত্রের খবর, ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হাউস অব রিপ্রেসেন্টেটিভ এবং সিনেটের বৈঠক চলছিল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের চ‚ড়ান্ত সিলমোহরের বিষয়টি নিয়ে। তখনই কয়েক হাজার ট্রাম্প-সমর্থক ক্যাপিটল বিল্ডিং ঘিরে ফেলেন। জোর করে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। এই ঘটনার পরই গোটা ক্যাপিটল বিল্ডিং চত্বর নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় ওয়াশিংটনে আগামী ১৫ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে হয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসার গতকাল টুইটার বার্তায় এই ঘোষণা দেন।

ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও। হামলা হওয়ার পরেই পেন্স সেখান থেকে বেরিয়ে পড়েন। ট্রাম্প সমর্থকদের বিক্ষোভের জেরে তুমুল বাগবিতন্ডা শুরু হয়ে যায় সেনেট সদস্যদের মধ্যে। সেনেট মেজরিটি লিডার মিচ ম্যাককনেল বলেন, শুরু থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে ঝামেলা চলছে। তবে এখন যা হচ্ছে তাকে গণতন্ত্রের অবমাননাই বলা যায়। এই ম্যাককনেল ট্রাম্পঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। তিনিও মনে করছেন এদিনের ঘটনা সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে। জো বাইডেন ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দেশবাসীর উদ্দেশে টেলিভিশন বার্তায় তিনি বলেন, ‘ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ের ঘটনা আমেরিকার সত্যিকারের ছবি হতে পারে না। কিছু উগ্রপন্থা মনোভাবাপন্ন মানুষ এ কাজ করেছেন। এটা বিশৃঙ্খলা। এটা প্ররোচনা। আমাদের লক্ষ্য আইন মেনে চলা। একে অপরকে শ্রদ্ধ করা। এটাই গণতন্ত্রের দস্তুর হওয়া উচিত।’

বুধবারই ট্রাম্প জনসভা করে হুমকি দিয়েছিলেন, ‘আমরা পিছু হটব না।’ তার পরই ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলার ঘটনা ঘটে। যদিও হামলার কয়েক ঘণ্টা পরে ট্রাম্প টুইট করে সমর্থকদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই ট্রাম্প অভিযোগ তুলে আসছেন ভোট জোচ্চুরি হয়েছে। এই ফলাফলকে তিনি কিছুতেই মানবেন না। এ নিয়ে বেশ কয়েকটি স্টেটসে মামলাও করেন ট্রাম্প। কিন্তু সব জায়গাতেই হেরে যান তিনি। কিন্তু তার পরেও একই দাবি তুলে বিভিন্ন জনসভায় প্রচার করছেন তিনি। এমনকি বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের উপরে খোলাখুলি চাপ বাড়িয়ে চলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। টুইটারে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লেখেন, ‘অনিয়ম আর জালিয়াতির ভোটের সংশোধন চাইছে প্রদেশগুলো। দুর্নীতির এই প্রক্রিয়া কখনওই আইনসভার সম্মতি পায়নি। মাইক পেন্সকে এখন সেগুলো (ফলাফল) তাদের কাছেই ফেরত পাঠাতে হবে। আমরা জিতব। করে ফেলো মাইক, এটা সাহস দেখানোর সময়।’ যদিও পেন্স বলেছেন, সংবিধান মেনেই তিনি যা করার করবেন। বুধবারও এক জনসভা থেকে তাকে হুমকি দিতে শোনা যায় ট্রাম্পকে। তার পর পরই ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলার ঘটনা ঘটে বলে খবর। এদিকে, অশান্তিতে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে ১২ ঘণ্টার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটনের হিংসায় প্ররোচনা জোগানোর অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ট্রাম্প সংযত না হলে, ভবিষ্যতে তার অ্যাকাউন্ট পাকাপাকি ভাবে বøক করে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে টুইটার। রিয়েলডোনাল্ডট্রাম্প নামক অ্যাকাউন্ট থেকে পরপর তিনটি টুইট করেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট। ওই তিনটি টুইটই ছিল উস্কানিমূলক। অভিযোগ, টুইটারের সিভিক ইন্টিগ্রিটি পলিসি ভেঙেছেন ট্রাম্প। তাই সাময়িক ভাবে তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘উন্মাদ’ ঘোষণা করে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে দিতে আলোচনা শুরু করেছেন তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ভিত্তিতে ট্রাম্পকে সরিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রিসভা যদি প্রেসিডেন্টকে দায়িত্ব পালনে অযোগ্য বলে বিবেচনা করে; তাহলে তাকে সরিয়ে দিতে পারবে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই সংশোধনী প্রয়োগ করা হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স তাকে সরিয়ে দিতে মন্ত্রিসভায় ভোটাভুটির নেতৃত্ব দেবেন। সূত্র : স্কাই নিউজ, রয়টার্স, এপি, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস।

 

 



 

Show all comments
  • শাহীন হাসনাত ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৩৪ এএম says : 0
    দুনিয়ার এরাই এখন সবচেয়ে বর্বর জাতী
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mazed ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৩৯ এএম says : 0
    এই রকম নিরপেক্ষ প্রশাসন আমাদের দেশে কবে হবে ?
    Total Reply(0) Reply
  • Mira Islam ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৪ এএম says : 0
    পাগল ট্রাম্পের কাজ এগুলা।
    Total Reply(0) Reply
  • Foysal Hasan ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৫ এএম says : 0
    এত কম পুলিশ দিয়ে এত উগ্রবাদী দের আটকে রাখা সম্ভব না
    Total Reply(0) Reply
  • Murtuza Chowdhury ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
    আমেরিকার জনগন নিজেদেরকে সভ্য বলে দাবি করে। কিন্তু আমেরিকার বর্ণবাদীরা যে কত বড় জঙ্গি তা তাদের কার্যকলাপে প্রমান করে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ferdous ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৭ এএম says : 0
    নজিরবিহীন ! তাও আমেরিকার মত দেশে। এবার পরের ঘরে আগুন লাগানোর মজা বোঝ।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mobasher Hooda Sohel ৮ জানুয়ারি, ২০২১, ২:৪৯ এএম says : 0
    অনেক দেশে আগুন লাগাইছ,এখন নিজেদের টা সামলান।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুক্তরাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ