বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
বিশ্বব্যাপী বহু সন্ত্রাসী সংগঠন রয়েছে। অনেক দেশ সন্ত্রাসের কাছে হার মানার নজিরও রয়েছে। বর্তমানে তথ্য সন্ত্রাস এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দখলদার বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে দেশবাসীর ন্যায়ের লড়াই বা স্বাধীনতার যুদ্ধকেও বলা হয় সন্ত্রাসবাদ। তাছাড়া দুনিয়াজুড়ে যত সন্ত্রাসী আছে তাদের ধর্ম পরিচয় দেয়া হয় না। আর কোনো ধর্মে বিশ্বাসী ব্যক্তি সন্ত্রাস করলে তাকে ইয়াহুদি সন্ত্রাসী, খ্রিষ্টান সন্ত্রাসী, হিন্দু সন্ত্রাসী, বৌদ্ধ সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করা হয় না। এটি করা উচিতও নয়।
কারণ, একটি ব্যক্তি বা গ্রুপ তার নিজ কৃতকর্মের জন্য নিজেই দায়ী। এর দায় তার ধর্মের ওপর চাপানো যুক্তিযুক্ত নয়। কিন্তু এ ব্যাপারে দুনিয়ার মানুষ সচেতন থাকলেও ইসলাম ও মুসলমানের ব্যাপারে তারা সচেতন নন বলে মনে হয়। কোনো ঘটনায় সুযোগ পেলেই বিশ্ব মিডিয়া মুসলিম সন্ত্রাসী, ইসলামী সন্ত্রাস ইত্যাদি বলে আসমান মাথায় তুলে নেয়। এখানে তাদের অনেকেরই ইসলামবিদ্বেষ ও মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
ফ্রান্সে এক চেচেন যুবক কর্তৃক জনৈক শিক্ষককে হত্যা করায় মিডিয়া চিৎকার জুড়ে দেয়, মুসলিম সন্ত্রাসী ও ইসলামী সন্ত্রাস বলে। অথচ দুনিয়ার বহুদেশে বড় বড় সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের বেলায়ও তারা ধর্ম পরিচয় উল্লেখ করে না। এটি করাও ঠিক নয়। কারণ, এক ব্যক্তির অপরাধে গোটা ধর্ম বিশ্বাসী সমাজ সন্ত্রাসী হয়ে যায় না।
নিউজিল্যান্ডের ঘটনা পাঠকের মনে আছে। যেখানে জুমার নামাজ চলাকালে গুলিবর্ষণ করে বহু মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার বহুস্থানে বোরকা, হিজাব, টুপি, দাড়ি দেখামাত্রই মারধর এমনকি হত্যাও করা হয়েছে। মসজিদে হামলা ও আগুন লাগানো হয়েছে।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক সেইন্ট জন দি ডিভাইন গির্জার বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি শতশত মানুষের উপস্থিতিতে দুইহাতে দু’টি রিভলভার নিয়ে সমানে গুলি চালাতে থাকে। তখন একটি কনসার্ট মাত্র শেষ হয়েছিল। মানুষ এলোমেলো ছুটছিল। লোকটির মাথায় ছিল ক্যাপ ও পিঠে ব্যাগ। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সে বিশ রাউন্ডের বেশি গুলি ছুড়েছিল। তাকে কেউ নিরস্ত্র করতে না পেরে হতাশ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুলিশের গুলিতে লোকটি নিহত হয়।
পুলিশ বলেছে, লোকটির দীর্ঘদিনের অপরাধের ইতিহাস আছে। আর তার ব্যাগেও এক বোতল পেট্রোল, রশি, গাম টেপ, ছুরি এবং এক কপি বাইবেল পাওয়া গেছে। লোকটি খ্রিষ্টান বলে সে জঙ্গি অভিহিত হয়নি। তার নাম পরিচয়ও চেপে যাওয়া হয়েছে। এ নিয়ে বিশ^ মিডিয়ায় তেমন হৈ চৈ শোনা যায়নি। গতানুগতিক নিউজ ও রিপোর্ট হয়েছে মাত্র। সিএনএন, বিবিসি, ফক্স নিউজ ইত্যাদি কেউই কথা বাড়ায়নি। লম্বা চওড়া টকশো ও বিশ্লেষণ হয়নি।
লোকটির নাম যদি কোনো মুসলমানের নাম হতো কিংবা সে মার্কিন অভিবাসী মুসলিম দেশের মুসলমান হতো, তাহলে এখানে ইসলামী সন্ত্রাস কথাটি শত শতবার বিশ^বাসীকে শুনতে হতো। ঘটনার পরবর্তী আট ঘণ্টা এটি ব্রেকিং নিউজ হতো। সুযোগ বুঝে তথ্য সন্ত্রাসীরা বিশে^র মুসলমানদের এক হাত দেখে নিত। তাদের জঙ্গি, উগ্রবাদী, সন্ত্রাসী বলে গালাগাল করা হতো। অনেক নামধারী মুসলমানও গোলামী ও পরাজিত মানসিকতা থেকে সম্ভব হলে ইসলামবিদ্বেষীদের সামনে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকত। নাস্তিক, মুরতাদমনা বহু লোক এই সুবাদে নিজ ধর্ম, জাতি, সম্প্রদায় শুধু নয় আল্লাহ ও রাসূলকে পর্যন্ত ছেড়ে কথা বলত না। তথ্য সন্ত্রাসের এ জামানায় সত্যিই মুসলমানরা বড় মজলুম। এ মানসিকতার পরিবর্তন কবে হবে, কীভাবে হবে তা আধুনিক সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।