Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানে মন্দির ভেঙেছে যারা, তাদেরই দিতে হবে নির্মাণের খরচ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৩:৫০ পিএম

খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে ভেঙে, পুড়িয়ে দেয়া প্রাচীন একটি মন্দির নতুন করে নির্মাণ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার বলেছে, ‘ইভ্যাকুই প্রপার্টি ট্রাস্ট বোর্ড (ইপিটিবি)’-কে মন্দিরটি নতুন করে গড়ে দিতে হবে। তার পুরো খরচ আদায় করতে হবে প্রধান চক্রান্তকারী ও উস্কানিদাতা মৌলবি মহম্মদ শরিফের কাছ থেকে।

দেশ ভাগের পরে ভারতে চলে যাওয়া হিন্দু ও শিখদের সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে পাক সরকারের ইপিটিবি বোর্ড। তারা মন্দির তৈরির টাকা নেই বলে জানালে, প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নিজেদের ভবন বানানোর তো টাকা আছে আপনাদের, আর মন্দির পুনর্নিমাণের টাকা নেই!’ পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি গুলজ়ার আহমেদের কথায়, ‘খাইবার পাখতুনখোয়ার ঘটনা বিশ্বের দরবারে পাকিস্তানকে লজ্জিত করেছে।’ তার নির্দেশ, ‘গোটা পাকিস্তানে পূজা বা উপাসনা হয় বা হয় না, এমন যত মন্দির ও গুরুদ্বার রয়েছে, তার খতিয়ান তৈরি করে জমা দিতে হবে ইপিটিবি-কে। দেশের যেখানে যত মন্দির-গুরুদ্বারের জমি বেদখল হয়েছে, তার সব দখলমুক্ত করতে হবে। ওই সব জমিতে যারা ব্যবসা করে খাচ্ছে, গ্রেফতার করতে হবে তাদের।’ মামলার চূড়ান্ত রায় বের হবে দু’সপ্তাহ পরে।

শুনানিতে খাইবার পাখতুনখোয়ার পুলিশ-প্রধান জানান, জমিয়ত উলেমা-এ-ইসলাম (ফজল-উর-রেহমান গোষ্ঠী)-র সমর্থক ও স্থানীয় কিছু মৌলবি মিলে এই কাজ করেছে। মন্দির ধ্বংসের ঘটনায় মোট ১০৯ জড়িত ছিল। তাদের মধ্যে ৯২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকার পুলিশ সুপার ও ডেপুটি পুলিশ সুপারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। আদালত মনে করে, এটা আদৌ যথেষ্ট শাস্তি নয়। আইনসভার হিন্দু সদস্য রমেশ কুমারের করা মামলার সূ্ত্রে এই রায়। রমেশ আদালতকে জানিয়েছেন, ১৯৯৭ সালেও মন্দিরটির ক্ষতি করা হয়েছিল। পাকিস্তান হিন্দু পরিষদের চেয়ারম্যান রমেশ কুমার অভিযোগ দায়ের করার পরে সুপ্রিম কোর্ট এক সদস্যের কমিশন গড়েছিল। সেই কমিশন সোমবার যে রিপোর্ট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, ‘মন্দির ধ্বংসের ঘটনা গোটা দেশে সংখ্যালঘুদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে, বিশ্বের কাছে পাকিস্তানকে লজ্জায় ফেলেছে।’ সরকারি হিসেবে, পাকিস্তানে সংখ্যালঘুদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হিন্দুরা। সরকারি হিসেবে তাঁদের সংখ্যা ৭৫ লাখ।

পাকিস্তানের করক জেলার তেররি গ্রামে ১৯২০-র আগে তৈরি ওই মন্দির সংস্কারের অনুমতি দিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। তার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু গত ৩০ ডিসেম্বর কিছু ধর্মোন্মাদ ওই মন্দিরে হামলা চালায়। চলে ভাঙচুর। লুট হয় মূল্যবান জিনিসপত্র। মন্দির ও হিন্দু সন্ত পরমহংসজি মহারাজের সমাধি অপবিত্র করার পরে আগুন ধরিয়ে দেওয় হয়। মন্দির সংস্কারে যে অংশ নতুন করে তৈরি করা হয়েছিল, সেই অংশও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এবং সবটাই হয় ৯২ জন পুলিশকর্মীর উপস্থিতিতে। তিন দিন আগেই খাইবার পাখতুনখোয়ার সরকার রাজ কাপূর ও দিলীপ কুমারের পৈতৃক বাড়ি দু’টি নিলামে কিনেছে ২ লাখ ৩৫ হাজার পাউন্ডে। সে দু’টিকে ‘জাতীয় ঐতিহ্যবাহী’ ভবনের স্বীকৃতি দিয়েছে পাক সরকার। মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশ শুনে খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী মামুদ খান আশ্বাস দিয়েছেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির ও সমাধি পুনরায় গড়ে দেয়া হবে।’ সূত্র: দ্য ওয়্যার।



 

Show all comments
  • bikash ৬ জানুয়ারি, ২০২১, ৪:৪২ পিএম says : 0
    মন্দির, মসজিদ বা গীর্জা যারা ভাঙ্গে তারা ধর্মীয় মানুষ নয়। তারা ঈশ্বর, আল্লাহ বা যিশুর লোক নয়। তারা শয়তান বা ইবলীশকে অনুসরন করে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ