পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারীর কারণে বৈশ্বিক মন্দার কমবেশি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি প্রবাহে। ২০২০ সালে সার্বিক বৈদেশিক বাণিজ্যের মন্দাদশায় চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কিছুটা কমেছে। করোনাকারণে এই নেতিবাচক ধারা এখনও বজায় রয়েছে। তবে করোনার বাধাবিপত্তি অতিক্রম করেই চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা, সক্ষমতা ও গতিশীলতার সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় অগ্রসর হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৈশ্বিক মহামারীর বিরূপ প্রভাবে সদ্যবিদায়ী ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস। গত ২০১৯ সালে কন্টেইনার ওঠানামা হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস। ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ এবং ২০১৭ সালে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৩ টিইইউস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়।
সেই হিসাবে, গেল বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং আগের বছরের (২০১৯) তুলনায় হ্রাস পেয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউস। এক বছরের ব্যবধানে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হ্রাস প্রায় ৮ শতাংশ। যা শতকরা হারে চট্টগ্রাম বন্দরে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমলো।
অন্যদিকে, বৈশ্বিক মহামারীর প্রভাবে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের তুলনায় ভারত, শ্রীলংকা, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার সামুদ্রিক বন্দরসমূহে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হ্রাস বা সার্বিক মন্দাদশার ক্ষত হয়েছে আরও বেশিই।
শিপিং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে করোনাকারণে ২০২০ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং যেখানে প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে, সেখানে প্রতিবেশি দেশ ভারতের সর্ববৃহৎ কন্টেইনার পোর্ট জওহরলাল নেহেরু মুম্বাই বন্দর ও চেন্নাই বন্দর, শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হ্রাস পেয়েছে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।
পোর্ট-শিপিং ও ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রভাবে গেল বছরে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি তেমন বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়েনি। কিন্তু রফতানি ব্যাপক হোঁচট খেয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ, অনেকগুলো প্রকল্প, মেগাপ্রকল্পের নির্মাণ সামগ্রী, যান্ত্রিক সরঞ্জাম আমদানির হার সন্তোষজনক।
এরফলে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমলেও, খোলা সাধারণ পণ্য সামগ্রী (ব্রেক বাল্ক কার্গো) ওঠানামা ও পরিবহণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে খোলা সাধারণ পণ্য পরিবহন হয়েছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন। ২০১৯ সালে পরিবহন করা হয় ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ মেট্রিক টন। ২০১৮ সালে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন, ২০১৭ সালে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৮ মেট্রিকটন পণ্য পরিবহন করা হয়েছিল। গেল বছরে সোয়া লাখ টনেরও বেশি পরিমাণে সাধারণ পণ্য ওঠানামা, পরিবহন হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরে গতবছর জাহাজ আসা-যাওয়া কম হয়েছে। এ সময়ে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৭২৮টি। ২০১৯ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয় ৩ হাজার ৮০৭টি। গেল বছরে ৭৯টি জাহাজ কম হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। তবে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে তুলনামূলক বড় আকারের জাহাজযোগে অধিক পরিমাণে কন্টেইনার ও খোলা পণ্য পরিবহণ করা হয়।
করোনায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং গতবছর হ্রাস পাওয়া প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক গতকাল সোমবার দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বৈশ্বিক করোনা মহামারী পরিস্থিতির প্রভাবে বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কিছুটা কমেছে। এটা চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব কোনো কারণে এমনটি হয়নি। বরং চট্টগ্রাম বন্দর আরও ২০ শতাংশ বেশি হারে কন্টেইনার পরিবহনের জন্য প্রস্তুত। তাছাড়া ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ প্রতিবেশি বিভিন্ন বন্দরের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমই হারে হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া খোলা সাধারণ আমদানি রফতানি পণ্য সামগ্রী পরিবহণ বৃদ্ধি পেয়েছে। করোনাকালে একদিনের জন্যও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হয়নি, এটাও সাফল্যের দিক।
এদিকে লন্ডনভিত্তিক বিশ্বের শিপিং সার্কেলের প্রাচীন ও প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান দ্য লয়েডস লিস্টের বৈশ্বিক তালিকায় পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত, সক্ষমতা সম্পন্ন ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দর গত এক দশকে ৩০ ধাপ এবং এবং এক বছরের ব্যবধানে ছয় ধাপ এগিয়ে ২০১৯ সালের মূল্যায়নে ২০২০ সালের আগস্টে ৫৮তম অবস্থানে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে ছিল বিশ্বে ৬৪তম।
করোনায় কন্টেইনার পরিবহন হ্রাসের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের এই অবস্থানের অবনতি হবে না এমনটি আশাবাদী বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক। তিনি বলেন, করোনার বৈশ্বিক বিরূপ প্রভাব বিশ্বের প্রায় সব বন্দরে পড়েছে। তাদেরও কন্টেইনার ও পণ্য পরিবহনের পরিমাণ কমেছে। এরফলে চট্টগ্রাম বন্দরই তো শুধুই বিচ্ছিন্নভাবে এই বিরূপতার মধ্যে পড়েছে তা নয়। তাই বন্দরের বৈশ্বিক অবস্থান ও সুনাম অটুট থাকবে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বা রোধ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি ও রফতানি আরো বেগবান হবে। কন্টেইনার পরিবহনও বৃদ্ধি পাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।