Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নি র্বা চি ত ক বি তা

| প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:১০ এএম

জাহানারা আরজু

স্পর্ধিত শব্দাবলী
না- আমার তেমন কিছু সম্বল নেই- ক্ষমতা নেই সুদৃঢ় পদক্ষেপে ওই প্রশস্ত রাজপথে হেঁটে যাবার- না- আমার কথা বলার সজ্জিত কোনো মঞ্চও নেই, হাততালি দেবার ভক্তবৃন্দ নেই- নন্দিত পুষ্পস্তবকে আচ্ছাদিত হব না কখনো; আমার নেই শ্বেতমর্মর খচিত রাজপ্রাসাদ, নেই হীরা মণি মাণিক্যের ছড়াছড়ি- অঙ্গুলি নির্দেশে ছুটে আসবে না কোনো সেপাই সান্ত্রী লোক লস্কর- ক্ষোভ নেই এতটুকু তাতে, আমার যা আছে, অফুরন্ত সে ভান্ডার- আমার বুকের ওঠা-নামায়, ধমনীর শিরায় শিরায়আছে কিছু শব্দাবলী- রিম ঝিম, রক্তদোলায় সে ধ্বনি সৃজনের নূপুর হয়ে বাজে প্রতিক্ষণ- প্রতিদিনের রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে যার ক্ষয় নেই, সে শব্দাবলী কুসুম সম্ভারে আমি এক চির বসন্তের বাগান গড়ে নিতে পারি, যেখানে নিত্য ফুল শাখাতে দোল খায় গানের পাখি, হলুদ-নীল-সোনালি পাখায়- চৌদিকে রঙিন প্রজাপতিরা ওড়ে, নীল ময়ূরীর পাখায়
শাওনের দোলা, আকাশের সাদা ভেলায় মুক্ত বলাকার সারি; আমার সে শব্দমালা নিয়ে আসে হৈমন্তী সোনা ঝরা কৃষানের স্বপ্ন- সফল মাঠ, অভুক্ত শিশুর জঠরে অফুরন্ত ক্ষুধার সাদা ভাত, পৃথিবীর সব দুঃখ মুছে দিয়ে নিয়ে আসে এক সোনালি সূর্যের সকাল এবং চাঁদের প্লাবনে ঢেউ-ভাঙা রূপালি আকাশ! আমার শব্দাবলী মেঘের মিনার ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ে যায় অনন্তকালের যাত্রায় নির্ভীক ডানায় উড্ডীন- আমার লাগে না কোনো নভোযান অথবা ছাড়পত্র, কোনো কাঁটাতারের শাণিত শাসন নেই আমার সীমানায়-


ফাহিম ফিরোজ
নৃত্য পঙক্তি

নিজেই কইছে, জামাই তালাক একদম বটের নিকট! গ্যাপে রিপ্লেস করবে প্রেমিক। ঘরের জনকে দিয়ে খেদানো যায় না শীত। বুড়া হয়ে গেছে। একটা নয় দরকার তিনটে ষাঁড়। শফির ভাতিজা নান্টু শুনো শুনো, কর্মকার আতিক তোরেও কই, মন দিয়া শোন, বটের এবার সন্দেহ হল খুব। তাই পাখি দিয়ে কোর্টে খোঁজ নিয়ে দেখে, কোনো কালো কাগজই নেই! পাঠালো কাক। সেও কইলো গলা ভেংগে, ঘরেই রইছে -- গলাধরা! অথচ বলে সেপারেশন। চরম মিথ্যুক! দীর্ঘ শিকড় প্যাঁচিয়ে এবার ধরলো বৃক্ষারাজ। শুরু হলো ওর কাপড় নষ্ট। হইলো হইলো অতীত খনন। অন্ধকার থেকে বেরোতে লাগলো কত মানিব্যাগ, শত আংটি আর চেন। যার মালিকানা খোঁজে পাওয়া সত্যি কঠিন। আসলে সে লাস্যবাদী। ক্ষণান্তর চৌকি ভাংগায় পটু। জামাই নেই। আগের জন শুনে নির্ভয়ে আইবো ঘরে। ফাঁদটা পাতাই আছে। রাইতে হাত- পা বেঁধে সম্পদ কাগজে লিখে নেবে সব। কিন্তু প্রেমিক সজাগ হল।জাইনতো কিছুটা ওর অতীত দড়িবাজ, ধরিবাজ..! মিয়াভা, বট কিন্তু ছাড়বার পাত্র নয়। তিনশো বান্দর দিয়ে বাতাসে ছড়িয়ে দিল এই গরম খবর..! দুধভাই, শোনো, ঝাড়ু হাতে সমাজ লাফ দিলো এবার লালবাড়িটায়! বেশি চালাকি করতে গিয়ে সে হয়ে গেল গণশৌচাগার! বেগতিক দেখে ঘরটা সূর্য ডোবার আগেই চিরতরে কোথায় মিলায়!

 


আলম মাহবুব
এক তর্জনীতে স্বাধীনতা

এক তর্জনীতে কী যে হুলুস্থুল জনতার সমুদ্রে
সাত মার্চের রেসকোর্সে বিশাল ঢেউ
সবুজ উদ্যানে স্বপ্নের লহরী
সহসা পাল্টে যায় জীবন দর্শন।
কি আশ্চর্য বজ্রকণ্ঠে মোহিত সক্ষমতার এলিজি,
মানুষের অগ্রযাত্রা তখন আর রুখবে কে
আগামী বসন্তেই পালাবদল দিনরাত্রির চিত্রকল্প।
এক তর্জনীতে উত্থান ‘বাংলা ছাড়ো’ কবিতার জয়
অন্ধতার উৎসভূমি হতে ক্রমাগত ভাঙচুর
সুশোভিত ব্যাকরণের উচ্চারণে মুক্তির সংগ্রাম,
স্বাধীনতা।
সাত মার্চের তর্জনী হতে গড়িয়ে যায় স্বপ্নাচ্ছন্ন দুপুর
উড়ে যায় নাগরিক দুঃখ, আশালতার সোনালী আগুন
দেয়াল ভাঙো
রক্তের ভিতরে কারুকাজ তোমাকে যেতেই হবে।
সেদিনের সেই এক তর্জনীতে
আগুন গানের ইতিহাস বাংলাদেশ।

 

জামালউদ্দিন বারী
করোনাকাল

থেমে যায় কোলাহল জীর্ণ জনপদে
গমগমে থিয়েটার হল শীতল নিস্তব্ধতায় নিশ্চল
চারদিকে নিরব মৃত্যুর হানা
মানুষে মানুষে দূরত্ব বেড়ে যায় আরো
কোনো অলীক হাওয়ায় ভেসে আসে করোনাভাইরাস
অগণন মানুষের ফুসফুসে অক্টোপাসের মত
চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ ফাইব্রোসিস।
পুরনো ধলেশ্বরী কুমরাখালির বিল
বাঁশঝাড়ের প্রাণবন্ত শীতল ছায়া
যখন তোমাকে নস্টালজিক করে তোলে
তখন তুমি একবুক নিশ্বাসের জন্য
যান্ত্রিক ভেন্টিলেটরে নিয়েছ ঠাঁই।
দুর্বিনীত জীবন তুমি হেরে যেয়োনা-
এইসব কর্পোরেট জুয়াখেলা ছেড়ে
আবার আমরা পিতৃপুরুষের স্বপ্ন বুনবো শীতল মাটিতে।
এই ভেন্টিলেটর, এই নিরব দূরত্ব এই অক্সিজেন সিলিন্ডার ফেলে
আবার আমাকে বুকভরে গোল্লাছুট-কানামাছি দম নিতে দাও
ইয়া রাব্বুল আলামিন-
এই কাঁচের দেয়াল ছেড়ে আমি আমার পিতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে মুনাজাতে অশ্রু ঝরাতে চাই আর একটিবার।

 

মাহমুদ হায়াত
ডোমঘরে

নাগরিক ব্যস্ততা পিছনে ফেলে বছরান্তে নিয়ন আলোয় সেজে ওঠে চিরচেনা এই জনপদ। কপালে ফেস্টুন, হাতে হাতে ফড়িং নাচে লাল-সবুজের পতাকা। দশ রিকটার স্কেলে নাড়াচাড়া দেয় বুকের মধ্যে ছেলেভোলানো দেশপ্রেমের গান। কুজকাওয়াজ শেষে হাত তালি পায় কতজন, হাজার অসঙ্গতির নিচে চাপা পড়ে যখন আপামর মানুষের ভাগ্য। প্রকৃত বিজয় এখানে ডোমঘরে বসত করে বারোমাস।

 

মরিচ জামানা
রেশম লতা

কারখানার সাথে মরিচক্ষেত, মরিচের ভেতর দান শির
সে কি বিশাল কৃপা ঈশ্বরীর জমিতে
চাষে চাষে যেন প্রজননের হুরকুচুর
পুলের মধ্যে জলহীন সমুদ্রের খলখলানি!
হাকিমের ভেতরেও মরিচ, হাউমাউ কেবল টুনটুনির!
পালকের ব্যান্ডেজ আয়োজনে অসীমান্তময়।
দূর্বার প্রেতস্বরা ঘুরে নিঝুম মেঘের ডালে
আপেলের ভারে মিডিয়া নুব্জ্য
কব্জায় নেই টুপি, ধুতি আর টাক যোগ।
মরিচের মোড়কে এবার ময়ূরের পালক
আদা চাষীর মাথায় হাত
কবে ফুটবে রজনীগন্ধার ফুল!

 

 

আরাফাত বিন আবু তাহের
জাগবে মানুষ

আর কতটা নামবি নিচে, লজ্জাহীন!
কার পুকুরে হাত ডুবালি- গলাতক?
আর কতটা লুটবি রে তুই রাত্রি দিন!
আর কতটা খাবি মেরে গরিব-হক?
আর কতটা কাঁদলে মানুষ -বাস্তুহীন
ফটকামি তোর বন্ধ হবে, বদের বদ?
আর কতবার খেয়ে দিবি- অন্তহীন!
দেশ দিয়েছে গলায় দড়ি নাকের খত!
আর কতটা মারবি মানুষ, পাপিষ্ঠ
কতটা দূর ঈমান গেলে ফিরবে হুঁশ?
আর কতবার কষবি গণিত, লঘিষ্ঠ
কতটা দূর পেট ছড়ালে ছাড়বি ঘুষ?
করবি কত ফাঁপর বাজি- মুরদহীন
আর কতদূর ঠ্যাঙাবি তুই ডান্ডাবাজ?
টুঁটি চেপে ধরবে মানুষ আসলে দিন
ভাবিস তখন ফুটবি কোথা দস্যুরাজ?

 

 

রফিকুল রবি
আগন্তুক

বাম বুক ঝিমায়-
কে যেনো আছিলো!
ফেলে আসা চোখ দুইটা-
কাক কুড়াইয়া রোদে শুকাতে দিছে।
এখন, আন্ধার দেখি-
রাতের গাভীন ছাড়াই প্রসব!
বুকে মলম ঢলি-
হঠাৎ কে-রে দরজা ঠক্ঠক্ করে?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নি র্বা চি ত ক বি তা

১ জানুয়ারি, ২০২১
আরও পড়ুন