Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চসিক নির্বাচনে ঘুরপাক চাঁটগার রাজনীতি

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:১০ এএম

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে ঘুরপাক খাচ্ছে চাটগাঁর রাজনীতি। বছর শুরু হয় নির্বাচনী ডামাঢোলে। আর বছর শেষ হচ্ছে ভোটের প্রচারে। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণেই আটকে যায় সিটির ভোটগ্রহণ। তফসিল ঘোষণার প্রায় এক বছর পর আগামী ২৭ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের নতুন দিন ধার্য করা হয়েছে। এর ফলে নতুন বছর শুরু হবে জমজমাট ভোটের প্রচারে।
সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ড বছরজুড়ে ছিল চসিক নির্বাচনকে ঘিরে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলের যুগ্ম সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী। মনোনয়ন বঞ্চিত হন নগর সেক্রেটারি সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে মান-অভিমান থাকলেও বড় ধরনের কোন অঘটন ঘটেনি। বঞ্চিত হয়েও করোনার কঠিন সময়ে মাঠে সক্রিয় ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।
মেয়াদের শেষ দিন পর্যন্ত চসিকে তিনি ছিলেন সক্রিয়। মেয়াদ শেষে সরকার চসিকে প্রশাসক নিয়োগ দেন। প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। তবে ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনোনয়ন নিয়ে ঝামেলায় পড়ে সরকারি দল। অন্তত ২২টি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ৩৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা। অস্ত্র, হত্যা মামলার আসামিরাও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন। ভোটের প্রচারের শুরু থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
সর্বশেষ দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ২০ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম সফর করে বিদ্রোহীদের সরে দাঁড়ানোর আহবান জানান। আর তা না হলে তাদের দল থেকে বহিষ্কারেরও হুমকি দেন। মনোনয়নের ক্ষেত্রে তেমন ঝামেলা পোহাতে হয়নি বিএনপিকে। মহানগরের আহ্কবাক ডা. শাহাদাত হোসেন ধানের শীষের মনোনয়ন পেয়েছেন। সাধারণ ৪১টি এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলের ১৪টি পদে একক প্রার্থী দিয়েছে বিএনপিবিএনপির নেতারা ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে তাদের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে মাঠে আছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও সিটি নির্বাচন কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন।
করোনালকডাউনের মধ্যেও আওয়ামী লীগ বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন। আনুষ্ঠানিক ভোটের প্রচার বন্ধ থাকলেও নানা কৌশলে মাঠে আছেন প্রার্থীরা। বড় দুই দলেই কেন্দ্র কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করছেন মহানগরের নেতারা। এ সুযোগে তৃণমূলে সংগঠন গোছানোর কাজও এগিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ বিএনপি। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির পদটি এখনও ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে। মহানগর কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলন হয়নি, হয়নি নতুন কমিটিও। মহানগর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে আহবায়ক কমিটি। তবে নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের কাউন্সিল এবং সম্মেলনের কোন সম্ভাবনা নেই।
সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর চসিক নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী আগামী ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন চসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। আগের তফসিলেই ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সিটি নির্বাচনের সাধারণ ওয়ার্ড ৩০, ৩৭ ও ৪০ এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড ৬-এর প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে এসব ওয়ার্ডে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হয়। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে নির্বাচন দুই দফায় স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ২১ মার্চ প্রথম দফায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এরপর গত ১৪ জুলাই দ্বিতীয় দফায় স্থগিত করা হয়।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ ভোটগ্রহণ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে গত ২১ মার্চ প্রথম দফায় নির্বাচন স্থগিত করা হয়। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ছয় মেয়র প্রার্থী ছিলেন-আওয়ামী লীগের এম রেজাউল করিম চৌধুরী, বিএনপিডা. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, পিপলস পার্টির আবুল মনজুর, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মুহাম্মদ ওয়াহেদ মুরাদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. জান্নাতুল ইসলাম।
এছাড়া কাউন্সিলর পদে ২ শতাধিক প্রার্থী রয়েছেন। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট হয়। এ সিটির মেয়াদ শেষ হয় গত ৫ আগস্ট। নির্বাচনি আইন অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চসিক-নির্বাচন
আরও পড়ুন