Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীপুরের সংরক্ষিত বন : সীমানা পিলার নিয়ে নয়ছয়

শত বছরের পুরাতন রাস্তা দখলে নেয়ার অভিযোগ

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

 সংরক্ষিত ও বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি বনটিতেও ঠেকানো যায়নি দখলদারদের উৎপাত। বনের জমি দখল করে কৃষিকাজের পাশাপাশি গড়ে তোলা হয়েছে বসতিও।

দখলের পাশাপাশি এ ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ি গ্রামের গহীন বনের ভেতর শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের সিংরাতলী বিটের আওতাধীন সরকারি জমি নিয়ে দখলদার ও বন বিভাগের নয় ছয় মাপের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা মৌখিক প্রতিবাদ করেও ফল না পেয়ে মাসুদ রানা নামের একজন বাদী হয়ে শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বিন্দুবাড়ী মৌজার এস এ-৫২ এর ১৭২ দাগের বনের জমির পাশে হাসিবুর রহমান বাবুলের নিকট স্থানীয় মাসুদ রানা ২০১৭ সালে ৩৫ শতাংশ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি বিক্রি করেন। যার আর এস- ৯২ খতিয়ানে এস এ দাগ- ১৭৩ ও আর এস দাগ-৩৩০। এছাড়াও স্টাম্পের মাধ্যমে ২০১৯ সালে হাসিবুর রহমান বাবুল স্থানীয় মতিলালের কাছ থেকে বনের ২৩ শতাংশ জমি ক্রয় করে।

যার দাগ ১৭৪। খবর পেয়ে বনের দাগের পাশে ব্যক্তি মালিকানা দাগ থাকায় সীমানা নির্ধারণী মাপের ব্যবস্থা করে স্থানীয় বন বিভাগের লোকজন। কিন্তু মাপের পর সীমানার খুটি রাতের আঁধারে অন্যত্র সরিয়ে বনের জায়গা দখল করা হয় বলে জানিয়েছেন মাসুদ রানা।

স্থানীয় এক নেতার সঙ্গে নিজের গভীর সম্পর্ক রয়েছে জানিয়ে হাসিবুর রহমান বাবুল মুঠোফোনে বলেন, আমি আমার জমিতে পিলার বসিয়েছি। বন বিভাগের লোকজন বিষয়টি জানে। আপনার কোনো কথা থাকলে উনাদের সাথে কথা বলতে পারেন।

এদিকে, একই মৌজার এস এ-৫২ দাগের উত্তর-পশ্চিম দিকে শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের সিংরাতলী বিটের আওতাধীন গহীন বনের ভেতর এস এ-১৮৯ দাগ। যার আর এস-১০২১,১০২২ ও ১০২৩ দাগে ৫ একরের বেশি বনের জমি যার অধিকাংশে গজারী বন রয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, এ বনের দাগের কয়েক বিঘা জমি ও শত বছরের পুরাতন একটি রাস্তা দখলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে বন বিভাগে জানানো হলে তারা মাপ দিয়ে যথাস্থানে সীমানা পিলার বসিয়ে দেন। কিন্তু সে পিলার সরিয়ে বনের জমিতে কাটা তারের সীমানা প্রাচীর তৈরি করেন শাহাজহান মৃধা বেনু নামের এক ব্যক্তি। খবর পেয়ে বন বিভাগের লোকজন পুনরায় ওই জমি থেকে স্থাপনা সরিয়ে দিতে নির্দেশ প্রদান করে।

বনের এ জমি লিজ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে মাসুম খান নামে বেনুর এক কেয়ারটেকার জানান, আমাদের বস সরকারের কাছ থেকে ৫০ বছরের জন্য এ জমি লিজ নিয়েছেন। তবে, লিজের কাগজ দেখানো যাবে না।

শ্রীপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, এভাবে দখলদারদের কবলে পড়ে প্রতিনিয়তই শ্রী হারাচ্ছে শ্রীপুরের বনাঞ্চল। দখলদারদের হাত থেকে জমি রক্ষা করাটাই এখানে বন বিভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিয়ম রক্ষার স্বার্থের মতো দুয়েক জায়গায় বনরক্ষীরা দখলদারদের বাধা দিচ্ছে ঠিকই, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই প্রভাবশালীরা

বনের জমি দখল করে নেয় কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই। বনের জমি বেদখল হয়ে পড়াকেই এখানকার অন্যতম বড় সমস্যা হিসেবে দেখছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে শ্রীপুর রেঞ্জ অফিসের সিংরাতলী বিট কর্মকর্তা সেলিম মিয়া জানান, আমার পূর্বে যিনি দায়িত্বে ছিলেন তিনিই হাসিবুর রহমান বাবুলের জমির সীমানা নির্ধারণ করে পিলার বসিয়েছেন।

আমাদের সার্ভেয়ারের সাথে কথা হয়েছে। সময় মতো নতুন করে মেপে পুনরায় সীমানা বের করা হবে। আর ১৮৯ দাগে দুইবার সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে পিলার বসানো হয়েছে।

শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুল হক বলেন, ডিমার্গেশন পিলার সরিয়ে অন্যত্র দেয়া বিষয়ে কোনো সংবাদ পাইনি। আগামীকাল ওই জমিতে বিট কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু ইউসুফ জানান, গহীন বনের ভেতর সরকারি জমি লিজ দেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিযোগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ