Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নওগাঁয় পাখি কলোনির সরঞ্জাম সরিয়ে বালু উত্তোলন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা

নওগাঁ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৯ ডিসেম্বর, ২০২০, ১:০৯ পিএম

নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদীর মধুবন এলাকায় পাখি কালোনির সরঞ্জাম সরিয়ে বালু উত্তোলনের অভিযোগে সোমবার বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থলে গিয়ে বালু উত্তোলনের সরঞ্জাম সরিয়ে দিয়ে ভ্রাম্যমান আদালতে ৫০হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। এর আগে শনিবার রাতের কোন এক সময় আত্রাই নদীতে পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রমের বাঁশসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছিলেন বালু ব্যবসায়ীরা। সরকার যেখানে পাখিদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে সেখানে বালু ব্যবসায়ীরা কলোনি ধ্বংস করে বালু উত্তোলনের ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

জানা গেছে, গত ১০/১২ বছর থেকে সাইবেরিয়া, মঙ্গলিয়াসহ শীত প্রধান দেশ থেকে মহাদেবপুর উপজেলার আত্রাই নদের মধুবন, কুঞ্জবনসহ কয়েকটি এলাকায় প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সড়ালি, পানকৌড়ি, ডুবরিসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পরিযায়ী পাখি বিচরণ করে। এসব পাখিদের রক্ষায় স্থানীয় প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনসহ স্থানীয়রা কাজ করে আসছে। পাখিদের নিরাপত্তার জন্য নদীর মধুবন এলাকায় বাঁশ সহ বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে পাখি কলোনি তৈরী করে। স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসন মধুবন এলাকায় সরকার ঘোষিত মৎস্য অভয়াশ্রম ও পাখি কলোনি এলাকায় বালু মহল লীজ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এই দাবির অংশ হিসেবে চলতি বছরে প্রশাসন সেখানে লীজ দেয়া বন্ধ রাখে। কিন্তু তারপরও বালু ব্যবসায়ীরা পাখি কলোনিতে অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন করছিল।

প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলে গত ১৯নভেম্বর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করে ড্রেজার অপসারণ করে। এতে প্রায় দুই সপ্তাহ পর আবারো তারা পাখি অভয়াশ্রমে তিনটি ড্রেজার সরিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে। গত ২৬ডিসেম্বর রাতের কোন এক সময় পাখির অভয়াশ্রমের বাঁশসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে নদীর পশ্চিম অংশে ছয়টি ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছিল বালু ব্যবসায়ীরা।

প্রাণ ও প্রকৃতি সংগঠনের সভাপতি কাজি নাজমুল হক বলেন, মধুবন এলাকায় সরকারি ভাবে লীজ না দিলেও হাজী মোয়াজ্জেম হোসেন সহ কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী প্রভাব খাঁটিয়ে অবৈধ্যভাবে বালু উত্তোলন করছিল। ওই অংশটি উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে ঘোষিত মাছের অভয়াশ্রম এবং প্রতি বছর পাখিরা বসে। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করা হলে বালু ব্যবসায়ীর জরিমানা করে প্রশাসন। তারা ক্ষিপ্ত হয়ে কলোনির বাঁশ সরিয়ে ড্রেজার বসিয়ে আবারও বালু উত্তোলন শুরু করে। প্রাণ ও পাখি রক্ষায় বিষয়টি শক্তভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

এব্যাপারে ব্যবসায়ী হাজী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমরা সেখানেই ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা খরচ করে বাঁশকাঠ দিয়ে সেখানে অভয়াশ্রম করেছি। কিছু প্রতিপক্ষরা বিভিন্নভাবে বালু উত্তোলনে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করছে। আমরা চাই পাখিরা ভাল থাক। কিন্তু আমরা যে টাকা খরচ করে ইজারা নিয়েছি সেটাও দেখতে হবে। কোন কিছুই সেখান থেকে সরানো হয়নি। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি সঠিক না।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা খাতুন বলেন, বালু মহলের মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী ইজারা বর্হিভুত জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিল। এ অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, ওই স্থানে বালুমহলের যেসব সরঞ্জাম আছে সেগুলো সরানোর জন্য বলা হয়েছে। যদি তারা কেউ না শুনেন পরিবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভ্রাম্যমাণ আদালত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ