মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
অবিশ্বাস্য মনে হলেও চল্লিশ বছর আগে সংবাদ ভিত্তিক টিভি চ্যানেলের কোন অস্তিত্বই ছিল না। বড় কোন ঘটনার খবর টিভিতে দেখতে হলে খবর প্রচারের সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া গতি ছিল না। আর অনেক সময়ই সেই অপেক্ষা ছিল বহু ঘন্টার। সংবাদ প্রচারের দুনিয়াকে আমূল বদলে দিয়েছিল আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমেরিকার চব্বিশ ঘন্টার সংবাদ চ্যানেল সিএনএন বা কেবল নিউজ নেটওয়ার্ক। অনেকে বলেন সিএনএন সেই সময় রাজনীতির জগতকেও বদলে দিয়েছিল চিরকালের মত।
১৯৮০ সালে সিএনএন-এর গোড়াপত্তন করেছিলেন আমেরিকার মিডিয়া ধনকুবের টেড টার্নার। তিনি জানিয়েছিলেন, ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, মানবিকতা ও শান্তির লক্ষ্যে পথচলার উদ্দেশ্যে নিয়েই ২৪ ঘন্টার সংবাদ চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করছেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এই চ্যানেলে প্রচারিত আন্তর্জাতিক ঘটনাবলীর খবরাখবর এবং খবরের গভীরে গিয়ে তার বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমার দেশের মানুষ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শ্রোতাদর্শকরা আরও ভালভাবে জানতে পারবে পৃথিবীর অন্য দেশে মানুষ কীভাবে থাকে, কী করে। জানতে পারবে অন্য দেশে কী ঘটছে এবং কেন ঘটছে!’ সিএনএন-এ সংবাদের মান ও নিয়মনীতি বিষয়ে নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক ডেভিস ছিলেন এই সংবাদ চ্যানেল শুরুর সময়কার সাক্ষী। বিবিসির ইতিহাসের সাক্ষী অনুষ্ঠানকে তিনি বলছিলেন এর আগে আমেরিকায় টিভিতে সংবাদ প্রচার হতো দিনে মাত্র দুবার- সকালে একবার আর রাতে একবার। অবশ্য রেডিওতে খবর প্রচার হতো আরও ঘনঘন। ‘আমাদের চ্যানেল আসার আগে টিভির নির্বাহী কর্মকর্তারাই ঠিক করে দিতেন খবর কটার সময় প্রচার করা হবে। আমরা সেই ধারাটা বদলে দিলাম। দর্শকদের বললাম -আপনার যখন ইচ্ছা হবে খবর দেখবেন। আমরা দিনে ২৪ ঘন্টা খবর প্রচার করব। এর আগে একথা কেউ বলেনি।’ এখন একজন নির্বাহী কর্মকর্তা হলেও ১৯৮০ সালে শুরুর দিনগুলোতে রিক ডেভিস ছিলেন খেলার খবরের এক তরুণ প্রযোজক। সিএনএন ১ তারিখ ধার্য হয়েছিল পয়লা জুন ১৯৮০। তখন সমালোচকরা বলেছিল দর্শক চব্বিশ ঘন্টা খবর শোনার চ্যানেলে মোটেও আগ্রহী হবে না। ‘'অনেকে বলেছিল ২৪ ঘন্টা খবর কে দেখবে?’ বলছিলেন ডেভিস। অনেকের মত ছিল, ২৪ ঘন্টা চ্যানেল ভরার মত খবরই থাকবে না। কারিগরি চ্যালেঞ্জও ছিল নতুন আর বিশাল। এধরনের অনুষ্ঠানের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতাও সাংবাদিকদের ছিল না, তিনি বলছিলেন।
খবরের লাইভ সম্প্রচার এবং ২৪ ঘন্টা লাগাতার সংবাদ প্রচারই যে সংবাদ টিভি চ্যানেলের প্রধান চ্যালেঞ্জ সেট তারা বুঝেছিলেন যেদিন সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের প্রাণনাশের চেষ্টার খবর তারা কভার করলেন। ১৯৮১ সালে মি. রেগান ওয়াশিংটন হিলটন হোটেলে ভাষণ দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় তার ওপর আততায়ীর গুলি চালানোর সেই ঘটনা ছিল বিরাট খবর। ঘটনা ঘটার পর সব টিভি চ্যানেল ব্রেকিং নিউজে খবরটা দেয়। কিন্তু অন্য টিভি চ্যানেলগুলো খবরটা দিয়েই অন্যান্য স্থানীয় খবর প্রচারে চলে যায়। সিএনএন সেটা করেনি। চব্বিশ ঘন্টার রোলিং নিউজ চ্যানেল হিসাবে সিএনএন রোনাল্ড রেগানের প্রাণনাশ সংক্রান্ত খবরের বিস্তারিত খুঁটিনাটি প্রচার করতে থাকে। প্রতি মুহূর্তে যা জানা যাচ্ছে তা দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে শুরু করে। মানুষ প্রথম বুঝতে পারে লাইভ সংবাদ চ্যানেলের ক্ষমতা, দায়িত্ব, চ্যালেঞ্জ আর তার উপযোগিতার কথা।
তখন মোবাইল ফোনেরও যুগ নয়। সাংবাদিকদের হাতে ল্যাপটপও থাকত না। ছিল না কোন ইন্টারনেট ব্যবস্থা। কাজেই ব্রেকিং খবর ঘটনাস্থল থেকে কীভাবে দেবেন সংবাদদাতারা? মি. ডেভিস বলছিলেন সেটা ছিল বিশাল একটা চ্যালেঞ্জ। ‘ভাবাই যায় না! এমনকী ঝানু সাংবাদিকরাও ঘটনাস্থল থেকে লাইভ কীভাবে করবেন? কী সরঞ্জাম তার হাতে আছে? তিনি ওয়্যারে খবর পাঠাতে অভ্যস্ত। এছাড়া সরঞ্জাম বলতে বড়জোর ফ্যাক্স মেশিন বা তারের সংযোগে সাবেকী টেলিফোন আর নয়ত (ওয়্যারলেস) বিপার ফোন।’ তিনি বলছেন ভিডিও ছবি পাঠানো একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। এমনকি আমেরিকার ভেতরে বিভিন্ন জায়গা থেকেও ভিডিও পাঠাতে সাংবাদিকদের ঘাম ছুটে যেত। আর বিদেশ থেকে ভিডিও ছবি পাঠানো ছিল রীতিমত কঠিন। বিশেষ করে মাঠে ঘাটে যারা খবর কভার করছেন, তাদের সাথে এমনকি যোগাযোগ করাও একেবারেই অসম্ভব ছিল। সাংবাদিকদের যখন খবর প্রচারের সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটতে হচ্ছে, তখন খবরের ভিডিও পাঠাতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হতো, অহেতুক অনেক সময় নষ্ট হতো, বলেন তিনি। আর ঘটনা যদি পৃথিবীর আরেক প্রান্তে ঘটতো তাহলে যোগাযোগ তো ছিল একটা দু:সাধ্য ব্যাপার। আপনি কোথায় আছেন অফিসে সেই খবরটুকু পৌঁছনই ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।
সব প্রতিকূলতার মধ্যেই এক দশকের ভেতর সিএনএন লাইভ খবর সম্প্রচারের ক্ষেত্রে একটা সুনাম গড়ে তোলে। বিশেষ করে, ১৯৯১ সালে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় জোট বাহিনী যখন বাগদাদে বোমা হামলা চালায়, তখন সিএনএন আমেরিকানদের বসার ঘরের টিভি সেটে সেই বোমা হামলার লাইভ ছবি পৌঁছে দেয়। আমেরিকার মানুষ সংবাদদাতার কণ্ঠে শোনেন, ‘আপনি হয়ত পেছনে বোমার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন...।’ চ্যানেলের রেটিং বেড়ে যায়, পাশাপাশি বেড়ে যায় কোন কোন মহল থেকে সমালোচনাও। কিছু রাখঢাক না করে যুদ্ধের ভয়াবহতাকে মানুষের এত কাছাকাছি নিয়ে আসাকে অনেকে মেনে নিতে পারেননি। কেউ কেউ দাবি করেন -যুদ্ধকে একটা আকর্ষণীয় পণ্য হিসাবে দেখানো হচ্ছে। রিক ডেভিস বিবিসিকে বলেছেন, ‘কোন সন্দেহ নেই, বাগদাদের ওপর বোমাবর্ষণের ঘটনা, সিএনএন-এর খবর সম্প্রচারের ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী মুহূর্ত ছিল। বাগদাদ থেকে ওই ঘটনার লাইভ খবর আর কোন চ্যানেল প্রচার করতে পারেনি। মানুষ সেই প্রথম চোখের সামনে রণাঙ্গন দেখেছিল- এর আগে যুদ্ধক্ষেত্র সাধারণ মানুষ চোখে দেখেনি।’
খবরে দেখানো হয়েছিল লক্ষ্যবস্তুর ওপর বোমা ফেলার ভিডিও ফুটেজ। সংবাদদাতা খবর দিচ্ছিলেন- প্রেসিডন্টের প্রাসাদও তাদের বাহিনীর নিশানার মধ্যে...ওই সম্প্রচার থেকে আরেকটা সমালোচনা দানা বেঁধেছিল। যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে সাতদিন চব্বিশ ঘন্টা লাইভ সম্প্রচার সামরিক কৌশলের জন্য কতবড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে?
সমালোচকরা বললেন এধরনের সংবাদ চ্যানেলের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কৌশল জনসমক্ষে প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে এবং যুদ্ধের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে। তৈরি হল উদ্বেগ। অনেকে এর নাম দিল ‘সিএনএন এফেক্ট’। ডেভিস বলছেন নেতিবাচক এসব সমালোচনা চ্যানেলের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিলেও, এর ইতিবাচক দিকটা ছিল- কী হচ্ছে সেটা মানুষের সামনে তুলে ধরার সুযোগ। তিনি এখনও বিশ্বাস করেন লোকে যেটাকে ‘সিএনএন এফেক্ট’ বলে সমালোচনা করেছিল, তার ভূমিকা আসলে ছিল খুবই শক্তিশালী, এবং রাজনীতির জগতেও একটা বড় পরিবর্তন আনতে তা সাহায্য করেছিল। যুদ্ধ, নাগরিক আন্দোলন, অভ্যুত্থান এধরনের স্পর্শকাতর ও বিতর্কিত বিষয়গুলো টিভির পর্দায় উঠে আসাটা তাদের জন্য একটা জবাবদিহিতার জায়গা তৈরি করেছিল। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।