পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল লেভেল ক্রসিংয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসকে ধাক্কা দিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। রেলওয়ে সূত্র জানায়, লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান ঘুমিয়ে থাকায় গতকাল শনিবার সকাল ৭ টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত ১৬ অক্টোবর যশোরের অভয়নগর এলাকায় একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় ৫ জনের মৃত্যু হয়। রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলোতে এরকম দুর্ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে। অথচ দুর্ঘটনা বন্ধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এতে একদিকে ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে কাঙ্খিত গতিতে চলতে পারছে না ট্রেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জয়পুরহাট থেকে ছেড়ে আসা বাঁধন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস (বগুড়া জ-১১-০০০৮) জয়পুরহাট থেকে পাঁচবিবি হয়ে হিলির দিকে যাচ্ছিল। জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল রেলগেট অতিক্রম করার সময় গেটম্যান ঘুমিয়ে থাকায় গেট না ফেলার কারণে বাসটি রেললাইনের উপর উঠে যায়। সেই সময় পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি সজোরে ধাক্কা দেয় বাসটিকে। ট্রেনটি রেললাইন ধরে ছেঁচরিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণ দিকে নিয়ে যায় বাসটিকে। এ সময় বাসে থাকা ১০ যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন, আহত হন আরো ৫ জন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে জয়পুরহাট ও পাঁচবিবি থেকে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা হতাহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫ জনের অবস্থার অবনতি হলে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে পাঠানো হলে পথিমধ্যে ২ জন মারা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের লেভেল ক্রসিংগুলোর (বৈধ-অবৈধ) প্রায় ৮৪ শতাংশই অরক্ষিত। আর এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঝরছে সাধারণ মানুষের প্রাণ। ২০০৮ থেকে ২০১৯-এই ১১ বছরে লেভেল ক্রসিংগুলোয় ৩১০টি দুর্ঘটনায় ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৯টি দুর্ঘটনায় ১৩ জন মারা গেছেন। বিগত এক যুগে রেলওয়েতে ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও লেভেল ক্রসিংগুলো নিরাপদ করতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ক্রসিং উন্নয়নে গত ৬ বছরে মাত্র ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে প্রয়োজন প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। জানা গেছে, রেলওয়েতে মোট লেভেল ক্রসিং ২ হাজার ৮৫৬টি। যার মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩৬১টির। ১ হাজার ৪৯৫টি বৈধ ক্রসিংয়ের মধ্যে ৬৩২টি গেটকিপার নেই। ৩৩টি ক্রসিং কে বা করা ব্যবহার করছে, তা কেউ জানে না। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের বেশির ভাগ তৈরি হয়েছে এলজিইডি, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তার কারণে। এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে ট্রেন যথাযথ গতি নিয়ে চলতে পারছে না। এসব ক্রসিংয়ে ট্রেনযাত্রীসহ সাধারণ মানুষেরও প্রাণ যাচ্ছে। আর এসব ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানচালকসহ সাধারণ মানুষই। যেসব প্রতিষ্ঠান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন না নিয়ে অবৈধ লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করছে, দুর্ঘটনার জন্য তারাই দায়ী। এর আগেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ লেভেল ক্রসিংগুলোতে গেটকিপার নিয়োগের কথা বললেও গত কয়েক বছরে তা করা হয়নি। যাদেরকে গেটকিপার হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তারা সবাই অস্থায়ীভিত্তিক। এ কারণে দায়িত্বে অবহেলা করতে তারা দ্বিধা করে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ক্রসিংগুলোয় কর্মরত ৭৫ শতাংশ লোকই দৈনিক মজুরিতে চাকরি করছেন বছরের পর বছর। অভিযোগ রয়েছে, দৈনিক মজুরির মাধ্যমে সাধারণ লোক দিয়ে কাজ করালে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা লাভবান হন। এ কারণেই স্থায়ীভিত্তিতে লোক নিয়োগ করা হয় না।
জানা গেছে, দক্ষ-অদক্ষ যাচাই না করেই অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দেয়া হয়। এ কাজে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। চক্রটি টাকার বিনিময়ে লোক নিয়োগের ব্যবস্থা করে। তাছাড়া অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ পাওয়া লোকজনকে বেতনের একটি অংশ চক্রের মাধ্যমে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পকেটে চালে যায়। জানা গেছে, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত গেটম্যানরা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হওয়ায় তারা বিভিন্ন সময় ঘুমিয়ে পড়ে। এতে ক্রসিংগুলোয় দুর্ঘটনা ঘটে। স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী গেটম্যানদের কোনো কালেই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। সূত্র জানায়, জয়পুরহাটের দুর্ঘটনাস্থলে গেটকিপারের দায়িত্বে মাত্র একজন। সান্তাহার-পার্বতীপুর সেকশনে সন্ধ্যার পর আন্তঃনগর ট্রেন বেশি চলাচল করে। সে কারণে একজন গেটকিপারকে সারারাতই ডিউটি করতে হয়। সকালে তিনি ঘুমিয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। ব্যস্ত ওই গেটের জন্য কমপক্ষে তিনজন কিপার দরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, ২০১৪ সালের দিকে লেভেল ক্রসিং উন্নয়ন ও অস্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ প্রকল্পের আওতায় ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ আগামী বছর শেষ হওয়ার কথা। এ বরাদ্দ থেকে দুই অঞ্চলে অস্থায়ী প্রায় ১৬শ’ গেটম্যানের বেতন বাবদ ৬৪ কোটি টাকা চলে গেছে। বাকি ৩৬ কোটি টাকা দিয়ে কোনো মতে বৈধ ক্রসিংগুলোর মাত্র ২৬ শতাংশ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। ১৯৮৪ সালের পর থেকে রেলে কোনো স্থায়ী গেটম্যান নিয়োগ দেয়া হয়নি। ২০১৮ সালে ১০০০ স্থায়ী গেটম্যান নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হলেও বর্তমানে রেলের নিয়োগবিধি জটিলতার কারণে ২ বছর ধরে সব ধরনের নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৫৯০ জন গেটম্যান অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করছেন।
কর্মকর্তারা জানান, অবৈধ নয়, শুধু বৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোর যথাযথ নির্মাণ-রক্ষণাবেক্ষণ করতে ন্যূনতম ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন। বৈধ ক্রসিংগুলোয় হাতে চালিত লোহার বার ফেলা হয়। প্রায়ই বারগুলো ভাঙা থাকে, উঠাতে-নামাতে সময় লেগে যায়। এই সুযোগে অনেক যান ভেতরে প্রবেশ করে যায়। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পেলে গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব।
বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিংগুলোয় দুর্ঘটনা বাড়ায় স¤প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল কমিটির বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে রেললাইনের ওপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হলে অনুমতি নিতে হবে। যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক সামছুল হক বলেন, রেলের উন্নয়ন হলেও তা সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। গতি দিন দিন কমে আসছে। রেলে অর্ধেকেরও বেশি লেভেল ক্রসিং অবৈধ। এগুলো মরণফাঁদ। এ ফাঁদে প্রতিনিয়ত ট্রেনযাত্রীসহ সাধারণ যাত্রী প্রাণ হারাচ্ছেন।
এদিকে, গতকালের দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তারা হলেন, জয়পুরহাট সদরের দোগাছী এলাকার শরীফুল ইসলামের ছেলে আ. লতিফ (৩৫), হিচমী দক্ষিণপাড়া এলাকার মানিকের ছেলে রমজান আলী (৪০), শহরের চিত্রাপাড়া এলাকার নিশি মন্ডলের ছেলে রেজাউল, পাঁচবিবি উপজেলার আটুল গ্রামের আলতাফ হোসেনের ছেলে সরওয়ার হোসেন বাবু (৪০) ও আরিফুর রহমান (২০), আটাপাড়া এলাকার মরহুম মোশারফ হোসেনের ছেলে মনজুরুল (২৮), আক্কেলপুর উপজেলার চকবিলা গ্রামের দুদু কাজীর ছেলে সাজু মিয়া, ক্ষেতলাল উপজেলার ইটাখোলা গ্রামের মোংলার ছেলে সুমন, নওগাঁ জেলার রানীনগরের বিজয়কান্দি এলাকার গোরা মিয়ার ছেলে বাবুল(৫৫)। পরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান পাঁচবিবি উপজেলার সিরাজের ছেলে জিয়া ও টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর উপজেলার মাটিকাটা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস। মৃত অপর ১ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। নিহত প্রত্যেকের লাশ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য জয়পুরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আহত সকলের সুচিকিৎসার জন্য সকল ব্যবস্থা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হয়েছে।
ঘটনার পরপরই জয়পুরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. সামছুল আলম দুদু, জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র রায়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান রকেট, পুরানাপৈল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম সৈকতসহ প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাগন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় জয়পুরহাট জেলা প্রশাসন ও রেল বিভাগের পক্ষ হতে ২টি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রেজা হাসানকে প্রধান, পাঁচবিবি সার্কেলের এসপি ইসতিয়াক আহম্মেদ ও সড়ক বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আজিজুল হককে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি আগামী ৩দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিবেন। অপরদিকে রেল বিভাগের পক্ষ হতে পাকশী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসিম উদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ আব্দুর রহীম, পাকশী বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) আশিষ কুমার মন্ডল, পাকশী বিভাগীয় মেডিকেল আফিসার সাকিল আহম্মেদ। কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঘটনার পর সকাল ৭টা থেকে জেলার সাথে সকল প্রকার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ থাকলেও ৭ ঘন্টা পর বেলা ২টা ৪০ মিনিটে উদ্ধারকারী ট্রেনের তৎপরতায় লাইনচ্যুত ইঞ্জিন অপসারণের পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।