Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোলাপি বলে রক্তাক্ত ভারত

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০২ এএম

দিবা-রাত্রির টেস্টে ভারত ‘মিনোজ’ই বলা যায়। হালের সকল দল যেখানে গোলাপি বলের টেস্ট খেলতে উদগ্রীব, সেখানে নিজেদের নাক উঁচু নীতির কারণে আইসিসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে খেলতে নারাজি জানায় বার বার। তাই বলে টেস্ট ক্রিকেটে তাদের অবস্থান কিন্তু শীর্ষের আশে পাশেই ঘুরপাক খায়। এখন যেমন আছে তিনে। তবে লড়াইটা যেহেতু শীর্ষে থাকা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তাদেরই মাটিতে, একটু রোমাঞ্চের আশা করতেই পারেন ক্রিকেট রোমান্টিকরা। গোলাপি বলে হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার দিকে পাল্লা কিছুটা ভারী থাকবে এটাও অনুমেয় ছিল। প্রথম দুদিন সব ঠিকঠাকই চলছিল ভারতের। প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানের লিডও পেয়ে গিয়েছিল তারা। কে জানত এই টেস্ট ভারত হেরে যাবে তৃতীয় দিনের দেড় সেশনের মধ্যেই। তা-ও আবার ৩৬ রানের লজ্জা মাথায় নিয়ে! হ্যাঁ, ভুল পড়ছেন না। ভারতকে টেস্টে তাদের সর্বনিম্ন রানের লজ্জায় ডুবিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।

অ্যাডিলেডে টেস্টে ভারত দ্বিতীয় ইনিংসে করতে পেরেছে মাত্র ৩৬ রান। টেস্ট ইতিহাসে এটাই তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসে ৪২ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত। সব মিলিয়ে টেস্টে এটি যৌথভাবে চতুর্থ সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। পুরো ইনিংসে ভারতের একজন ব্যাটসম্যানও যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। সর্বোচ্চ ৯ রান করেছেন ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল। ভারতীয় ব্যাটিংকে ছেলেখেলা বানিয়ে ৮ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন হ্যাজেলউড। ২১ রানে ৪ উইকেট গেছে কামিন্সের ঝুলিতে।
গতি, স্যুয়িং আর বাড়তি বাউন্সে ব্যাটসম্যানদের আতঙ্ক ছড়ালেন প্যাট কামিন্স-জস হ্যাজেলউড। প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানের লিড পেয়েছিল ভারত। ম্যাচে মনে হচ্ছিল তারাই অনেকটা এগিয়ে। সেই হিসেব নিকেশ তৃতীয় দিনের শুরুতেই বদলে দিলেন কামিন্স -হ্যাজেলউড। দ্বিতীয় ইনিংসে বলই দেখল না ভারত। পড়ল চূড়ান্ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। গতকাল দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার পর স্বাগতিকদের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৯০ রান। ২ উইকেট হারিয়ে অনায়াসে ওই রান তুলে নিয়েছে টিম পেইনের দল। চার টেস্টের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
টস জিতে প্রত্যাশিত ব্যাটিং পেয়েছিলেন বিরাট কোহলি। কঠিন পরিস্থিতি, উইকেট বিবেচনায় প্রথম ইনিংসে খারাপ করেননি তারা। অধিনায়কের ৭৪ রানে ২৪৪ করেছিল ভারত। ওই রান যে বেশ জুতসই দেখা যায় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে। স্বাগতিকরা প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৯১ রানে। একাধিক জীবন পাওয়া অধিনায়ক পেইন ৭৩ না করলে তাদের থামতে হতো আরও আগে। ৫৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনেই দ্বিতীয় ইনিংস শুরু ভারতের। ওপেনার পৃথ্বী শকে হারিয়ে দিন শেষ করার পর ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ ছিল তাদেরই।
তবে তৃতীয় দিনের শুরুতেই সব উলটপালট করে দেন জস হ্যাজেলউড-প্যাট কামিন্স। গতি, বাউন্স আর ছোট ছোট বিষধর স্যুইংয়ের কোন জবাব দিতে পারেননি ভারতের ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৮ রানে ৫ উইকেট নেন হ্যাজেলউড। ২১ রানে ৪ উইকেট কামিন্সের।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের কেউই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। টপাটপ উইকেট হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে গুটিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে তারা।
৯০ রানের লক্ষ্যে একটুও বেগ পেতে হয়নি অজিদের। দুই ওপেনার মিলেই আনেন ৭০ রান। এরপর রান আউটে কাটা পড়েন ম্যাথু ওয়েড। ৬ রান করে আউট হন মারনাস লাবুশানে। জো বার্নস ৫১ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন। ২৬ ডিসেম্বর মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে মুখোমুখি হবে দুদল। যেটিতে খেলা হচ্ছে না কোহলির। প্রথম সন্তানের জন্ম উপলক্ষে ভারত ফিরে যাচ্ছেন অধিনায়ক। সিরিজের বাকি তিন টেস্ট খেলবেন না। তার জায়গায় দলকে নেতৃত্ব দেবেন আজিঙ্কা রাহানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ২৪৪ ও ২য় ইনিংস : (আগের দিন শেষে ৯/১) ২১.২ ওভারে ৩৬ (আগাওয়াল ৯, বুমরাহ ২, পুজারা ০, কোহলি ৪, রাহানে ০, বিহারী ৮, ঋদ্ধিমান ৪, অশ্বিন ০, উমেশ ৪, শামি ১ আহত অবসর; স্টার্ক ০/৭, কামিন্স ৪/২১, হেজেলউড ৫/৮)।
অস্ট্রেলিয়া : ১৯১ ও ২য় ইনিংস : (লক্ষ্য ৯০) ২১ ওভারে ৯৩/২ (ওয়েড ৩৩, বার্নস ৫১*, লাবুশেন ৬, স্মিথ ১*; যাদব ০/৪৯, বুমরাহ ০/২৭, অশ্বিন ১/১৬)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : টিম পেইন।
সিরিজ : ৪ ম্যাচে ১-০তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রক্তাক্ত-ভারত

২০ ডিসেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ