পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে (রহ.) হত্যার অভিযোগ এনে হেফাজতে ইসলামের ৩৬ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে নালিশি মামলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিপলু কুমার দে’র আদালতে মামলাটি দায়ের করেন আল্লামা শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মঈনুদ্দীন। তিনি হেফাজতের কোন পদে নেই। অভিযুক্তদের সবাই হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা হাফেজ জুনাইদ বাবুনগরীর অনুসারী।
বাদীর আইনজীবী আবু হানিফ বলেন, মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে আহমদ শফীকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া এবং হত্যার অভিযোগে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালত মামলা গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। একমাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন- হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস এবং হাবিব উল্লাহ, আহসান উল্লাহ, প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়েজী, নুরুজ্জামান নোমানী, আব্দুল মতিন, মো. শহীদুল্লাহ, মো. রিজওয়ান আরমান, মো. নজরুল ইসলাম, হাসানুজ্জামান, এনামুল হাসান ফারুকী, মীর সাজেদ, জাফর আহমদ, মীর জিয়াউদ্দিন, আহমদ, মাহমুদ, আসাদউল্লাহ, জোবায়ের মাহমুদ, এইচ এম জুনায়েদ, আনোয়ার শাহ, আহমদ কামাল, নাছির উদ্দিন, কামরুল ইসলাম কাসেমী, মোহাম্মদ হাসান, ওবায়দুল্লাহ ওবাইদ, জুবায়ের, মোহাম্মদ, আমিনুল হক, রফিক সোহেল, মোবিনুল হক, নাঈম, হাফেজ সায়েমউল্লাহ ও হাসান জামিল। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ৮০-৯০ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া সাক্ষী করা হয়েছে ছয়জনকে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর ১০৩ বছর বয়সে শাহ আহমদ শফী রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মইনুল ইসলাম মাদরাসার মহাপরিচালক ছিলেন তিনি। টানা তিনদিন ছাত্র আন্দোলনের মুখে মাদরাসার মহাপরিচালক পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। পরে শূরা কমিটির সভায় আল্লামা শফীর পুত্র আনাস মাদানীকে মাদরাসার শিক্ষকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এসব ঘটনার মধ্যে আগে থেকেই নানান বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অসুস্থতা বেড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অন্যদিকে দাবি মেনে নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনের পরিসমাপ্তি করে ক্লাসে যোগ দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আন্দোলনের নামে আল্লামা শফীকে জিম্মি করে আনাস মাদানীকে বহিষ্কার ও তার পদত্যাগের ঘোষণা মাইকে বলার জন্য চাপ দেন অভিযুক্তরা। তিনি অনীহা প্রকাশ করলে তার কক্ষের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিদ্যুতের অভাবে অক্সিজেন লাগাতে না পারায় তিনি কোমায় চলে যান। তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেওয়া হয়। শেষপর্যন্ত মাদরাসা থেকে বের করে হাসপাতালে নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হলেও তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স আটকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।
মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়, ১৭ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তদের কয়েকজনের নেতৃত্বে উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা আনাস মাদানীর কক্ষে ঢুকে সেখান থেকে নগদ ২৮ লাখ টাকা, স্ত্রী ও মেয়ের ২০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেন। মাওলানা ওমরের কক্ষ থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা, মুফতি ওসমানের কক্ষ থেকে নগদ ৬০ হাজার টাকা ও মাওলানা দিদারের কক্ষ থেকে ৩০ হাজার টাকা লুট করে নেয়। আরজিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত নাছির উদ্দিন মুনির ও মামুনুল হকের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্ররোচণায় মাদরাসায় ভাঙচুর করে শাহ আহমদ শফীকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে এবং উনাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে না দেওয়ার মাধ্যমে প্রাণে হত্যা করা হয়েছে। মাদরাসা অবৈধভাবে গ্রাস করার জন্য পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববরেণ্য এই ইসলামী চিন্তাবিদকে হত্যা করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধির ১৪৩, ৪৪৮, ৪২৭, ১১৭, ৩২৩, ৩৪১, ৩৮০, ৩০৪, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ এনেছেন বাদী।
মামলা প্রসঙ্গে হেফাজতের প্রচার সম্পাদক জাকারিয়া নোমান ফয়জী সাংবাদিকদের বলেন, মাদরাসার ছাত্ররা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করেছে। এটি হাটহাজারী মাদরাসার বিষয়, এখানে হেফাজতের কোন নেতার ইন্ধন কিংবা ভ‚মিকা নেই। মামলায় কি অভিযোগ আনা হয়েছে তা দেখার পর সাংগঠনিকভাবে বিস্তারিত বক্তব্য দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালের পর হাটহাজারী মাদরাসায় ইতিহাসের স্মরণকালের সর্ববৃহৎ নামাজে জানাজা শেষে তাকে মাদরাসা প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। জানাজায় ইমামতি করেন আল্লামা শফীর পুত্র আল্লামা ইউসুফ মাদানী। আল্লামা শফীর ইন্তেকালের পর নতুন আমির নির্বাচন নিয়ে আনাস মাদানী অনুসারী হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতা দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলন করে জুনাইদ বাবুনগরীসহ হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেন। সর্বশেষ জাতীয় প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন নিয়েও তারা প্রশ্ন তোলেন। ওই কমিটিতে আনাসপন্থী বেশ কয়েকজন নেতাকে রাখা হয়নি।
মামলা দায়েরের কয়েক ঘণ্টা আগে সর্বশেষ গত বুধবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ করেন হেফাজতের বর্তমান কমিটি থেকে বাদ পড়া কয়েকজন নেতা। ওই সভায় মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহীসহ বেশ কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।