পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির পিতার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালে বা তাতে মদদ দিলে যাবজ্জীবন কারাদ- ও সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রেখে আইন করার প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছর জেল এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৬’-এর খসড়ার অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ব্যক্তি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদালত থেকে মীমাংসিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিষয়াবলি বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যে কোনো প্রচার, প্রগাগান্ডা চালালে বা তাতে মদদ দিলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদ-ে, সর্বনিম্ন তিন বছরের কারাদ-ে, সর্বোচ্চ এক কোটি টাকার অর্থদ-ে বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, আইনটির প্রাথমিক অনুমোদন হওয়ার কারণ হচ্ছে অন্যান্য আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করা। এ ছাড়া বিভিন্ন অপরাধের জন্য শাস্তির যে মাত্রা প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা। মন্ত্রিসভা নতুন এই আইনের প্রাথমিক নীতিগত অনুমোদন দিলেও সেটি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন অপর্যাপ্ত, এটি বিস্তারিত আইন। এই আইন পাস হলে আইসিটি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা ওই আইন থেকে বাদ পড়বে। তবে আইসিটি আইনে ইতোমধ্যে দায়ের হওয়া মামলাগুলো ওই আইন অনুযায়ী চলবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, আইনে ব্যক্তিপর্যায় থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধের সংজ্ঞা এবং শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ধারা এ আইনে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিষয়গুলো পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করে আইনমন্ত্রীকে চূড়ান্ত করতে বলেছে মন্ত্রিসভা, বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আইনমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে বৈঠক করে আরেকটু পরিশীলিত করবেন।
নতুন আইনে সাইবার ক্রাইমকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের জন্য আইনের ১৫-এর ২, ৩, ৪ ও ৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা আদালত কর্তৃক মীমাংসিত মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিষয়াবলি বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে যেকোনো প্রকার প্রচার, প্রোপাগান্ডা বা এতে মদদ দেন তাহলে তার শাস্তি হবে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-, সর্বনিম্ন ৩ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-।
তিনি বলেন, অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর ব্যাপারে অপরাধ করলে সর্বনি¤œ ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদ- এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদ- বা উভয় দ- হতে পারে। কোনো ব্যক্তি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো, যেমনÑবিমান পরিচালনার জন্য যে সাইবার ম্যানেজমেন্ট আছে, এটার মধ্যে কেউ হামলা বা হ্যাক করে তাহলে এ দ- কার্যকর হবে।
ডিজিটাল বা সাইবার সন্ত্রাসরোধ করার জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছর এবং সর্বনিম্ন ২ বছরের কারাদ- বা সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দ- হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
সচিব বলেন, বাংলাদেশের অখ-তা ও সংহতিতে আঘাত করে এমন কোনো বিষয়; অন্য কোনো রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘিœত বা সম্পদ ক্ষতি বা বিনষ্ট করে এমন কোনো বিষয়; সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, সহায়তা বা প্ররোচিত করা; কোনো সশস্ত্র বা বৈরী পরিস্থিতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেনি এমন কোনো বেসামরিক ব্যক্তি বা অন্য কোনো দেশ বা প্রতিষ্ঠানের কোনো কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং ইত্যাদি নেটওয়ার্কের মারাত্মক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে কোনো কিছু করাÑএগুলো সবগুলো সাইবার সন্ত্রাস। কম্পিউটার, মোবাইল এবং ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে অপরাধ করলেও রয়েছে শাস্তি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব জানান, কম্পিউটার, মোবাইল এবং ডিজিটাল ডিভাইসসংক্রান্ত জালিয়াতি করলে শাস্তি হবে সর্বনিম্ন ১ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর এবং অর্থদ- ৩ লাখ টাকা বা উভয় দ-। কম্পিউটার ও মোবাইলসংক্রান্ত প্রতারণা বা হুমকি প্রদানের শাস্তি সর্বনিম্ন ১ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদ- এবং অর্থদ- ৩ লাখ টাকা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
প্রতারণা বা প্রতারণার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করে বা অন্য কোনো ব্যক্তির তথ্য নিজের দেখালে সর্বনিম্ন ১ বছর ও সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল এবং অর্থদ- হবে ৩ লাখ টাকা বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন।
সচিব জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে। এর প্রধান হবেন সরকার নির্ধারিত মহাপরিচালক। আইনে জরুরি পরিস্থিতিতে মহাপরিচালকের নির্দেশ প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে মহাপরিচালক সরকারের কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে কোনো কম্পিউটার রিসোর্সের মাধ্যমে কোনো তথ্য সম্প্রচারে দ্রুত বাধা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করতে পারবেন। সম্ভাব্য লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মহাপরিচালকের নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। কোনো ব্যক্তি এমন কাজ করতে উদ্যোগী হলে বা হয়েছেন যার ফলে এ আইন বা বিধি-প্রবিধান বা লাইসেন্সের কোনো বিধান বা শর্ত বা মহাপরিচালকের কোনো শর্ত লঙ্ঘিত হচ্ছে, তাহলে মহাপরিচালক পর্যবেক্ষণ করে তা বন্ধ করে দিতে পারবেন। এটা না মানলে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।’
এই আইনে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। কোনো ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত বা জ্ঞাতসারে অন্য কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া তার ব্যক্তিগত ছবি তোলে এবং প্রকাশ করে বা প্রেরণ করে বা বিকৃত করে তাহলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। এর শাস্তি হবে ২ বছরের কারাদ- বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-।
পর্নোগ্রাফির জন্যও শাস্তি সর্বনিম্ন ২ বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদ-, সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত করা। মানহানি, মিথ্যা, অশ্লীল বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য কোনো ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে অপরাধ করলে শাস্তি হবে সর্বোচ্চ ২ বছর ও সর্বনিম্ন ২ মাস জেল অথবা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-।
শত্রুতা সৃষ্টি বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোর মতো কাজ ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অপরাধ করলে শাস্তি সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদ-, কমপক্ষে ১ বছরের কারাদ- এবং ৭ লাখ অর্থদ- বা উভয় দ-।
কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করলে মূল অপরাধীর যে দ- তিনিও সেই একই দ-ে দ-িত হবেন। কোম্পানির ক্ষেত্রে ব্যক্তিপর্যায়ের দ- কার্যকর হবে। তবে নেটওয়ার্ক সেবা প্রদানকারী তৃতীয় কোনো পক্ষ অপরাধে জড়িত না থাকার প্রমাণ করতে পারলে তারা শাস্তি পাবেন না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে কয়েকটি ধারায় শাস্তির বিধান থাকলেও তা অপর্যাপ্ত। পূর্ণাঙ্গ আইন পৃথিবীর অনেক দেশে আছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও আছে, সেটার আদলে এ আইন করা হয়েছে।
এই আইনে অনেকগুলো ক্রস-কাটিং বিষয় জড়িত উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিব বলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়সহ আরও অনেকগুলো মন্ত্রণালয়ের ওভারলেপিং আছে। এজন্য আইনটি পরিমার্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শাস্তিগুলোর বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে ঠিক করার জন্য আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনটা বেশি করা বা কমানোর প্রয়োজন করা।
নতুন আবহাওয়া আইনে যুক্ত ভূমিকম্প সংকেত :
প্রশাসনিক আদেশে পরিচালিত আবহাওয়া অধিদফতরকে আইনি কাঠামো দিতে ‘আবহাওয়া বিষয়ক আইন, ২০১৬’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আইনে জাতীয় ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক স্থাপন ও ভূমিকম্পসংক্রান্ত সংকেত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নতুনভাবে আইন তৈরি করা হচ্ছে, এতদিন আবহাওয়ার কোনো আইন ছিল না। আবহাওয়া অধিদফতর প্রশাসনিক আদেশে চলছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সাথে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সংযোগ আছে। কিন্তু আমাদের কোনো আইন নেই। তাই নতুন আইনের প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনের আওতায় অধিদফতর ও অধিদফতরের মহাপরিচালককে আইনি কাঠামোতে নিয়ে আসা হবে।’ এছাড়া পর্যবেক্ষক নেটওয়ার্ক স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আইনে বিধান রাখা হয়েছে। পর্যবেক্ষণ মানসম্মত করার বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে। পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ ডিভাইস, জলবায়ু পর্যবেক্ষণ ও জাতীয় ভূমিকম্প নেটওয়ার্ক স্থাপন এই আইনের মূল কথা, বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। আইনে আবহাওয়া বিজ্ঞানীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তারাই অধিদফতর পরিচালনা করবে। আইনের ২৪-২৬ নম্বর ধারায় ভূমিকম্প সংক্রান্ত সংকেত দেওয়ার কথা বলা রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ধারায় অধিদফতরের লোকবল নিয়োগ, পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন, আবহাওয়া স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণ, পূর্বাভাস সতর্কীকরণের কী ব্যবস্থা নেওয়া হবেÑএ-সংক্রান্ত গাইডলাইন যুক্ত রয়েছে।
বনের গাছ কাটা যাবে না আরও ৭ বছর :
দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর বিধি-নিষেধের সময় ২০২২ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের এ প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত ও প্রকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল। মন্ত্রিসভা ২০২২ সাল পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপের মেয়াদ বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে। সংরক্ষিত ও প্রকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধের মেয়াদ গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর নতুন বিধি-নিষেধের মেয়াদ গত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এছাড়া বৈঠকে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৬, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৬ এবং খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৬-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। আগে এগুলো অধ্যাদেশ আকারে পরিচালিত হতো।
সম্প্রীতি নষ্ট করতেই হত্যা-হামলা : প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা কখনও সফল হবে না। এই দেশে সব ধর্মের মানুষই অধিকার নিয়ে থাকবে। হিন্দু সম্প্রদায়কে জন্মাষ্টমীর আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এখানে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার বসবাস করার অধিকার আছে। সবাই অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। এটাই আমরা চাই। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব জন্মাষ্টমী উপলক্ষে গতকাল সোমবার গণভবনে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই দেশে সুপরিকল্পিতভাবে কিছু ঘটনা ঘটানো হয় সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য নিয়ে। কিন্তু যে দেশের মানুষ সবাই এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধে সবাই এক হয়ে লড়েছে, এখানে কেন এসব ঘটনা ঘটবে?
সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে এনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ছোঁয়া তো সব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পাচ্ছে। কেউ তো আর ভাগ করে নিচ্ছে না। ষড়যন্ত্র থাকবে। নানা কিছু থাকবে। তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব।
পুরোহিত-যাজকদের উপর সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে হিন্দু নেতাদের আশ্বস্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সব মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এক হয়ে বাস করবে, সহমর্মিতা থাকবে, সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।
সব ধর্ম ও বর্ণের নাগরিকদের সমঅধিকার নিয়ে বাস করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সকলের রক্ত মিশে আছে এই দেশের মাটিতে। আপনারা এই মাটির সন্তান। আপনারা আপনাদের অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন।
আগামী বৃহস্পতিবার পালিত হবে শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা। এটাই জন্মাষ্টমীর উৎসব। এই উৎসব শান্তিপূর্ণ হবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান মিলেমিলে বসবাসের ঐতিহ্য আছে এখানে। এটাই বাংলাদেশের শক্তি। এখানে সব ধর্মের মানুষ সব সময় সবার উৎসবে শামিল হয়েছে। এখানে দুর্গাপূজা, ঈদ, মহররম সবাই একসঙ্গে মিলে উৎযাপন করে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার- এটাই বাংলাদেশের চেতনা।
জঙ্গিবাদের কোনো ধর্ম বা দেশ নেই- মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কখনোই জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় দেব না। বিভিন্ন সময়ে হিন্দুদের উপর হামলার ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংঘাত সৃষ্টি করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে এই সব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেণ শিকদার, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ছিলেন। প্রতিনিধি দলে ছিলেন রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহাদেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিত, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমেশ ঘোষ, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল।
ধর্মের নামে জঙ্গি তৎপরতা নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, যারা এসব ঘটনা ঘটায় তাদের কোনো মানবতাবোধ নেই। তারা আসলে কোনো ধর্ম বিশ্বাস করে না। তাদের ধর্ম নাই, রাষ্ট্র নাই। জঙ্গিবাদই তাদের কাজ। সব ধর্মে সহনশীলতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, শান্তির কথা বলা আছে।
তিনি বলেন, ইসলামি শরিয়া আইন কায়েমের কথা বলে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়াসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে তৎপর অনেক জঙ্গি সংগঠন। মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি পশ্চিমা বিভিন্ন দেশেও তারা হামলা চালাচ্ছে। বাংলাদেশেও নব্বই দশকের শুরু থেকে কাজ করছে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। সাম্প্রতিককালে তাদের হামলা আরও জোরদার হয়েছে, আরও ভয়াবহ হয়েছে। কিছুদিন আগে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে গেলো। আমরা সবাইকে আহ্বান জানালাম, সবাই এক হলেন। ঐক্য গড়ে উঠলো-বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আর্টিজান হামলার পর জঙ্গিবিরোধী গণসচেতনতা তৈরির চেষ্টায় নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এসব বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। সবাই শান্তি চায়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশে আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠা করবো, এটাই বাংলাদেশের শক্তি।
জঙ্গিবাদ কেবল বাংলাদেশের নয়, বৈশ্বিক সমস্যা- এই কথাটাও মনে করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, বিশ্বব্যাপী নানা ঘটনা ঘটছে। আমেরিকায় মসজিদের ইমামকে হত্যা করা হয়েছে। কেবল এই একটা ঘটনা নয় অনেক বাঙালি সেখানে মারা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন করার পরামর্শ
শুভেচ্ছা বিনিময়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। আপনাদের দাবি দাওয়া করতে হয় না। আমরা এমনিতেই সবার কল্যাণে কাজ করি। যখন ইমামদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করেছি, তখন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টানদের জন্যও করে দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দুদের সম্পত্তি উত্তরাধিকারকে দিয়ে যেতে অনেক কর দিতে হতো। আমরা সেটা থেকে রেহাই দিয়েছি। এখন যে কেউ চাইলে সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারে।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন না থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী মারা গেছে স্ত্রী করুণ অবস্থায় পড়ে যায়। সন্তানরাও দুর্দশায় পড়ে। এটা তো হতে পারে না। এর কারণ উত্তরাধিকার আইন নাই। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে বাধা এসেছিল আর আমরা থেমে গিয়েছিলাম। এখন আপনারা যদি চান এই আইন হবে । এই আইনের খসড়া আপনারাই তৈরি করে দেন। আমরা পাস করে দেবো। আপনারা নিজেরা তৈরি করলে সেটা সবচেয়ে ভালো হবে।
রাধাকৃষ্ণের মূর্তি আমদানিতে কর মওকুফ চাইলে এনবিআরের কাছে আবেদন করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। থাইল্যান্ড থেকে ২০০ বৌদ্ধমূর্তি আনার জন্য আবেদন করার পর আমরা অনুমোদন দিয়েছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।