নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
গতপরশু রাতেও লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল খেলার সময় মোহাম্মদ আমিরের নামের পাশে ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের তকমা। রাত পার হয়ে পরেরদিন বিকেল গড়াতেই তার নামের পাশ থেকে উঠে গেল তা। কারণ ক্ষোভে-অভিমানে যে ক্রিকেটকে বিদায় বলে বসেছেন পাকিস্তানের এই পেসার। গতকাল দুপুরেই আমির জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিরতিতে যাচ্ছেন তিনি। ঘন্টা দুইয়েক পার না হতেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশের হয়ে আর কোনোদিন ক্রিকেট খেলবেন না বাঁহাতি এই পেসার। আমিরের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে পিসিবি আরও বলেছে, এটা তার ব্যক্তিগত মতামত।
এর আগে এক ভিডিও বার্তায় আমির বলেন, রীতিমতো মানসিকভাবে অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন তিনি। আর এটাই তাকে ক্রিকেট থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এমনকি অবসরেও চলে যাবেন তিনি। বর্তমান ম্যানেজমেন্টের অধীনে তিনি আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চান না। এই মানসিক চাপ নিয়ে তার পক্ষে ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। লঙ্কাদ্বীপ থেকে দেশে ফিরেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল আমিরের। কিন্তু এর আগেই পিসিবির প্রধাণ নির্বাহী ওয়াসিম খান তার সঙ্গে আলোচনা করেই জানিয়ে দেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
গেল বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর পরই ছোট সংস্করণের ক্রিকেটে মনোযোগী হতে টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছিলেন আমির। এখান থেকেই শুরু হয় সব কিছুর সূত্রপাত। অবসর নেয়ার নানা ধরণের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এমনকি রঙ্গিন পোশাকেও অনিয়মিত হয়ে পরেন আমির। জায়গা হয়নি নিউজিল্যান্ড সিরিজের স্কোয়াডেও। আমির সেই ভিডিও বার্তায়, বর্তমান পরিস্থিতিকে নিজের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ের মানসিক চাপের সঙ্গে তুলনা করেন। আমির বলেন, ‘আমার মনে হয়না এই টিম ম্যানেজমেন্টের অধীনে আমি খেলা চালিয়ে যেতে পারবো। এই সময়ে আমি ক্রিকেট ছাড়ছি কারণ। আমাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে। আমার মনে হয়না আমি এই ধরণের অত্যাচার আরো সহ্য করতে পারবো। কারণ ইতোমধ্যেই ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমাকে অনেক বেশি মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে।’
নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়ে ক্রিকেটে ফিরেছিলেন আমির। ২০১৫ মৌসুমে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সই তার জন্য জাতীয় দলের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলো। কিন্তু সেসময়ে দলের সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান নিজাম শেঠি ও সাবেক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদিকে তিনি তার পাশে পেয়েছিলেন জানান তিনি, ‘নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর আমি যখন কোথাও খেলার সুযোগ পাচ্ছিলাম না, বিপিএল আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছিলো। সেখানকার পারফর্ম্যান্স আমাকে জাতীয় দলে নিয়ে এসেছিলো। সেসময়েও দলের কেউ আমার সঙ্গে খেলতে চায়নি। কিন্তু সেসময় আমার পাশে শেঠি সাহেব ও আফ্রিদিকে পেয়েছিলাম। তাদের সমর্থন পেয়েই আমি দেশকে আবারো প্রতিনিধিত্ব করেছি।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি কোচ হিসেবে পেয়েছিলেন মিকি আর্থারকে। তিনি এই বোলারের উপরে পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন। তার সান্নিধ্যে নিজের পুরোনো বিধ্বংসী রূপে ফিরে গিয়েছিলেন। তৎকালীন কোচ আর্থার আমিরকে ঘিরেই সাজিয়েছিলেন তার বোলিং আক্রমণ। ২০১৬ এশিয়া কাপে ফাইনালে খেলতে ব্যর্থ হলেও দীর্ঘ সময় নিরাশ করেননি এই বোলার। ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ী দলের অন্যতম কুশীলব ছিলেন এই বাঁহাতি। চির প্রতিদ্বন্ধী ভারতকে হারিয়ে সকলকে অবাক করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশে ফিরেছিলো পাকিস্তান। যদিও ২০১৯ সালের পরে এই কোচের সঙ্গে চুক্তি নবায়ণ করেনি পিসিবি। এরপরেই দলে অনিয়মিত হয়ে পরেন আমির।
টেস্ট থেকে তার অবসরের সিদ্ধান্তকে ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে এই বোলারের মত। তার অভিযোগ, তাকে নিয়ে বিদ্রূপ করা হয়। আবার বলা হয় যে তিনি দেশকে ফাঁকি দিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলার জন্য অবসর নিয়েছেন। পিসিবি অনেক সময় বিনিয়োগ করেছে তার উপরে। কিন্তু লিগে বেশি সময় দিতে টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। অনেক সময় জানানো হয় যে তিনি দলের পরিকল্পনাতে নেই। এগুলো বিষয়ই তার ক্যারিয়ারকে অনিশ্চয়তায় ফেলছে বলে মনে করেন আমির। এগুলোকে সতর্কবার্তা ধরে সরে যাওয়ার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আমির আরও বলেন, ‘আমি একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কিন্তু সেটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাদের মতে আমি আমার দেশের হয়ে খেলতে চাই না। কিন্তু সেটি কে না চায়? আমার প্রত্যাবর্তন হয়েছিলো লিগে খেলে। আমি সেখানে খেলে নিজের বোলিং ধার বাড়িয়ে দেশের হয়ে আরো ভালো খেলতে চাই। বোলিং কোচ মাঝে মাঝে বলেন আমি আমার দেশকে ফাঁকি দিচ্ছি, কখনো সে আমার কর্মভার নিয়ে কথা বলেন। কখনো সে বলে আমি তার পরিকল্পনায় নেই। এটি আমার জন্য একটি সতর্কবার্তা, যে আমি তাদের পরিকল্পনায় নেই। একারণেই আমি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
পাকিস্তানের জার্সি গায়ে সব ফরম্যাট মিলিয়ে ১৪৭ ম্যাচ খেলে ২৫৯ উইকেট ঝুলিতে রয়েছে আমিরের। মাত্র ২৮ বছর বয়সী প্রতিভাবান এই বোলার অভিমান ঝেড়ে আবারো জাতীয় দলে দ্রুতই ফিরবেন বলে আশা সকলের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।