Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর জানাজায় লাখো মুসল্লির ঢল

টঙ্গীর তুরাগে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০১ এএম

শীতের সকালে একজন দেশবরেণ্য আলেমে দ্বীনকে শেষ বিদায় জানাতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ও আশপাশ এলাকায় লাখো মুসল্লির ঢল নেমেছিল। অশ্রুসিক্ত শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম, মাদরাসার ছাত্র শিক্ষক, ইমাম খতীবসহ সর্বস্তরের মুসল্লিরা আলেমে রব্বানি আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নামাজে জানাজায় অংশ নিতে দূরদুরন্ত থেকে ছুটে আসেন বায়তুল মোকাররমে। ওলামা-মাশায়েখ ও সর্বস্তরের মুসল্লিদের উপচে পড়া ভিড়ে করোনাকালীন চলমান স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে তার জানাজার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় গতকাল বায়তুল মোকাররমেই জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জায়গা না পেয়ে অনেকেই জানাজায় অংশ নিতে পারেননি।

হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ এর মহাসচিব, বেফাকুল মাদারিসের সিনিয়র সহসভাপতি ও হাইয়াতুল উলয়া বাংলাদেশ এর কো-চেয়ারম্যান আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর লাশ গতকাল সাড়ে ১১টায় টঙ্গীর তুরাগে ধউরস্থ তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার সংলগ্ন কবরাস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে সকাল ৯টা ১০ মিনিটে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর নামাজে জানাজায় লাখো মুসল্লির অংশ নেন। জানাজার নামাজে ইমামতি করেন মরহুমের ছোট ছাহেবজাদা মুফতি জাবের কাসেমী।

ফজরের নামাজ থেকেই রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে আগত মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে অবস্থান নিতে শুরু করেন। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যেই বায়তুল মোকাররম কানায় কানায় ভরে যায়। জাতীয় মসজিদে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মসজিদের উত্তর দক্ষিণ ও পূর্ব দিকের সকল রাস্তায় তিল ধরার ঠাঁই ছিল না। এসময়ে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, মতিঝিল শাপলা চত্বর, দৈনিক বাংলার মোড়, হাইকোর্র্ট মোড়, কাকরাইল মোড়, ফকিরাপুল মোড়, প্রেসক্লাব, পল্টন মোড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে নগরীতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়।

জায়গার অভাবে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে নির্মাণাধীন মেট্রোরেল এর বাউন্ডারির ভেতরেও হাজার হাজার মুসল্লি নামাজে জানাজায় অংশ নেন। মসজিদের আশপাশে জায়গা না পেয়ে পূর্ব দিকে দৈনিক বাংলার মোড়, হাউজ বিল্ডং এর পেছনে পুরানা পল্টনের অলিগলিতে আগত মুসল্লিরা জানাজার নামাজে দাঁড়িয়ে যান। পুরানা পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি পর্যন্ত মুসল্লিরা অবস্থান নেন। এ সময়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে মাইকে দফায় দফায় ঘোষণা দেয়া হয় জানাজার নামাজের ইমামের আগে দাঁড়ালে নামাজ হবে না এবং পূর্ব, উত্তর দক্ষিণ দিকে দাঁড়িয়ে নামাজে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানানো হয়। এক পর্যায়ে মসজিদের ওযুখানার পানি শেষ হয়ে যায়। মসজিদের মাইকে পানি সরবরাহের অনুরোধ জানানো হয়। আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত হয়ে গত রোববার দুপুর একটার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন।

জানাজার পূর্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব শাইখুল হাদীস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর পরিচালনায় মরহুম আল্লামা কাসেমীর স্মৃতিচারণ করে উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমির শায়খুল হাদীস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি, যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম, গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতীব ও হাইয়াতুল উলইয়ার চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস মাওলানা মাহমুদুল হাসান, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর প্রধান উপদেষ্টা আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা শায়খ জিয়া উদ্দীন, ভারত থেকে আগত দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরার সদস্য মুফতি শফিকুল ইসলাম কাসেমী, জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম হাফেজ মাওলানা নাজমুল হাসান, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী (রহ.)-এর ছোট ভাই মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ও বড় ছেলে মাওলানা জোবায়ের।

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী দ্বীনের জন্য সিপাহসালার ছিলেন। কোনো বাতেলের সাথে তিনি আপোষ করেননি। তিনি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সকল কাজ করেছেন। তাকে হারিয়ে আমাদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। যা’ বয়ান করে শেষ করা যাবে না। তিনি ছিলেন আদর্শ মানুষ গড়ার কারিগর। এসময়ে উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাওলানা মাহমুদুল হাসান বলেন, একের পর এক বুজুর্গরা চলে যাচ্ছেন। আল্লামা কাসেমী আমাদেরকে এতিম করে চলে গেছেন। তিনি আলেমে রব্বানি ছিলেন। আল্লাহ তার সমস্ত নেক আমলগুলো কবুল করুন। আল্লামা মুহিববুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, আমরা আজ এক মহান ব্যক্তিকে হারিয়েছি। সমস্ত বাতেলের বিরুদ্ধে আল্লামা কাসেমী ছিলেন আপোষহীন।

মরহুমের জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা নূরুল ইসলাম জিহাদী, বেফাকের সহসভাপতি সাবেক মন্ত্রী মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, সাবেক এমপি মুফতি শহিদুল ইসলাম, সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের মধুপুর পীর সাহেব মাওলানা আব্দুল হামিদ, নানুপুর পীর সাহেব মাওলানা সালাহ উদ্দিন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহ-সভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি জামে মসজিদের খতীব ও হাজীপাড়া মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল আউয়াল, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. ঈসা শাহেদী ও মহাসচিব অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, বাংলাদেশ ফরায়েজী আন্দোলনের সভাপতি ও বাহাদুরপুর পীর ফক্বীর আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের।

বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, যুগ্ম মহাসচিব ও বাতিল প্রতিরোধ পরিষদের সভাপতি হাজী জালাল উদ্দিন বকুল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার ও ঢাকা মহানগরী সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা আবু তাহের খান, হেফাজতে ইসলামের নেতা মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গোলাম মুহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইমাম মুসল্লি ঐক্য পরিষদের সেক্রেটারি হাফেজ মাওলানা হারুনুর রশিদ ও মুফতি রুহুল আমিন, মাসিক মদিনার নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা মঈনুদ্দিন, ইউরোপ জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা এখলাছুর রহমান, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, জাতীয় ইমাম সমাজের নির্বাহী সভাপতি মাওলানা বেলায়েত হোসেন আল ফিরোজী, নেজামে ইসলাম পার্টির (একাংশের) সভাপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ মজুমদার, আইম্মা পরিষদের সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দিন রব্বানী, মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া, হাফেজ মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, ড. মুফতি জহিরুল ইসলাম, ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, মাওলানা আবদুল বছীর, মাওলানা জিয়াউল হক কাসেমী, মাওলানা তাফাজ্জুল হক আজীজ, মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মুফতি মুনির হোছাইন কাসেমী, মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী ও মুফতি মাসুদুল করীম ।



 

Show all comments
  • Mohammad Mahfuzur Rahman Bhuiyan ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:২১ এএম says : 0
    হুযুর চিরশান্তিতে থাকুক, আল্লাহুম্মা আমীন
    Total Reply(0) Reply
  • আবদুল মান্নান ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:১৮ এএম says : 0
    আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করুক
    Total Reply(0) Reply
  • Shohel Rana ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৩ এএম says : 0
    আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসিব করুক
    Total Reply(0) Reply
  • SH Razzak ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৪ এএম says : 0
    আল্লাহ তিনাকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Aziz ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৫ এএম says : 0
    আল্লাহ আপনি আপনার এই বান্দাকে বেহেস্তের সর্বোচ্চ স্থান দিন আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Asad Sheikh ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ৩:৫৫ এএম says : 0
    Allah apne onaky jannate nashib koren..amin
    Total Reply(0) Reply
  • Jack Ali ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:১১ পিএম says : 0
    May Allah rewards him Jannatul Ferdous, InshaAllah. Ameen
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ