Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৯ জুলাই ২০২৪, ২৫ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

চোরাই কাঠে ফিশিং বোট

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৩ এএম

কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চোরাই মাদারট্রি গর্জন নিধনের মাধ্যমে কাঠ সংগ্রহ করে অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির হিড়িক পড়েছে। বনবিভাগের কোন অনুমতি ছাড়াই কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীরা মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন জায়গায় বীরদর্পে এসব অবৈধ ফিশিং বোট তৈরি করে চলেছেন। সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের লোকজন এসব দেখেও রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছেন।
জানা গেছে, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে বনাঞ্চলের মাদার ট্রি নিধন করে ফিশিং বোট তৈরির কাজ শুরু করেন কতিপয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী, কাটাখালী, সাইরাখালী, চুনতিরটেকসহ বিভিন্নস্থানে, সাহারবিলের চোয়ারফাড়ি, বাটাখালী সেতুর দক্ষিণে, বেতুয়া বাজার, কৈয়াবিল ইউনিয়নের ডিগক‚ল এবং বিএমচর ইউনিয়ন ও উপক‚লীয় বদরখালী সেতুর আশপাশ এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর তীরবর্তী এলাকায় ফিশিং বোট তৈরির হিড়িক পড়েছে। বর্তমানে সাহারবিলের চোয়ারফাড়ি এলাকায় একই স্থানে তৈরি হচ্ছে ১২টি ফিশিং বোট। মাতামুহুরী বাঁশ সমিতির নেতা মোহাম্মদ সেলিমের দুইটি, নুরুল হক মেম্বারের তিনটি, তরছঘাট এলাকার আনোয়ার হোসেনের দুইটি, সোসাইটি মাছের আড়তদার আক্কাস সওদাগরের দুইটি, কৈয়ারবিলের বাচ্ছু মিয়ার একটি, কাসেম মাঝির একটি, সাবেক কমিশনার সাইফুল্লাহ মানিকের একটি। পাশে রামপুর এলাকায় তৈরি হচ্ছে জাফর সওদাগরের দুইটি ও আবদুর রহিম মেম্বারের একটি ফিশিং বোট। একইভাবে কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ডিগকুল খোঁজাখালী এলাকায় তৈরি হচ্ছে ৬টি ফিশিং বোট। এনামুল হকের দুইটি, জসিম উদ্দিন প্রকাশ বুড়া জসিমের একটি, বেলাল উদ্দিনের একটি, ফইন্যা জলদাশের একটি, ছিকলঘাটার মিন্টুর একটি।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মিন্টুর ফিশিং বোটের সিংহভাগ গর্জনগাছ নলবিলা বনবিটের পাহাড় থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বিনিময়ে নলবিলা বনবিটের লোকজন আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন। উল্লেখিত দুইটি স্থানের মতো চকরিয়া উপজেলার উপক‚লীয় জনপদ বদরখালী সেতুর পাশেও অবৈধ ফিশিং বোট তৈরির হিড়িক পড়েছে। সেখানে বর্তমানে পাঁচটি ফিশিং বোট তৈরি হচ্ছে। এসব বোটের মালিক বদরখালীর সালাহউদ্দিন, মাওলানা আবু তালেব, আবুল কাশেম সিকদার, বাদশা মাঝি ও নজরুল ইসলাম। অপরদিকে, বাটাখালী সেতুর দক্ষিণে তৈরি হচ্ছে দুইটি। সবমিলিয়ে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্নস্থানে এবছর অন্তত ৩০টি ফিশিং বোট তৈরি হচ্ছে। বনবিভাগের অনুমোদন আছে ৯টির। বদরখালী ফিশিং বোট মালিক সমিতির সভাপতি আবু তালেব বলেন, নির্মিতব্য ফিশিং বোটগুলোর অনুমোদন আছে কি না আমার জানা নেই। তবে বোটগুলো হওয়াতে লোকাল গাছ দিয়ে তৈরি হচ্ছে। সেকারণে অনুমতির প্রয়োজন পড়েনা।
বোট মালিক আক্কাস সওদাগর বলেন, আমার দুইটি নয়, একটি বোট। সেটি তৈরি করতে বনবিভাগ থেকে অনুমতি নিয়েছি। ফিশিং বোট তৈরিতে বনবিভাগের চোরাই গর্জন গাছ ব্যবহার করা হচ্ছে এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে আক্কাস সওদাগর বলেন, চোঁয়ারফাড়িতে যেসব বোট তৈরি হচ্ছে, সব বোটের গাছগুলো বৈধভাবে (বনবিভাগের নিলাম থেকে) সংগ্রহ করা। এখানে অবৈধ কোন গাছ নেই।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, উপজেলার সাহারবিল পর্যন্ত আমার নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকা। এর বাইরের অন্যান্য ইউনিয়ন চকরিয়া সুন্দরবন রেঞ্জ দেখভাল করেন। সুতরাং সাহারবিল এলাকার বাইরে যদি কোথাও নতুন করে ফিশিং বোট তৈরি করেন সে ব্যাপারে ওই এলাকার কর্তব্যরত বনবিভাগের লোকজনই আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফিশিং-বোট

১৪ ডিসেম্বর, ২০২০
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ