Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সতীর্থদের কাঁধে রসির শেষ যাত্রা

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ ডিসেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ইতালিয়ানদের কাঁদিয়ে গত বৃহস্পতিবার ৬৪ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়েছেন পাওলো রসি। ১৯৮২ বিশ্বকাপের নায়কের শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয়ে গেছে গতপরশু। ইতালির উত্তর-প‚র্বাঞ্চলীয় শহর ভিচেনৎসার এক গির্জায় হয়েছে সর্বকালের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন বলে বিবেচিত রসির শেষকৃত্য। প্রিয় তারকাকে শেষ বিদায় জানাতে ইতালির শহর ভিসেনজায় এসময় জড়ো হয়েছিলেন হাজারো ভক্ত-সমর্থক। দেখা মিলল ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপজয়ী ইতালি দলের খেলোয়াড় মার্কো তারদেল্লি, আন্তোনিও কাবরিনি, জিয়ানকার্লো আন্তোনিওনি, আলেসান্দ্রো আলতোবেল্লি, ফ্রাঙ্কো কাউসো, ফুলভো চোল্লাভাতি ও জিউসেপ্পে বার্গোমি। ক্যাথেড্রাল পর্যন্ত তারাই কাঁধে করে বয়ে নিলেন প্রিয় সতীর্থ রসির কফিন। ইতালির রাই টেলিভিশন সরাসরি স¤প্রচার করেছে শেষকৃত্য অনুষ্ঠান।

বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি জুভেন্টাসের হয়ে দুটি সিরি ‘আ’, একটি করে ইউরোপিয়ান কাপ, কোপা ইতালিয়া ও উয়েফা সুপার কাপ জেতেন রসি। তবে ফুটবলে তিনি অমর হয়ে থাকবেন ১৯৮২ বিশ্বকাপে অভাবনীয় পারফরম্যান্সের জন্য।

স্পেনে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে রসির খেলারই কথা ছিল না। ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৮০ সালে তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাকে। তিনি অবশ্য বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অবিচারের শিকার হয়েছিলেন। সেই নিষেধাজ্ঞা পরে দুই বছরে কমিয়ে আনা হলে বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ মেলে তার।

ব্রাজিলের বিপক্ষে ৩-২ গোলের জয়ে রসির হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম কাব্যগাথা হয়ে রয়েছে। সেই ম্যাচে রসি প্রথম গোলটি করেছিলেন যার পাস থেকে, সেই কাবরিনি আবেগাপ্লুত প্রিয় সতীর্থের শেষ বিদায়ে, ‘আমি কেবল একজন সতীর্থকেই হারালাম না, হারিয়েছি একজন বন্ধু ও একজন ভাইকে। একসঙ্গে আমরা লড়েছি, জিতেছি আবারও মাঝে মধ্যে হেরেছিও... আমরা ছিলাম একটা দলের অংশ, দলটা আমাদের। কখনও ভাবিনি সে এত তাড়াতাড়ি চলে যাবে।’

১৯৮২ বিশ্বকাপে ৬ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছিলেন রসি। ইতালির জার্সিতে ৪৮ ম্যাচে ২০ গোল করা স্ট্রাইকার জুভেন্টাস ও এসি মিলানের মতো ক্লাবে খেলেছেন। তবে ১৯৭৫ সালে পেশাদার ক্যারিয়ারে প্রথম ম্যাচ খেলা রসি সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন ভিচেনৎসা ক্লাবের হয়ে। ১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে ভিচেনৎসাকে সিরি ‘বি’তে চ্যাম্পিয়ন করে সিরি ‘আ’ তুলে আনেন রসি। ওই মৌসুমে ৩৬ ম্যাচে ২১ গোল করে সিরি ‘বি’তে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন রসি। সিরি ‘আ’তে উঠেও গোলের ধারা শুকায়নি। পরের মৌসুমেই ইতালির শীর্ষ লিগে ৩০ ম্যাচে ২৪ গোল করে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। জুভেন্টাসের পেছনে থেকে রানার্সআপ হয়েছিল রসির ভিচেনৎসা। ইতালির ফুটবল ইতিহাসে রসির আগে টানা দুই মৌসুম সিরি ‘বি’ ও সিরি ‘আ’তে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারেননি অন্য কেউ। তাইতো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আগে রসির কফিন শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে নেওয়া হয় তার প্রিয় ভিচেনৎসার রোমেও মেন্তি স্টেডিয়ামে। সেখানে তার ভক্ত-সমর্থকরা তাকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়। গতপরশু রাতে ইতালির সব ফুটবল ম্যাচে কালো বাহুবন্ধনী পরেই মাঠে নেমেছিলেন ফুটবলাররা। ম্যাচ শুরুর আগে এক মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। আর স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় রসির ছবি দেখানো হয়, যেখানে লেখা ছিল ‘বীরেরা কখনো মরে না’ ও ‘বিদায় পাওলো’ কথাগুলো।

এই শোকের মাঝেও ঘটেছে দুঃখজনক এক ঘটনা। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব সবাই যখন শেষকৃত্য নিয়ে ব্যস্ত, সেই সময়ে চুরি হয়েছে রসির তুসকানি অঞ্চলের বাড়িতে। ইতালির সংবাদমাধ্যমগুলো আনসা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে, প্রয়াত রসির স্ত্রী ফেদেরিকা কাপেলেত্তি ভিচেনৎসা থেকে ফিরে দেখেন লন্ডভন্ড হয়ে আছে বাড়িঘর। চোরের দল রসির একটি দামি ঘড়ি ও কিছু টাকাসহ আরও অনেক কিছু নিয়ে গেছে। স্থানীয় পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রসি-যাত্রা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ