নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
আর্জেন্টিনা ফুটবলের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ডিয়েগো ম্যারাডোনা মারা গেছেন গত ২৫ নভেম্বর। এর ১৪ দিনের মাথায় গত পরশু মারা গেলেন আরেক আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার আলেহান্দ্রো সাবেয়া। গত পরশু তিনি ইহজগৎ ত্যাগ করেন। এ দু’জনের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বিশ্ব ফুটবলের আরেক কিংবদন্তি ইতালিয়ান তারকা পাওলো রসি। যিনি জেল থেকে ফিরেই ইতালির ১৯৮২ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক, সর্বকালের সেরা ফরোয়ার্ডদের একজন বলে খ্যাত ছিলেন। ৬৪ বছর বয়সে মারা গেলেন তিনি। মৃত্যুর আগে ইতালিয়ান টিভি চ্যানেল আরএআই স্পোর্ত-এ ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত ছিলেন রসি। পাওলো রসি’র মৃত্যু সংবাদ গতকাল নিশ্চিত করে আরএআই স্পোর্ত। পরে রসির স্ত্রী ফেদেরিকা কেপেলেতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে প্রয়াত স্বামীর সঙ্গে একটি ছবি দিয়ে ইতালিয়ান ভাষায় লিখেন, ‘বিদায় চিরতরে।’ আনুষ্ঠানিকভাবে রসির মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও আরএআই স্পোর্ত জানায় ‘অনারোগ্য রোগ’ কেড়ে নিয়েছে তাকে। ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি জুভেন্টাসের হয়ে দু’টি সিরি আ এবং একটি করে ইউরোপিয়ান কাপ, কোপা ইতালিয়া ও উয়েফা সুপার কাপ জয় করেন রসি। তবে ফুটবলে তিনি অমর হয়ে থাকবেন ১৯৮২ স্পেন বিশ্বকাপে অভাবনীয় পারফরম্যান্সের কারণে।
স্পেন বিশ্বকাপে পাওলো রসির খেলারই কথা ছিল না। কিন্ত কোচ এনজো বেয়ারজোত ঠিকই তাকে দলে রাখেন। ১৯৮০ সালে পেরুজিয়ায় থাকাকালীন সিরি আ-তে ১৩ গোল করেছিলেন রসি। জড়িয়ে পড়েছিলেন ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে ‘৮০ সালেই ৩ বছরের নিষিদ্ধের পাশাপাশি জেলও হয়েছিল তার। তিনি অবশ্য বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অবিচারের শিকার হয়েছিলেন। পুরো সময় জেলে কাটালে ‘৮২ বিশ্বকাপে খেলা হতো না রসির। বেয়ারজোতের হস্তক্ষেপে শাস্তি এক বছর কমানো হলে স্পেন বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ মেলে তার। বেয়ারজোত ’৭৮ বিশ্বকাপেও ইতালির কোচ ছিলেন। বিরাশিতেও তাকে দেওয়া হয় দায়িত্ব। ইতালিয়ান মিডিয়ার যা পছন্দ হয়নি। পছন্দ না হওয়ার কারণ তিনি জুভেন্টাস কেন্দ্রিক দল গড়েছিলেন বিশ্বকাপের জন্য। তার চেয়েও বড় কথা জেল থেকে মুক্ত করে রসিকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন। তবে কেউ বলেন আড়াল থেকে কলকাঠি নেড়েছিল ইতালিয়ান মাফিয়ারা। ঘটনা যাই হোক বেয়ারজোতের বিশ্বকাপ দলে ছিলেন রসি। যা দেখে ক্ষেপে যায় ইতালির মিডিয়া।
জেল থেকে বেরিয়ে বিশ্বকাপ শুরুর আগে মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেন রসি। তেমন কিছুই করতে পারেননি। গ্রুপ লিগের প্রথম তিন ম্যাচেও রসি গোল না পাওয়ায় আরও ক্ষুব্ধ হয় ইতালির মিডিয়া। উপায় না দেখে বেয়ারজোত ইতালিয়ান প্রেস বয়কট করেন। অধিনায়ক দিনো জফসহ দলের সবাইকে কাগজ পড়তে নিষেধও করেন। শিষ্যরাও তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিল।
গ্রæপ পর্বের তিন ম্যাচেই ড্র করে ইতালি। দুই গোল আর ৩ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় হয়ে ওঠে নকআউটে। তারপর মুখোমুখি হয় ব্রাজিলের। যারা ছিল ‘৮২ বিশ্বকাপের হট ফেভারিট। ব্রাজিল দলের মাঝমাঠে প্রতিভার প্রাচুর্য দেখে সবাই ধরেই নিয়েছিল বিশ্বকাপ তারাই জিতবে। জিকো-সক্রেটিস-ফ্যালকাও-সেরেজোরা তখন মাঠের ক্যানভাসে ফুল ফোটাচ্ছেন। তারা সামনে যাদের পেয়েছিলেন তাদেরই গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। গ্রুপ পর্বে ১৩ গোল করে নকআউটে ওঠে ব্রাজিল। তাদের সামনে পড়ে ইতালি। কিন্তু বার্সেলোনার সারি স্টেডিয়ামে ১৯৮২’র ৫ জুলাই জিকো-সক্রেটিস নয়, ইতিহাস লিখেছিলেন রসি। তখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে একটিও গোল না পাওয়া ইতালিয়ান স্ট্রাইকার রসি হ্যাটট্রিক করে অভিশাপমুক্ত হন। ড্র করলেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেরবে ব্রাজিল। কিন্তু রসি ম্যাজিকে ৩-২ হেরে বিশ্বকাপ থেকেই বিদায় নেয় তারা। রসি পরে বলেছিলেন, ‘ব্রাজিলের বিপক্ষে সেই ম্যাচটা ছিল আমার কাছে শতাব্দীসেরা। শেষ মুহূর্তে গোল করে বাঁধভাঙা আবেগে ভেসেছিলাম। দলটাও ছিল অসাধারণ। এখনো বলি ওটাই আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।’ অপ্রতিরোধ্য রসির দু’গোলে সেমিতে পোল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছিল ইতালি। আর ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে ইতালির ৩-১ ব্যবধানের জয়ে প্রথম গোল করেন সদ্য প্রয়াত পাওলো রসি’ই। জিতে নেন গোল্ডেন বুট ও বল। তার কৃতিত্বেই ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর ‘৮২ সালে প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় ইতালি। ওই বছর রসি জিতেন নেন ব্যালন ডি’অর এবং ওয়ার্ল্ড সকারের বর্ষসেরা ফুটবলারের সম্মানও।
জাতীয় দলের জার্সিতে তিনি শেষ ম্যাচ খেলেন ১৯৮৬ সালে। ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ারের পুরোটাই কাটিয়েছেন ইতালিতে। জুভেন্টাসের হয়ে শিরোপা জিতলেও তার সেরা গোল স্কোরিং ফর্স দেখা গেছে ভিসেনজায়। খেলেছেন এসি মিলানেও। অবসরের পর ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। কাল পাওলো রসির মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জার্মানির ১৯৯০ বিশ্বকাপজয়ী তারকা ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমান টুইটে লিখেন, ‘প্রিয় পাবলিতো, আমরা তোমাকে সবসময় মনে রাখব।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।