Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘বাংলার বাঘিনী’র সাফল্যে বেজে উঠল রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত

প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী : সেই ১৯৮৪ লস এঞ্জেলস অলিম্পিক থেকেই অংশগ্রহণেই তৃপ্ত বাংলাদেশ। রিও অলিম্পিকেও হয়নি তার ব্যতিক্রম। ওয়াইরড কার্ড নিয়ে অংশ নিয়েছেন যারা, বাছাইপর্বের বাধা পেরুতে পারেননি তাদের কেউ। ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ৫৬তম বলে সরাসরি অলিম্পিকের গলফ ইভেন্টে অংশ নিতে পেরেছিলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মার্চপাস্টে বহন করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাÑ সেই সিদ্দিকুর রহমানও করেছেন হতাশ। অথচ কি জানেন, এক বাংলাদেশী কন্যার সাফল্যে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের অল অ্যারাউন্ড ইভেন্টটি ছড়িয়েছে আকর্ষণ, টেলিভিশনের পর্দায় নিব্বিষ্ট রাখতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখ। বাংলাদেশ বংশোদ্ভুত মার্গারিতা (ডাক নাম রিতা) উজ্জ্বল্য ছড়িয়েছেন ফ্লোরে, পোডিয়ামে বড্ড সুন্দর লেগেছে তাকে। গতকাল রিও তে বাংলাদেশী কন্যা রিতার সাফল্যেই বেজে উঠেছে রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত! তাও আবার রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গেয়েছেন সেই সঙ্গীত রিতা! যে মেয়েটির কণ্ঠে বেজে ওঠার কথা বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত, সেই মেয়েটির কণ্ঠেই কি না বেজে উঠল রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত।
রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে ওয়ার্ল্ড নাম্বার ওয়ান র‌্যাংকিং নিয়ে রিওতে এসেছিলেন ২০ বছরের এই নারী জিমন্যাস্ট। ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে বল, ক্লাবস, রিবন, হুপ এবং টীম ইভেন্টে রিতার স্বর্ণপদকের সমষ্টি ছিল ২৮টি। তবে অল অ্যারাউন্ড ইভেন্টে বিশ্বমঞ্চে এবারই প্রথম সেরা’র কৃতিত্ব দেখালেন এই নারী রিদমিক জিমন্যাস্ট। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপে সর্বশেষ ২ আসরে (২০১৪,২০১৫) স্বর্ণ হাতছাড়া করার কষ্টটা একটু বেশিই তাঁতিয়ে দিয়েছিল তাকে। রাশান প্রতিদ্ব›দ্বী ইয়ানা কুর্দিয়াভাস্তিবা’র সঙ্গে লড়াইটা ছিল দীর্ঘদিনের। ইউরোপিয়ান এবং বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের সর্বশেষ ৩ আসরে রৌপ্য পদকে সন্তুষ্ট হতে পারেননি। গতকাল ইয়ানাকে হারিয়ে রিমিক জিমন্যাস্টিকসের অল অ্যারাউন্ড ইভেন্টে স্বর্ণ জয়ে প্রকারান্তরে সে জবাবটাই যে দিতে পেরেছেন এই বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত সুদর্শনা। ভাগ্যটাও অবশ্য ভাল, অল অ্যারাউন্ডের ৪টি ড্রিলের মধ্যে হুপ, বল এ ইয়ানা দেখিয়েছেন নিজের শ্রেষ্ঠত্ব, দেখিয়েছেন রিবনেও। তবে ক্লাবস ড্রিলের শেষ পর্যায়ে এসে করেছেন ভুল। তাতেই কপালটা খুলেছে রিতার। ওই ড্রিলেই গড়েছে ইয়ানার সঙ্গে ব্যবধান। যে ব্যবধানে শেষ পর্যন্ত মাগারিতা মামুনের স্কোর ৭৬.৪৮৩, সেখানে তিনটি ড্রিলে প্রথম হয়েও রৌপ্যজয়ী ইয়ানার স্কোর ৭৫.৬০৮! ক্লাবস ড্রিলে ১৯.০৫০ পয়েন্ট স্কোর করায় রিবন ইভেন্ট থেকে কোয়ালিফাইং স্কোর ১৯.০৫০ পয়েন্ট হলেই চলতো। সেখানে ১৯.২৩৩ পয়েন্ট স্কোর করেই দিয়েছেন রিতা শূন্যে লাফ!
অল অ্যরাউন্ড ইভেন্টে কোয়ালিফাইং রাউন্ডে ৭৪.৩৮৮ পয়েন্ট স্কোর করে ফাইনালে ফেভারিটের বার্তাটা দিয়েছিলেন রিতা। কোয়ালিফাইং রাউন্ডে তার এই সাফল্যবার্তা ছড়িয়ে পড়ায় রিতার পারফর্ম দেখতে, তার শুভ কামনায় রাত জেগেছে বাংলাদেশ ক্রীড়াপ্রেমীরা। প্রতিটি ড্রিলে সবার আগে পারফর্ম করেছেন রিতা, তার স্কোর আর যোগফলটা সাথে সাথেই মিলিয়ে নিতে হয়েছে বাংলাদেশ ক্রীড়াপ্রেমীদের।
রাজশাহীর ছেলে বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিতে মস্কো আসেন ১৯৮৩ সালে। সেখান থেকে হয়েছেন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন তা। সেখানেই পরিচয় থেকে পরিনয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন রাশান নারী আনার সঙ্গে। রাশান মা আনা সাবেক রিদমিক জিমন্যাস্ট বলেই মা’র অনুপ্রেরণায় এই খেলাটিকে বেছে নিয়েছেন সেই ১০ বছর বয়সে। বয়স যখন ১৫, তখন থেকেই রাশিয়ার মূল রিদমিক জিমন্যাস্ট দলের সদস্যা রিতা। ২০১১,২০১২ এবং ২০১৩Ñ উপর্যুপরি ৩ বছরে রাশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অল অ্যারাউন্ডে স্বর্ণ পদকটা ঝুলেছে তার গলায়। কিন্তু শেষ ২টি রাশান চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে।
২০১১ সালে কানাডার মন্ট্রিলে অনুষ্ঠিত রিদমিক জিমন্যাস্টিকসের বিশ্বকাপে বলস ইভেন্টে স্বর্ণ পদক জিতে আলোচনায় আসেন রিতা। পরের বছর সোফিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অল অ্যারাউন্ড ইভেন্ট থেকে জিতে নেন স্বর্ণ। ২০১৩ বার্লিন গ্র্যান্ড প্রিক্স, ২০১৪ ইনক্সবার্ক, ২০১৫ ব্রনো গ্র্যান্ড প্রিক্সে অল অ্যারাউন্ড ইভেন্ট স্বর্ণ জয় থেকে পেয়েছেন অলিম্পিকে রিদমিক জিমন্যাস্টিক্সের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট অল অ্যারাউন্ডে টনিক।
অথচ কি জানেন, বাংলাদেশের পতাকাতলে এই মেয়েটিকে নিয়েই ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে অংশ নেয়ার স্বপ্ন ছিল বাবা আবদুল্লাহ আল মামুনের। বেইজিং অলিম্পিক গেমসকে সামনে রেখে বাবা যোগাযোগ করেছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে (বিওএ)। রাশিয়ায় তার রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে পারফর্মের ভিডিও ক্লিপিংস পর্যন্ত জমা দিয়েছিলেন বিওএ কে বাবা আবদুল্লাহ আল মামুন। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত পাল্টে রাশিয়ার হয়েই রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে মেয়েকে তৈরি করার সিদ্ধান্ত স্থির করেন মামুন। এ তথ্যই দিয়েছেন বিওএ’র সাবেক মহাব্যবস্থাপক এবং পরিচালক কর্নেল (অব.) ওয়ালিউল্লাহ- ‘বাংলাদেশের হয়ে বেইজিং অলিম্পিকে মেয়ের অংশ নিক, রিতার বাবা এ ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন। সঙ্গে করে নিয়ে আসা ভিডিও দেখিয়ে আমাদেরকে মুগ্ধও করেছেন উনি। পদকের সম্ভাবনা আছে বলেই আমরাও খুব করে চাচ্ছিলাম, রিতা বাংলাদেশের হয়ে রিদমিক জিমন্যাস্টিকসে পারফর্ম করুক। কিন্তু বাংলাদেশের হয়ে অলিম্পিকে অংশ নিলে রাশিয়া জিমন্যাস্ট দল ছাড়তে হবে, সেখানকার ফ্যাসিলিটিজ পাবে না। যেহেতু রাশিয়া তাকে তৈরি করতে অনেক বিনিয়োগ করেছে এবং রাশিয়ার হয়ে ভবিষ্যতে অলিম্পিকে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা আছে, তা জেনে যাবার পর ওর বাবা মত পাল্টেছেন।’
আসলেই বড্ড অভাগা আমরা। অলিম্পিকের সর্বশেষ ৯ আসরের সব ক’টিতে অংশ নিয়ে এখনো কোন পদকের সন্ধান পায়নি বাংলাদেশ। নিকট ভবিষ্যতেও এমন অলৌকিক স্বপ্ন দেখছে না বাংলাদেশ। অথচ, বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মেয়ে রিতার সাফল্যেই কি না বেজে উঠল রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত! বাংলাদেশের রক্ত প্রবাহিত তার শিরা-উপশিরায়। পরিচয়টা বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত রাশান হলেও তাকে সবাই চেনে ‘বেঙ্গল টাইগার’ হিসেবে। বাংলার বাঘিনী রিতা’য় গর্বে বুকটা ফুলে যেতে পারে আমাদের সবার।



 

Show all comments
  • Rafique ২২ আগস্ট, ২০১৬, ৭:২৭ পিএম says : 1
    Why not Bangla deshi National song ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘বাংলার বাঘিনী’র সাফল্যে বেজে উঠল রাশিয়ার জাতীয় সঙ্গীত
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ