পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মার্কেটগুলোতে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযানে শুরু হওয়াতে তুলকালাম বেঁধে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে মার্কেটগুলো নিয়ন্ত্রণ করে যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, নকশাবহির্ভূত অবৈধ দোকান বানিয়ে বিক্রি করে টাকা পকেটে ভরেছেন, করপোরেশনের যেসব কর্তা ব্যক্তিরা এসব কাজের ইন্ধন দিয়েছেন তারা সবাই মহা চিন্তায় পড়েছেন ডিএসসিসি মেয়র ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপসের এ অভিযানের কারণে।
গত দুই দিন ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২ উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ শতাধিকের বেশি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মোট ২০০ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। মার্কেটের সামনের ৪ তলা ২টি বিল্ডিং, পেছনের সারির ১০৪টা দোকান, মার্কেটের ভেতরে ৪০টি দোকান। এর আগের দিন প্রায় সাড়ে তিনশত দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। মাকের্টে তিনটি ভবন রয়েছে। এগুলো এ, বি ও সি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। তবে দোকানিরা এ ব্লকের নাম দিয়েছেন সিটি প্লাজা, বি ব্লকের নগর প্লাজা এবং সি ব্লকের নাম দিয়েছে জাকের সুপার মার্কেট। এতে মোট ৯১১টি অবৈধ দোকান রয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ এ দোকানগুলো বৈধভাবেই চলছিল। দোকান মালিকরা টাকা দিয়ে দোকান কিনেছেন। অবৈধ বলে সিটি করপোরেশনের ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশ দোকান সিল গালা করেছেন। দোকান মালিক সমিতির নেতারা দোকানদের কাছ থেকে দোকান বৈধ করার কথা বলে টাকা তুলে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে দিয়েছেন। এরপর দোকানের সিলগালা খুলে দিলে আবার ব্যবসা শুরু করেছেন। দোকানিরা নিয়মিত সিটি করপোরেশনকে ভাড়াও দিয়েছেন। পুরো এ অবৈধ প্রক্রিয়ার মাঝে সিটি করপোরেশন ও দোকান মালিক সমিতির সকলেই জড়িত। তাই মেয়র তাপসের অভিযানে টেনশনে পড়েছেন সবাই। কাকে কখন মেয়র ধরবেন সে চিন্তায় ঘুম হারাম।
শুধু এই একটি মার্কেটই নয়, সিটি করপোরেশনের সবগুলো মার্কেটের একই দশা। দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে ফুলবাড়িয়া মার্কেট-২ মার্কেটটি ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও ২ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দেলুর একক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তার সাথে রয়েছেন মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দোকান মালিক বলেন, অবৈধ দোকান বৈধ করতে দোকানিদের কাছ থেকে মোট ২২ কোটি টাকা তুলেছিলেন দেলোয়ার হোসেন দেলু। সেই টাকা সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের কাছে দিয়েছেন তারা। আরেকজন দোকান মালিক ইনকিলাবকে বলেন, ২০১২ সালে প্রশাসকের সময় অবৈধ দোকান বেশি তৈরী হয়েছে। আর কার পার্কিং এ দোকান হয়েছে ১৯৯৬ সালে। অবৈধ দোকানে তালা মেরে টাকা আদায়ের এ থিউরি মেয়র সাঈদ খোকনকে দিয়েছিল ৩৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মেয়রের খুবই ঘনিষ্ট আতিকুর রহমান স্বপন। এরপর থেকে দোকানে তালা দিয়ে টাকা আদায় করেছে সিটি করপোরেশন। দোকানদাররা নিয়মিত ভাড়াও দিয়েছেন। সেই দোকান এখন ভেঙে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যারা এ অবৈধ কাজ করেছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, যারা এই ৯১১টি দোকান নির্মাণ করেছেন, তারা এখানে ব্যবসা করেন না। তারা অধিকাংশ দোকান কম দামে বিভিন্ন জনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। কেউ দোকান ভাড়ায় চালাচ্ছেন। এখন সিটি করপোরেশন দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
নগর প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, ১৯৯৬ সালে প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সময় পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান তৈরি করে তা অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর ২০১২ সালে প্রশাসকের আমলে লিফটের জায়গায়, মানুষের হাঁটার জায়গায়, সিঁড়িতে এবং বিপণিবিতানের সামনের ফুটপাতের দোকান অস্থায়ী বরাদ্দ দেয়া হয়। পার্কিংয়ের জায়গায় যারা দোকান পেয়েছেন, তাদের করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়। কিন্তু ফুটপাতসহ অন্য জায়গায় নকশাবহির্ভূত দোকানগুলোকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়নি। তবে এসব দোকান থেকে ভাড়া নেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, উচ্ছেদ না করে আপাতত তাদের এক মাস সময় দেওয়ার জন্য তারা মেয়রের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু মেয়র তাদের অনুরোধ রাখেননি। একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ দোকানিদের মার্কেটের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় (এই তিনতলায় সংস্কারকাজ চলমান) দোকান বরাদ্দের অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে মেয়র তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।
এদিকে সিটি করপোরেশনের প্রত্যেকটি মার্কেটের অবস্থা একই। বেজমেন্ট, কার পার্কিং, সিড়ি, টয়লেটের স্থানে দোকান বানিয়ে বিক্রি করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মার্কেটেই রয়েছে সিন্ডিকেট। মার্কেটগুলো দখল নিয়ে মারামারিও হয়েছে। বর্তমানে মার্কেট দখল নিয়ে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খদ্দের মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুল ইসলাম এবং ২০ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন রতনের মধ্যে উত্তেজনা চলছে।
এছাড়া রাজধানীর গুলিস্তানে অস্ত্রের মুখে পাঁচ মার্কেট দখলের অভিযোগ ছিল ২০ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সদ্য অব্যহতি পাওয়া সভাপতি শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে। গত ২৬ আগস্ট পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এর কাছে অভিযোগ দেয়া হয়। ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন প্রথমে জোর করে দখল করেন সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট। মার্কেট পরিচালনার মূল কমিটিকে বাদ দিয়ে নিজেকে সভাপতি ঘোষণা করেন। এরপর মার্কেটের ওপর অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ শুরু করেন। সেখানে ৬৫৭টি অবৈধ দোকান বিক্রি করে তিনি প্রায় ৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এরপর তিনি বঙ্গবাজার মার্কেট কমপ্লেক্স ক ও খ ইউনিট দখল করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, যারা অবৈধভাবে জায়গা দখল করে দোকান তুলেছে তারা কাকে টাকা দিয়েছে সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। যাদের অনুমোদন আছে তারাই এখানে ভালোভাবে ব্যবসা করবে। আমরা সেটি নিশ্চিত করব। পর্যায়ক্রমে আমরা সিটি করপোরেশনের সব মার্কেট থেকে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সব দোকান উচ্ছেদ করব।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।